শুক্রবার, ১২ মার্চ, ২০১০

পেয়ারার ডাল বাঁকালেই ফলন দশগুণ! ফল ধরবে বারো মাস!

image_103_39321

ডাল বাঁকালেই ফলন দশগুণ। তা ছাড়া একই প্রযুক্তিতে বছরের বারো মাসই ফল ধরানো সম্ভব। ফলের মৌসুমে গাছের ফুল ছিঁড়ে দিয়ে এ প্রক্রিয়াকে আরো প্রভাবিত করা যায়, যার ফলে সারা বছরই ফলের মৌসুমের তুলনায়্র আট থেকে দশগুণ বেশি ফল ধরবে গাছে। পেয়ারা গাছের ক্ষেত্রে দীর্ঘ ২৭ মাস গবেষণার পর সম্পূর্ণ নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সম্পর্কে এই তথ্য দিলেন বাউকুল উদ্ভাবক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ রহিম।
উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সম্পর্কে ড. রহিম কালের কণ্ঠকে বলেন, সাধারণত বর্ষা ও শীত_এই দুই ঋতুতে গাছে পেয়ারা হয়। তবে শীত অপেক্ষা বর্ষাকালে ফলন একটু বেশি হয়। বর্ষাকালে জলীয় ভাব বেশি থাকায় ফলের মিষ্টতা ও অন্য গুণাগুণ শীতকালের ফলের থেকে অনেকাংশেই কম থাকে। তা ছাড়া জলীয় ভাব বেশি থাকায় পাকা ফল তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, ফলে দাম থাকে কম। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সব জাতের পেয়ারার গুণাগুণ শীতকালে বেড়ে যায়, রোগ ও পোকার আক্রমণও কম থাকে। ফলের আকৃতি এবং রং সব দিক থেকেই সুন্দর হওয়ায় এই সময়ে পেয়ারার দামও থাকে বেশি। এসব দিক বিবেচনায় রেখেই বর্ষাকাল বাদে কিভাবে অন্যান্য ঋতুতে অত্যধিক হারে উৎপাদন বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে গবেষণা শুরু হয়। এ লক্ষ্যে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নিবিড় গবেষণার মাধ্যমে 'গাছের ডাল বাঁকানো' পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে প্রতিটি গাছ থেকে সাধারণের তুলনায় আট থেকে দশগুণ বেশি পেয়ারা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া পেয়ারার মৌসুমে গাছের ফুল ও ফল ছিঁড়ে দিয়ে এ প্রক্রিয়াকে আরো প্রভাবিত করা যায় বলে জানান তিনি।
এ প্রযুক্তির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জার্মপ্লাজম সেন্টারের প্রধান গবেষণা সহযোগী কৃষিবিদ শামসুল আলম মিঠু কালের কণ্ঠকে বলেন, বছরে দুবার অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে (এপ্রিল-জুন) এবং হেমন্তকালে (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর) শাখা-প্রশাখার নিয়ন্ত্রিত বিন্যাসের মাধ্যমে সারা বছর পেয়ারার ফুল ও ফল ধারণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। গাছের বয়স দেড় থেকে দুই বছর হলেই এই পদ্ধতি শুরু করা যাবে এবং পাঁচ থেকে ছয় বছর পর্যন্ত এই পদ্ধতিতে ফলন বাড়ানো সম্ভব। ডাল বাঁকানোর ১০-১৫ দিন আগে গাছের গোড়ায় সার ও পানি দেওয়া হয়। ডাল বাঁকানোর সময় প্রতিটি শাখার অগ্রভাগের এক থেকে দেড় ফুট অঞ্চলের পাতা ও ফুল-ফল রেখে বাকি অংশ ছেঁটে দেওয়া হয়। এরপর ডালগুলোকে সুতা দিয়ে বেঁধে তা বাঁকিয়ে মাটির কাছাকাছি কাণ্ডের সঙ্গে অথবা খুঁটির মাধ্যমে মাটিতে বেঁধে দেওয়া হয়। গ্রীষ্মকালে মাত্র ১০ থেকে ১২ দিন পরই নতুন ডাল গজানো শুরু হয়। নতুন ডাল এক সেন্টিমিটার লম্বা হলে বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। আর হেমন্তকালে নতুন ডাল গজাতে ২০ থেকে ২৫ দিন লাগে।
শামসুল আলম আরো বলেন, ডাল বাঁকানোর ৪৫ থেকে ৬০ দিন পরে ফুল ধরা শুরু হয়। এভাবে গজানো প্রায় প্রতি পাতার কোলেই ফুল আসে। তবে এ সময় টানা বৃষ্টি বা আর্দ্র আবহাওয়া ফলন বৃদ্ধিতে ক্ষতিকারক। এ পদ্ধতিতে সারা বছরই অত্যধিক হারে ফলন পাওয়া যায়। তা ছাড়া ফলের মিষ্টতা বেশি এবং রং ও আকৃতি সুন্দর হওয়ায় পেয়ারার বাজারদরও বেশি পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে ড. রহিম বলেন, এখন পর্যন্ত শুধু পেয়ারা গাছের ক্ষেত্রেই এ গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। তবে অন্য ফলের ক্ষেত্রেও গবেষণা চলছে। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে গ্রীষ্মকালে গাছপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ কেজি এবং হেমন্তকালে গাছপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ কেজি পেয়ারার ফলন পাওয়া গেছে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় আট থেকে দশগুণ বেশি। তিনি বলেন, কৃষকরা সহজেই এই পদ্ধতিতে পেয়ারা চাষ করে উৎপাদন বাড়াতে পারবেন, যা বাউকুলের মতো পেয়ারাকেও মানুষের কাছে সহজলভ্য করে তুলবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন