শনিবার, ৬ মার্চ, ২০১০

ফুল ফসল অর্কিড

চাষাবাদে বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি এখন ফুল অনেক এলাকায় লাভজনক ফসলে পরিণত হয়েছে। ফুল চাষে অর্কিড লাভজনক। ছায়া আছে, কিছুটা স্যাঁতসেঁতে জমি অর্কিড চাষের উপযুক্ত। সাধারণত একই জমিতে অনেক দিন এই ফুলের চাষ করা যায়। প্রখর সূর্যের আলোয় অর্কিড ভালো হয় না।
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষের জন্য জমিতে শেডনেট দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করতে হবে যেন ৪০ থেকে ৬০ ভাগ সূর্যের আলো প্রবেশ করতে পারে। বড় গাছের নিচে টবেও চাষ করা যায়।
ফুল কাটার পর প্রতিটি গাছ থেকে পার্শ্বীয়ভাবে সাকার বের হয়। এ সাকারগুলো গাছে লাগানো অবস্থায় শিকড় বের হয়, তখনই গাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মূল জমিতে লাগানো যেতে পারে। এ ছাড়া কেটে ফেলা ফুল স্টিকের (দণ্ড) ফুল শেষ হয়ে গেলে তা থেকেও চারা উৎপাদন করা যেতে পারে।
সাকার বা টিস্যু কালচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত চারা লাগাতে হবে। পচা গোবর বা কম্পোস্ট সার, নারকেলের ছোবড়া, ধানের তুষ ও বেলে দো-আঁশ মাটির সমপরিমাণ মিশ্রণের মাধ্যমে বেড তৈরি করতে হবে। সাকার লাগানোর সময় সারি থেকে সারি ৩০ থেকে ৪০ সেন্টিমিটার এবং গাছ থেকে গাছ ২৫ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখতে হবে। সাকার লাগানোর সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন শিকড়গুলো পুরোপুরি মাটির নিচে থাকে।
অর্কিড চাষে ইউরিয়া, টিএসপি ও এমপি ২০:২০:২০ মিশ্র সার অধিক উপযোগী। সার পানিতে গুলিয়ে সপ্তাহে এক বা দুদিন গাছে স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করার সময় লক্ষ রাখতে হবে, গাছের পাতাগুলো যেন ভালোভাবে ভিজে যায়। অর্কিডের বীজ, কাণ্ড ও কচিপাতা থেকে বংশ বাড়ানো যায়। বর্তমানে অর্কিড কালচারের জন্য বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি ফরমুলেশন পাওয়া যায়। এসব ফরমুলেশন ব্যবহার করে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের জৈবপ্রযুক্তি বিভাগ কচিপাতার কালচার করে বিভিন্ন ধরনের অর্কিডের বংশ বাড়ানোর কৌশল উদ্ভাবন করেছে, যা প্রচলিত পদ্ধতিতে করা সম্ভব নয়।
এ পদ্ধতিতে প্রথমে অর্কিডের কচিপাতা সংগ্রহ করা হয়। পাতাগুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। জীবাণুমুক্ত করার জন্য ৩০ সেকেন্ড ইথানলে ডুবিয়ে রাখতে হয় এবং পরে ১ ভাগ সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড দ্রবণে দুই থেকে পাঁচ ফোঁটা টুইন-২০ সহযোগে পাঁচ মিনিট ডুবিয়ে রাখতে হয়।
জীবাণুমুক্ত পরিশ্রুত পানি দিয়ে তিন থেকে চারবার ধুয়ে নিতে হবে। এ কাজগুলো জীবাণুমুক্ত পরিবেশে করতে হয়। পরে পাতা বর্গাকারে কেটে কালচার মিডিয়ায় রাখতে হয়। প্রায় ৩০ দিনের মধ্যে কেলাস এবং কেলাস থেকে ৪০-৪৫ দিনের মধ্যে ভ্রূণে রূপান্তরিত হয়। ভ্রূণগুলো হয় চারা। এভাবে একটি পাতা থেকে অসংখ্য চারা উৎপাদন করা সম্ভব। হেক্টরপ্রতি প্রথম বছর আট হাজার ফুল, দ্বিতীয় বছর ১৫ হাজার এবং তৃতীয় বছর ২৫ হাজার ফুল উৎপাদন হয়।
এ ছাড়া প্রতিবছর প্রতিটি গাছ থেকে দুই থেকে পাঁচটি সাকারও সংগ্রহ করা যায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন