রবিবার, ৭ মার্চ, ২০১০

যেভাবে বাড়াতে পারেন আমের ফলন

mango2

আম একটি জনপ্রিয় ফল। স্বাদ, গন্ধ, পুষ্টিমানে আমাদের দেশের সবার কাছে ফলটির খুবই সমাদর রয়েছে। এজন্য আমকে বলা হয় ফলের রাজা। দেশের সব জেলাগুলোতেই আমের কম বেশি ফলন লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু ফলটি চাষাবাদে চাষিকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। আমাদের চারপাশের আমের বাগান বা বাড়ির আঙিনার গাছটির দিকে তাকালে বুঝতে পারি আমের মৌসুম শুরম্ন হয়ে গেছে। আম গাছগুলোতে মুকুল ও কিছু কিছু এলাকার আমের গুটিও এসে গেছে। এই সময় গাছের সঠিক পরিচর্যা ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা না নিলে ফলন হ্রাস পেতে পারে।
আমের মৌসুমে আম চাষিদের করণীয় বিষয় নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ শরফ উদ্দিন (রাজন) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আম চাষাবাদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার কথা। এরমধ্যে বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ উলেস্নখযোগ্য।
হপার বা ফুতকি পোকা : আম বাগানে মুকুল বা পুষ্পমঞ্জুরী বের হওয়ার আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ দিন পূর্বে সাইপারমেথ্রিন অথবা কার্বারিল গ্রম্নপের যেকোন কীটনাশক দিয়ে ভালভাবে সমসত্ম গাছ ধুয়ে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে গাছে বসবাসকারী হপার বা শোষক পোকাসহ অন্যান্য পোকার আক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়া যাবে। হপার পোকা অন্ধকার বা বেশি ছায়াযুক্ত স্থান পছন্দ করে, তাই নিয়মিত গাছের ডালপালা কাটতে হবে যাতে গাছের মধ্যে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে। আমের মুকুল যখন ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার হবে তখন একবার এবং আম যখন মটর দানাকৃতি হবে তখন আর একবার প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার হারে সাইপারমেথ্রিন (রিপকর্ড/সিমবুস/ফেনম/এরিভো/ অন্যান্য) ১০ ইসি অথবা ডেসিস ২.৫ ইসি মিশিয়ে সম্পূর্ণ গাছ সপ্রে করতে হবে। আমের হপার পোকার কারণে যেহেতু সুটিমোল্ড বা ঝুল রোগের আক্রমণ ঘটে তাই রোগ দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক হপার পোকা দমনের জন্য ব্যবহার্য কীটনাশকের সাথে মিশিয়ে সপ্রে করতে হবে।
পাউডারি মিলডিউ : পাউডারি মিলডিউ আমের একটি মারাত্মক রোগ। আমাদের দেশে এ রোগের আক্রমণ প্রত্যেক বছর দেখা যায় না। তবে কোন কোন বছর অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করলে রোগটি মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। পাউডারি মিলডিউ রোগের আক্রমণ প্রধানত আমের মুকুল ও কচি আমে দেখা যায়। প্রথমে আমের মুকুলের শীর্ষ প্রানত্মে সাদা বা ধূসর বর্ণের পাউডারের আবরণ দেখা যায়। কচি পাতাতেও রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই পাউডার হচ্ছে ছত্রাক ও তার বীজকণার সমষ্টি। হালকা বৃষ্টি, মেঘলা বা কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ এ রোগের জীবাণুর ব্যাপক উৎপাদনের সহায়তা করে।
মুকুল আসার সময় প্রতিদিন (বিশেষত মেঘলা আবহাওয়াযুক্ত দিনগুলিতে) আমগাছ পর্যবেক্ষণ করতে হবে মুকুলে পাউডারি মিলডিউ রোগ দেখা দিয়েছে কিনা। রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই সালফার বা গন্ধকযুক্ত যে কোন ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ভালভাবে সপ্র্রে করতে হবে।
ফলের মাছি পোকা : মাছি পোকা পাকা আমের জন্য বেশ ক্ষতিকর। আম পাকার মৌসুমে স্ত্রীমাছি পরিপক্ক আমের গায়ে ডিম পাড়ে। ১ থেকে ৩ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে সাদা কীড়া বের হয়। এ অবস্থায় পাকা আম নরম হয়ে গেলে ম্যাগোট আম থেকে বের হয়ে মাটির গর্তে ঢুকে যায় এবং ৬ দিন পর এটি পুত্তলিতে পরিণত হয়। পুত্তলিতে পরিণত হওয়ার ৬দিন পর এটি পূর্ণাঙ্গ মাছি পোকায় রূপানত্মরিত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় মাছি পোকার আক্রমণ বুঝা যায় না । ভালভাবে লক্ষ্য করলে আক্রানত্ম আমের গায়ে ডিম পাড়ার স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষত চিহ্ন দেখা যায়। ক্ষত স্থানটি কিছুটা বিবর্ণ হয়ে যায়। আক্রানত্ম আম পাকা শুরম্ন হলে এ আক্রানত্ম স্থান থেকে রস ঝরতে দেখা যায়। পাকা আম কাটলে আক্রানত্ম আমের শাঁসের ভেতর সাদা সাদা পোকার কীড়া দেখা যায়। এ পোকায় আক্রানত্ম আম অনেক সময় বিকৃত হয়ে যায় বা পচে যায়।
এৰেত্রে প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমের রসের সাথে এক গ্রাম ডিপটেরেক্স মিশিয়ে বিষটোপ বানিয়ে এ বিষ টোপ বাগানে রেখে মাছি পোকা দমন করা যেতে পারে। আম পাকার মৌসুমে আম বাগানে বিস্নচিং পাউডার (প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম) সপ্রে করে মাছি তাড়ানো যেতে পারে। আম পাকার মৌসুমে প্রতিটি আম কাগজ (ব্রাউন পেপার) দ্বারা মুড়িয়ে দিলে আমকে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যাবে। আম বাগানে ফেরোমন ট্রাপ (মিথাইল ইউজেনল) ব্যবহার করা যেতে পারে। এর ফলে প্রচুর পরিমাণে পুরম্নষ পোকা ধ্বংস করা যায়।
কৃষিবিদ গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
ফল গবেষণা কেন্দ্র, রাজশাহী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন