রবিবার, ৭ মার্চ, ২০১০

পামচাষ বাড়ছে রাজবাড়িতে

pam 1

পাম অয়েল একটি বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ। রোপণের তিন থেকে চার বছরের মধ্যেই এই উদ্ভিদে ফলন শুরম্ন হয়। ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যনত্ম ফলন দেয়। পাম অয়েল গাছ চাষ করে প্রতিবছর হেক্টরপ্রতি আমাদের দেশে সর্বোচ্চ ১০ টন ভোজ্য তেল পাওয়া যায়। মালয়েশিয়ায় একটি কাঁদি থেকে ২০ থেকে ৩০ কেজি পাম ফল পাওয়া যায় আর আমাদের সংগৃহীত প্রতিটি কাঁদি থেকে ৭০ থেকে ৮০ কেজি ফল পাওয়া যায়। বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত যে কোন ভোজ্য তেলের ফসল থেকে প্রাপ্ত তেল অপেক্ষা ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি।
পাহাড়ি, চরাঞ্চল এবং সমতল ভূমি ও বাড়ির উঠোনেও পাম অয়েল গাছ চাষ করা যায়। এই গাছ বন্যার পানিতে মরে না। পাম অয়েল গাছ চাষ করতে তেমন রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না। বীজ হতে চারা উৎপাদন করতে প্রায় এক বছর সময় লাগে। চারা থেকে ফল পেতে সময় লাগে তিন হতে চার বছর। পাম ফল থেকে পাম অয়েল আহরণের সময় যে পুষ্টি সমৃদ্ধ পুনঃ ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য পাওয়া যায় তাই পাম অয়েল বাগানে সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রাসায়নিক সার কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস করার জন্য পাম অয়েল উদ্ভিদ বালাই নিয়ন্ত্রণের কাজে জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। শিল্পের গবেষণা ও উন্নয়ন উদ্ভূদ দু'টি ধারণা যথা শূন্য বর্জ্য ও শূন্য দহন এখন ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। শূন্য বর্জ্যের প্রতি অঙ্গীকারের ফলশ্রম্নতিতে পাম অয়েল গাছের পাতা, গুঁড়ি, ফলের শূন্য কাঁদি ব্যবহার করে নতুন নতুন দ্রব্য উৎপন্ন করা হচ্ছে। শূন্য দহন ধারণার কার্যকর প্রয়োগ হচ্ছে পুরানো পাম গাছগুলোরকে না পুড়িয়ে খ- খ- করে চাষের জমিতে পচিয়ে মিশিয়ে দেয়া যায় ফলে দূষণ পরিহার করা সম্ভব হচ্ছে ও উদ্ভিদের পুষ্টি পদার্থ মাটিতে ফিরিয়ে দেয়। পাতা জমিতে সার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। পাম গাছের ১ টন শুকনো পাতা মাটিতে ৭.৫ কেজি নাইট্রোজেন, ১.০৬ কেজি ফসফরাস, ৯.৮১ কেজি পটাশিয়াম ও ২.৭৯ কেজি ম্যাগনেসিয়াম ফিরিয়ে দেয়। গুঁড়ি থেকে চমৎকার আসবাবপত্র তৈরি করা সম্ভব। আমাদের দেশে সাধারণত ঘরোয়াভাবে পানিতে পাকা পাম ফল সিদ্ধ করে হাত দিয়ে চিপন দিলে রস বের করে তেল তৈরি করে। সেই রসে পানি মেশানো হয়। এরপর পানি মেশানো তেল জ্বাল দিলে পানি বাষ্প হয়ে তেল থেকে যায়।
পাম-অয়েল পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ বহুমুখী ব্যবহৃত একটি তেল। অন্যান্য তেলের চেয়ে এ তেলটি কোলেস্টেরলমুক্ত, সহজপাচ্য ও শরীরের শক্তি
যোগানদার হিসেবে কাজ করে থাকে। পাম অয়েলে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং উচ্চ তাপমাত্রায় এর চমৎকার স্থায়িত্ব থাকায় ডিপ ফাইয়ের কাজে অত্যনত্ম উপযোগী।
আমাদের দেশের মাটি পাম চাষের জন্য অনুকূল। যে কোন জেলাতে পাম চাষ করা সম্ভব। দেশের বিভিন্ন জেলাতে সরকারিভাবে গ্রহণ করা হয়েছে পামচাষের কার্যক্রম। তার মধ্যে রাজবাড়ী জেলা অন্যতম। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর উদ্যোগে ব্যাপকভাবে পাম চাষ শুরম্ন হয়েছে। সমপ্রতি রাজবাড়ী এলজিইডি অফিস চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে পাম গাছের চারা রোপণের মধ্য দিয়ে নতুন বছরের
সমপ্রসারণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কুদ্দুস ম-ল। এলজিইডির রম্নরাল এমপ্লয়মেন্ট এন্ড রোড মেইনটেনেন্স প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে জেলা সদরের দাদশী ইউপি'র শ্রীপুর বাজার থেকে বেড়াডাঙ্গা ১ নং সড়ক, পাংশা উপজেলার মাঝবাড়ী ইউপির চাঁদপুর ব্রিজ হতে খামারবাড়ি সড়ক, বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউপির আড়কান্দি সড়ক এবং গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউপির বেড়ীবাঁধ হতে হারেজ মিয়ার পাড়া রাসত্মায় চারশ' পাম অয়েল চারা রোপণ করা হয়েছে। এ বছর গ্রামীণ সড়কের পাশে নতুন করে আরো দুশ' পাম চারা রোপণের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও শোভা বর্ধন এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি ভোজ্য তেলের চাহিদাও অনেকখানি পূরণ হবে।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছে, জেলার ৪টি উপজেলায় ইতিমধ্যে রোপণকৃত চারশ' পাম অয়েল গাছ থেকে বছরে ১৬ হাজার কেজি পাম তেল উৎপাদিত হবে। গ্রামীণ সড়কের পাশে রোপণকৃত এসব গাছ তদারকির জন্য এলজিইডির তত্ত্বাবধানে দৈনিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে মহিলা শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে। প্রকল্পের অধীন ৫ বছরের চুক্তিতে প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ জন করে জেলার ৪২টি ইউনিয়নে ৪২০ জন নারী শ্রমিককে এ কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এদের দৈনিক পারিশ্রমিক থেকে সঞ্চিত অর্থ সংগ্রহ করে মেয়াদানত্মে প্রত্যেককে ৭৫ হাজার টাকা প্রদান করা হবে। এর ফলে কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি দারিদ্র বিমোচনে উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন