শুক্রবার, ৫ মার্চ, ২০১০

থাই কৈ : প্রজনন ও চাষ_২

থাই কৈ এর ব্রম্নড ব্যবস্থাপনা : প্রথমে পুকুরের তলা ভাল করে শুকিয়ে নিতে হবে। পুকুরের তলা যদি শুকানো সম্ভব না হয় তাহলে জাল টেনে বা রটেনন প্রয়োগ করে সমসত্ম অবাঞ্ছিত মাছ মেরে এক সপ্তাহ পর প্রতি শতাংশে ১ কেজিহারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। তারপর পুকুর পাড়ের চারপাশ দিয়ে মাটির ১ ফুট গভীর দিয়ে পলিথিন জাতীয় (যা মাটির নীচেও নষ্ট হয় না) জাল দিয়ে ভালভাবে বেড়া দিতে হবে। তারপর পুকুরে পানি দিতে হবে। পুকুরের পানির গভীরতা ৩ থেকে ৪ ফুট এবং অপেক্ষাকৃত কম কাঁদাযুক্ত পুকুর হলে ভাল হয়। পুকুরের দ্রম্নত বর্ধনশীল সুস্থ ও সবল মাছ প্রজননের জন্য মজুদ করতে হবে। যতদূর সম্ভব বেশি সংখ্যক মাছ থেকে কম সংখ্যক ব্রম্নড নির্বাচন করাই উত্তম এবং নির্বাচিত মাছকে অবশ্যই ভালভাবে যত্ন করতে হবে। ব্রম্নড প্রতিপালনের সাধারণত ১৫ থেকে ২০ শতাংশের পুকুর হলে ভাল। প্রতি শতাংশে ১০০ থেকে ১৫০ টি ব্রম্নড মাছ মজুত করা ভাল। খাবার হিসাবে বাজারের কৈ মাছের যে কোন ব্রান্ডের গ্রোয়ার খাবার খাওয়ালেই চলবে। দেহের ওজনের ৩% খাবারই যথেষ্ট। এর চেয়ে বেশি খাবার দিলে কৈ মাছের দেহে বেশি চর্বি হয়ে যেতে পারে। শীতকালে ব্রম্নড মাছের বিশেষ পরিচর্যা করতে হবে।

প্রজনন : চাষাবাদের জন্য ফেব্রম্নয়ারির মাঝামাঝি থেকে জুলাই মাস পর্যনত্ম কৈ মাছের প্রজননের জন্য উপযুক্ত সময়। এ ছাড়াও কৈ মাছ যে কেউ ইচ্ছা করলে প্রায় সারা বছরই প্রজনন করাতে পারে। সঠিক পরিচর্যা করলে প্রায় সারা বছরই পেটভর্তি ডিম থাকে যা দেখে স্ত্রী কৈ মাছ সনাক্ত করা যায়। এ ছাড়াও স্ত্রী কৈ মাছ পুরম্নষ কৈ মাছের তুলনায় অনেক বেশি বড় হয়ে থাকে। পুরম্নষ কৈ মাছকে সনাক্তের জন্য প্রজনন মৌসুমে পেটে হালকা চাপ দিলেই সাদা রঙের শুক্রাণু বের হয়ে আসে।

প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী ও পুরম্নষ মাছকে ১টি ইনঞ্জেকশন দিলেই চলে। ইনঞ্জেকশন দিতে হবে পি.জি. দিয়ে। স্ত্রী মাছের জন্য মাত্রা হবে ৬ থেকে ৮ মিঃ গ্রাঃ/কেজি, আর প্রতি কেজি পুরম্নষ মাছের জন্য পি.জি. দিতে হবে ২ থেকে ৩ মিঃ গ্রাঃ। ইনঞ্জেকশন দিতে হবে মুখের কাছে পাখনার নীচে ফুলার অংশে। পি. জি. দেয়ার পর স্ত্রী ও পুরম্নষ মাছকে সমান অনুপাতে অর্থাৎ ১ : ১ অনুপাতে প্রজনন ট্যাংকে রেখে তারপর পানির স্রোতসহ ঝর্ণার ব্যবস্থা করতে হবে। ইনঞ্জেকশন দেয়ার ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পর মাছ ডিম দিতে শুরম্ন করবে। ডিম ছাড়ার পর ডিমগুলোকে হ্যাচিং ট্যাংকে নিয়ে যেতে হবে। কৈ মাছের ডিমগুলো ভেসে থাকে। সে জন্য ডিমগুলোকে বিশেষ কায়দায় হ্যাচিং ট্যাংকে নিয়ে যেতে হবে। কৈ মাছের ডিম ভাসমান বিধায় আমি এক বিশেষ পদ্ধতিতে ডিম সংগ্রহের কথা উলেস্নখ করছি যা আমাদের দেশে প্রথম। ডিম সংগ্রহের সময় সর্তকতার অভাবে অনেক ডিম নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে প্রজনন ট্যাংক থেকে হ্যাচিং ট্যাংক পর্যনত্ম ৩ থেকে ৪টি সিরিজ ট্যাংক পাশাপাশি রাখতে হবে। প্রজনন ট্যাংক থেকে প্রতিটি ট্যাংকের বর্হিগমন নালা ২ ইঞ্চি নীচু হতে হবে। তাতে ডিমগুলো আপনা আপনি প্রজনন ট্যাংক থেকে হ্যাচিং ট্যাংকে এসে জমা হবে। নিষিক্ত ডিম এরেটরের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবরাহ ও পানি চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। তাপমাত্রা ভেদে ১৮/২০ ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হবে। এরপর ২ থেকে ৩ দিন হ্যাচিং ট্যাংকে রাখার পর রেনু পোনাকে সিদ্ধ ডিমের কুসুম ভাল করে বেস্নন্ডার করে তারপর ছেঁকে খাবার হিসাবে দিতে হবে। এভাবে ক'দিন খাওয়ানোর পর নার্সারি পুকুরে স্থানানত্মর করতে হবে। (চলবে)

_এ. কে. এম নূরম্নল হক

ব্রহ্মপুত্র ফিস সিড কমপেস্নক্স (হ্যাচারি) ময়মনসিংহ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন