রবিবার, ৭ মার্চ, ২০১০

জৈব পদ্ধতিতে পোকামাকড় দমন

রাসায়নিক বালাইনাশক ও কীটনাশক সব সময়ই ক্ষতিকর। এর বিষক্রিয়া শুধু ক্ষতিকর পোকা ও বালাইকে ধ্বংস করে না; ধ্বংস করে বেশকিছু উপকারী পোকাও। কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় মানুষের দেহে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। অথচ কিছু প্রাকৃতিক দ্রব্য ব্যবহার করে কোন পাশর্্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া আমরা রোগ ও ক্ষতিকর পোকার হাত থেকে রক্ষা করতে পারি আমাদের ক্ষেতের ফসল। এতে খরচ যেমন কম হয় তেমনি সাশ্রয় হয় অর্থেরও।
গাছ সুস্থ রাখতে কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শস্য পর্যায় এবং সম্পূরক ফসলের মিশ্রণের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়। ক্ষতিকর পোকা দমন করতে পেঁয়াজ, রসুন, পুঁদিনা ইত্যাদির গাছ জমির চারপাশে আবাদ করতে হবে। এতে ক্ষতিকর ফসলের পোকা পেঁয়াজ, রসুন, পুঁদিনা গাছে জমা হয় যা হাতে বা হাতজাল দিয়ে সংগ্রহ করে মেরে ফেলা যায়। তা ছাড়া গাছের রোগাক্রান- অংশ পুড়িয়ে ফেলেও রোগ অনেকাংশে দমন করা সম্ভব।
কাঠ পোড়া ছাই : রান্নার পর চুলার ছাই পোকা দমনে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। যেসব পোকা বুকে ভর করে চলাচল করে তাদের ছাই দিয়ে দমন করা যায়। মূলা, পেঁয়াজ, বাঁধাকপি ও সরিষার মূলে যেসব শুককীট থাকে তা দমনে ছাই খুবই কার্যকর। এ ছাড়া কুমড়ার গোবর পোকা দমন করতে সমপরিমাণ ছাই ও গুঁড়ো করা চুন সাবান পানিতে মিশিয়ে ছিটানো যায়।
ভেষজ উদ্ভিদ : টমেটো গাছের পাতা ও কাণ্ড ক্ষতিকর পোকা দমনে বেশ কার্যকর। এর পাতা ও কাণ্ড সিদ্ধ করার পর পানি ঠাণ্ডা করে ফসলে সপ্রে করলে লেদা, কালো সবুজ মাছি সফলভাবে দমন করা যায়। নিমপাতা উদ্ভিদজাতনাশকের মধ্যে বেশি কার্যকর। বীজ সংরক্ষণ ও আলু গুদামজাত করতে শুকনো নিমপাতা ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া ১ কেজি নিমপাতা ৮ কেজি পানিতে ২০ মিনিট সিদ্ধ করে প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। এতে প্রায় সব ধরনের পোকাই দমন হয়। ল্যানটানা গাছের ডাল পুরোপুরি শুকিয়ে নিয়ে ছাই করে প্রয়োগ করলে গোবর পোকা ও পাতা ছিদ্রকারী পোকা দমন হয়। তামাক গাছ এবং তার ডাটা পানিতে ৪দিন ভিজিয়ে রেখে সপ্রে করলে সুফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া তামাক পাতার সঙ্গে রসুন, পেঁয়াজ এবং পুঁদিনা এক সাথে গুঁড়ো করে এ সবের মিশ্রণ ১:৫০ থেকে ১:১০ অনুপাতে পানির সঙ্গে মিশিয়ে সপ্রে করতে হবে। এতে সব ধরনের ক্ষতিকর পোকা দমন করা সম্ভব। তাছাড়া পেঁয়াজ, রসুন, সরিষা ও মরিচ গাছ একসাথে টুকরো টুকরো করে কেটে পানিতে মিশিয়ে এক সপ্তাহ পচিয়ে তা আক্রান- গাছে প্রয়োগ করলেও সুফল পাওয়া যায়।
দশ শতাংশ ধানের জমিতে ধানের পামরি পোকা দমনের জন্য এক কেজি নিম বীজ দেড় লিটার পানিতে ভিজিয়ে রেখে নির্যাস তৈরি করা যায়। নির্যাস পাতলা ঘনত্বে প্রয়োগ করা উত্তম। দশ কেজি বীজ থেকে তৈরি ১৫ লিটার তরল নিম বীজ নির্যাস আরো ৯০ লিটার পানি যোগ করে এক একর জমিতে সহজে ছিটানো যায়। নির্যাস সপ্রে মেশিনের সাহায্যে পাতায় উভয় প্রান-ে প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
আতা ও শরিফা গাছের বিভিন্ন অংশ কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। গাছের পাতা, বীজ ও অপরিপক্ক শুকনো ফলের মিহি গুঁড়ো কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ধানের বাদামি গাছ ফড়িং, ঘাস ফড়িং, সবুজ গান্ধি পোকা, সবুজ পাতা শোষক পোকা ও সাদা পিঠ পাতা শোষক পোকা, আলুর জাপ পোকা, শাক-সবজির জাব পোকা, শসা-কুমড়ার লাল পোকা ও বাঁধাকপির ডায়মন্ড ব্যাকমথ এসব পোকা দমনে এ ফল গাছের অংশসমূহ ব্যবহার করা হয়। কীটনাশক আমাদের মাটির উর্বরাশক্তি কেড়ে নিয়ে জমিকে করে তুলছে অনাবাদি। তাই আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দরকার পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা গ্রহণ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন