রবিবার, ৭ মার্চ, ২০১০

সোলার ড্রায়ার স্বাস্থ্যকর শুঁটকির উৎস

shutki 1

পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য দেশে উৎপাদিত অধিকাংশ শুঁটকিতে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। কীটনাশকযুক্ত এসব শুঁটকি খেলে মানুষের কিডনী ও লিভারসহ নানা জটিল অসুখে আক্রান- হয়। শুঁটকি তৈরির জন্য অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত। ইউএনডিপির অর্থায়নে এফএও পরিচালিত 'উপকূলীয় মৎস্যজীবী সমপ্রদায়ের জীবিকার নিরাপত্তার জন্য ক্ষমতায়ন" প্রকল্পের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি তৈরির জন্য দেশের গরিব জেলে ও মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকারীদের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য দ্রব্যাদি ব্যবহার করে খুব কম খরচে উন্নত সোলার ড্রাইং পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
নকশার উন্নয়ন ঘটিয়ে সৌরসেল দিয়ে পাখা ঘুরিয়ে বাতাস প্রবাহের পরিবর্তে প্রাকৃতিক বায়ুপ্রবাহ সঞ্চালনের মাধ্যমে ড্রায়ারটিকে কার্যকরী করা হয়েছে। বিশেষ ডিজাইন ও ঢালের জন্য সূর্যালোক অধিক তারে প্রতিসরিত হওয়ায় ভেতরে তাপ বেড়েছে। আবার আকার ছোট ও দুইপ্রান- খোলা (মশারি জাল দিয়ে ঢেকে) রেখে বায়ুপ্রবাহের বিপরীতে স্থাপন করায় প্রাকৃতিক বায়ুপ্রবাহ স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলাচলের মাধ্যমে ড্রায়ারের আপেক্ষিক আদ্রর্তা ও তাপমাত্রা কার্যকরী সীমার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে। এ সব সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ফলে নতুন সোলার ড্রায়ারটি দিয়ে আগের অন্যান্য সোলার ড্রায়ারের অসুবিধাগুলো কাটিয়ে উঠে উন্নতমানের শুঁটকি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। স্বল্প ব্যয়সাপেক্ষ ও কার্যকরী বলে নতুন পদ্ধতিটি প্রকল্প এলাকার মাঠ পর্যায়ে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং ইতিমধ্যে ক্ষুদ্রমৎস্য প্রক্রিয়াজাতকারীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
ইসিএফসি প্রকল্পের পক্ষ থেকে স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য দ্রব্যাদি ব্যবহার করে অত্যন- কম খরচে উদ্ভাবিত সোলার ড্রায়ার মডেলটি ইতিমধ্যে কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চলের জেলে সমপ্রদায়ের মাঝে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। নতুন সোলার ড্রায়ারটি গাছের/কাঠের খুঁটির উপর ৩ ফুট উচ্চতায় ৪ ফুট চওড়া ও ২০ ফুট লম্বা একটি বাঁশের বিশেষ মাচার ওপর ৩.৫ ফুট চওড়া ও ২০ ফুট লম্বা (প্রস-াচ্ছেদে ত্রিকোণাকার) একটি টানেল স্থাপন করা হয়েছে। টানেলটির ভূমি-সনি্নহিত খাড়া বাহুটি ১.৬ ফুট উঁচু। অতিভূজটি ৭৫০ কোণ করে খাড়া বাহুর সঙ্গে এবং ২৪-২৫০ কোণ করে ভূমির সঙ্গে ১.২.৫ ঢালে যুক্ত রয়েছে।
টানেলসহ মাচাটি মাটির ওপর আলগা করে বসানো যাতে বাতাসের প্রবাহ অনুযায়ী ঘুরানো যায়।
শীতকালে টানেলটি উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বমুখী করে স্থাপন করলে দীর্ঘক্ষণ অধিক সূর্যালোক গ্রহণ করে বেশি তাপ তৈরি করা যাবে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক বায়ুপ্রবাহের বিপরীতে স্থাপিত হওয়ার ভেতরে বায়ু সঞ্চালনও বাড়বে। তাপ সৃষ্টির জন্য মাচার উপর ৪ ফুট বাই ৪ফুট আকৃতির একটি স্টিলের পাতা কালো রঙ করে টানেলের একপ্রান-ে স্থাপন করা হয়েছে। বাকি ১৬ ফুট জায়গা মাছ শুকানোর জন্য বাঁশের চাটাই দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। টানেলটির তলাসহ চারপাশ একপ্রস- মোটা পলিথিন শিট দিয়ে ঢাকা যাতে ভেতরের তাপ বের হতে না পারে এবং মাছি ও পোকামাকড় ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। তবে দুই প্রাপ্ত উন্মুক্ত রেখে মশারি জাল বেঁধে দেয়া হয়েছে যাতে একপ্রান- দিয়ে বাতাস ঢুকে ভেতরের গরম বাতাস অন্যপ্রান- দিয়ে বের করে নিতে পারে। মাচাসহ টানেলটি মাটির উপর আলগা করে বসানো থাকলেও দুই প্রান-ের খুঁটিগুলো অতিরিক্ত খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মাটিতে গেঁথে দেয়া হয়েছে যাতে ঝড়ে উপড়ে না পড়ে।
২০ ফুট লম্বা ও ৪ ফুট চওড়া এ রকম একটি সোলার ড্রায়ার তৈরি করতে খরচ হয় ২০০০ টাকা। একটি ড্রায়ারে একসঙ্গে ৫০ কেজি কাঁচা মাছ শুকানো যায়। এ রকম তিনটি ড্রায়ার একের পর এক বাতাসের প্রবাহমুখী রেখে একসঙ্গে ১৫০ কেজি মাছ শুকিয়ে ৩৭-৪০ কেজি শুঁটকি উৎপাদন করা সম্ভব। একবার তৈরি করলে ড্রায়ারগুলো তিনবছর টিকবে। শুঁটকি তৈরির সময়কাল মাছের আকার ও পুরুত্বের ওপর নির্ভরশীল। বড় আকারের রূপচান্দা ও দুরি ৩ দিনে এবং লইট্টা ২ দিনে শুকানো যায়।
কক্সবাজারের চকরিয়ার লক্ষ্মারচর জালিয়াপাড়া গ্রামের আশ্রাব আলী ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের দু'টি সোলার ড্রায়ার পাশাপাশি ব্যবহার করে প্রতি ৩ দিনে ৪০ কেজি উন্নতমানের কীটনাশকমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন করছেন। উৎপাদিত ৪০ কেজি শুঁটকি থেকে তার মুনাফা আসছে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। প্রতিমাসে কমপক্ষে চারটি উৎপাদন করে ৩২০০ থেকে ৪০০০ টাকা আয় করছেন।
_জাহেদুল আলম রুবেল,
কৃষিবিদ, ঢাকা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন