শনিবার, ২০ মার্চ, ২০১০

হিটস্ট্রোক এড়ানোর উপায়

প্রচণ্ড গরম পড়েছে সারা দেশে। প্রায় সব খামারেই হিটস্ট্রোকে মারা যাচ্ছে মোরগ-মুরগি। গরমের সময় মোরগ-মুরগি চারপাশের তাপের কারণে তার দেহ থেকে তাপ বের করতে পারে না বলে শ্বাসকষ্ট হয় এবং হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। একসময় এই মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায় বলে মোরগ-মুরগি হিটস্ট্রোকে মারা যায়।
লক্ষ রাখতে হবে ফিড : এ সময় মুরগির ফিড গ্রহণের পরিমাণ কমে যায়। সেই কারণে দিনের নির্দিষ্ট বেশি গরমের সময় ব্রিডার লেয়ারের ক্ষেত্রে ফিড না দেওয়াই ভালো। শুধু পানি খাবে। দিনের ঠাণ্ডা সময় যেমন ভোর ও সন্ধ্যার পর ফিড দিতে হবে।
এ সময় খামারে দেওয়া ফিডে বিশেষ লক্ষ রাখতে হবে, ফিডে যেন পুষ্টিমান সঠিক এবং বেশি থাকে। যেমন_স্বাভাবিক ১০০ গ্রাম ফিডের পুষ্টি ৯০ গ্রাম ফিডে থাকতে হবে। সে কারণে ফিডে ব্যবহার করা প্রোটিনের ক্ষেত্রে অতি উচ্চমানের প্রোটিন ব্যবহার করতে হবে। লক্ষ রাখতে হবে, এই প্রোটিনে প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড মিথুনিন, লাইসিন ঘাটতি আছে কি না? যদি ঘাটতি থাকে তাহলে বাড়তি অ্যামাইনো এসিড মেশাতে হবে।
খামারে রেডি ফিড (পিলেট ফিড) ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফিডে অ্যামাইনো এসিড মেশানোর উপায় থাকে না। সে ক্ষেত্রে পানির মাধ্যমে তরল মিথুনিন যেমন রেডিমেড এটি-৮৮ পানিতে খাওয়াতে হবে। প্রতি লিটার পানিতে এক থেকে দুই মিলিলিটার দিতে হবে। এ ছাড়া অন্যান্য অ্যামাইনো এসিডের ঘাটতি পূরণের জন্য অ্যামাইনো লাইটস এবং অ্যামাইনো এসিড ও শক্তি সরবরাহের জন্য অ্যামাইনো-১৮ পানির সঙ্গে খাওয়াতে হবে।
হিটস্ট্রোক প্রতিরোধ : গরমের সময় রক্ত চলাচল দ্রুততর হওয়ার জন্য হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায় ও কোনো কোনো সময় রক্ত জমাট হতে পারে। এই রক্ত জমাট হওয়াটাই হিটস্ট্রোক। এতে মুরগি মারা যেতে পারে। এ সময় এসপিরিন ও ভিটামিন-সিযুক্ত কোনো মিশ্রণ যেমন এন্টি স্ট্রেস প্রিমিক্স দিনের উষ্ণতম সময় যেমন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পানির মাধ্যমে খাওয়ালে হিটস্ট্রোকের পরিমাণ অনেক কমে যায়। এ ছাড়া ফিডেও ভিটামিন-সিযুক্ত প্রিমিক্স ব্যবহার করা যেতে পারে।
গরমের বাড়তি যত্ন : গরমে পোলট্রি খামারে বিশেষ যত্ন না নিলে ফ্লকে বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এখনকার তাপজনিত ধকলে মুরগির দৈহিক ওজন কমে যাওয়াসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ডিম উৎপাদন কমে যায় এবং মোরগ-মুরগির মৃত্যুও হতে পারে। এ সময় বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে।
খামারে এক দিনের বাচ্চা আসার আগে পরিষ্কার ও ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে পানির সঙ্গে ভিটামিন সি, আখের গুড় অথবা ইলেকট্রোলাইটযুক্ত স্যালাইন পানির সঙ্গে দিতে হবে।
খামার শেডে বাতাসের অবাধ চলাচলের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। মুক্ত বাতাস শেড অভ্যন্তরের তাপমাত্রা শীতল রাখবে, সেই সঙ্গে অ্যামোনিয়াসহ অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাসের বিষক্রিয়াও মুক্ত রাখবে। শেডে সিলিং ফ্যানের পাশাপাশি এগজস্ট ফ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে।
শেডে মোরগ-মুরগি যেন আরামদায়ক পরিবেশে বাস করতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। অহেতুক এদের বিরক্ত করা যাবে না। প্রতিটি বড় মুরগিকে এক বর্গফুটের অধিক জায়গা দিতে হবে।
অধিক রোদে টিনের চালা অতিরিক্ত গরম হলে দিনে দুই-একবার চালায় পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। টিনের চালার নিচে চাটাই, হার্ডবোর্ড দিয়ে শিলিংয়ের (চাতাল) ব্যবস্থা করতে হবে।
শেডের চারপাশে সপ্তাহে দুবার চুন ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ব্রয়লার লিটার ভোর কিংবা রাতে ওলটপালট করে দিতে হবে।
খাবার পাত্র ও পানির পাত্রসংখ্যা বাড়িয়ে দিতে হবে। পানির পাত্রে দিনে কমপক্ষে তিনবার পরিষ্কার ঠাণ্ডা পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
গরমের ধকলের কারণে মাইকোপ্লাজমা ও কলিব্যাসিলোসিস রোগের আক্রমণ বেড়ে যায়। সে কারণে এ সময় মুরগির স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে চলা প্রয়োজন। বিশেষ করে ফিড ও পানিতে ভিটামিন-সি ও ভিটামিন-ই ব্যবহার করতে হবে।
গরমকালে বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় শেডের মেঝেয় অনেক সময় লিটার দ্রুত ভিজে যায়। যার ফলে রোগ আক্রমণও বেশি হয়। সে কারণে লিটারে পাউডার চুন ব্যবহার করতে হবে। এ সময় ফিডের বস্তা খোলা রাখা যাবে না। কারণ বাতাসের আর্দ্রতা বেড়ে ফিডে ছত্রাক বা মোল্ড জন্মায়, যা পোলট্রি খাদ্যের উপযুক্ত নয়।

বৃহস্পতিবার, ১৮ মার্চ, ২০১০

থাই কৈ : প্রজনন ও চাষ_৪

ভাল ব্যবস্থাপনা নিলে ছোট বড় সব ধরনের পুকুরে কৈ মাছের চাষ করা যায়। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বর্গাকার পুকুরের চেয়ে আয়তাকার পুকুরে কৈ চাষের ফলন বেশি হয়। ২ ধাপে এই মাছের চাষ করা যায়।
একটি পুকুর ব্যবহার করে বা সরাসরি এবং দু'টি পুকুর ব্যবহার করে বা নার্সিং করে।
একটি পুকুর ব্যবহার পদ্ধতি : একটি পুকুর ব্যবহার করে বা সরাসরি প্রায় এক ইঞ্চি সাইজের কৈ মাছের পোনা ছাড়লে ওই পুকুরের ২য় পদ্ধতির চেয়ে কমপক্ষে ১০ দিন আগে বাজারজাত করা যায়। এ ক্ষেত্রে পোনার মজুদ থেকে ২০% পোনা বাদ দিয়ে পোনা মজুদ ধরতে হবে। যেমন সরাসরি একটি পুকুরে ৫০ হাজার পোনা ছাড়ার পর ওই পুকুরের মজুদ ধরতে হবে ৪০ হাজার।
২য় পুকুর ব্যবহার পদ্ধতি : ২য় পুকুর ব্যবহার করেও এই মাছের চাষ করা যায়। সে ক্ষেত্রে প্রথমে একটি ছোট পুকুরে প্রায় এক ইঞ্চি সাইজের কৈ মাছের পোনা ছেড়ে নার্সিং করতে হবে প্রায় ২০ দিন। এক্ষেত্রে প্রতি শতাংশে প্রায় ২ হাজার পোনা মজুদ করা যাবে। প্রায় ২০ দিন নার্সিং করার পর ২য় পুকুরে স্থনানত্মর করতে হবে। কৈ মাছের পোনা স্থানানত্মর করার সময় কিছু বিশেষ দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যেমন মেঘলা আকাশে কৈ মাছের পোনা স্থনানত্মর করা উচিৎ হবে না। রৌদ্রজ্জ্বল আকাশে বেলা ১১ টার দিকে কৈ মাছের পোনা স্থানানত্মর করতে হবে। আবার বেলা ১২ টার পর স্থনানত্মর করা ঠিক হবে না। ১১টার আগে পোনা স্থানানত্মর করলে কিছু বোঝার আগেই পোনা হঠাৎ করে মারা যেতে পারে। আবার বেলা ১২ টার পরে পোনা স্থানানত্মর করলে অতিরিক্ত রোদের তাপে কৈ মাছের পোনা সহজেই রোগে আক্রানত্ম হতে পারে।
পুকুর নির্বাচন : সাধারণত দো-অাঁশ, এটেল দো-অাঁশ এমনকি বেলে দো-অাঁশ মাটির পুকুর এবং যে সমসত্ম পুকুরে বন্যার পানি ওঠে না, পানির ধারণ ক্ষমতা বেশি সেই সমসত্ম পুকুরে কৈ মাছ চাষের উপযোগী। আয়তাকার পুকুরের আয়তন ৬০ থেকে ৮০ শতাংশের হলে ভাল। পানি পরিবর্তনের সুবিধা থাকতে হবে। পুকুরের গভীরতা ৪ থেকে ৫ ফুট হলে ভাল। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে ৩ থেকে ৪ ফুট গভীরতার পুকুরেও এ মাছ চাষ করা যায়। সেক্ষেত্রে মাছের মজুদ ঘনত্ব একটু কম দিতে হবে।
পুকুর তৈরি : নতুন ও পুরাতন উভয় ধরনের পুকুরে কৈ মাছ চাষ করা যায়। নতুন পুকুরের তলায় শতাংশ প্রতি ১০ কেজি গোবর ছিটিয়ে তারপর হালকা চাষ দিতে হবে। তারপর অল্প একটু পানি দিয়ে ভাল করে মই দিতে হবে। পুরাতন পুকুর হলে প্রথমেই পুকুরের পানি সেচ দিয়ে শুকিয়ে ফেলতে হবে। তারপর সঁ্যাতসঁ্যাতে থাকা অবস্থায় শতাংশ প্রতি এক কেজি চুন পানির সাথে গুলে ছিটিয়ে দিয়ে ভাল করে মই দিতে হবে। এ সময় পুকুর শুকাতে দিতে হবে। পুকুরের তলার মাটি শুকিয়ে চৌচির হয়ে গেলে পুকুর চাষ করার উপযোগী হয়ে উঠবে। এ ছাড়া সারাবছর পানি থাকে এমন পুকুরেও কৈ মাছের চাষ করা যাবে। এক্ষেত্রে পুকুরে বিষটোপ বা রটেনন পাউডার দিয়ে অবাঞ্চিত বা রাক্ষুসে মাছ নিধন করতে হবে। তারপর শতাংশপ্রতি ১কেজি চুন পানির সাথে মিশিয়ে সমসত্ম পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। সারাবছর অতিরিক্ত কাদা-পানি থাকে এমন পুকুরে কৈ মাছের চাষ না করাই ভাল। উলেস্নখিত পদ্ধতি অনুসরণ করে পুকুর তৈরির কাজ শেষ করতে হবে। এরপর পুকুরের পাড়ের উপর দিয়ে জাল দিয়ে ঘের দিতে হবে যাতে পুকুরের ভেতর সাপ, ব্যাঙ ঢুকতে পারে না। এ ছাড়াও মার্চ এপ্রিলে কৈ মাছ মজুদ করলে পুকুর থেকে মাছ উঠে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। মে মাস বা তারপরে কৈ মাছ মজুদ করলে পরবতর্ী ফেব্রম্নয়ারি পর্যনত্ম পুকুর থেকে উঠে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে না। উলেস্নখিত পদ্ধতি অনুসরণের পর পুকুরে ২ ফুট পানি দিয়ে পোনা মজুদ করতে হবে।
মজুদ ঘনত্ব : প্রতি শতাংশে ৫০০ থেকে এক হাজারটি কৈ মাছ মজুদ করা যায়। যদিও কয়েক বছর আগে মজুদ ঘনত্ব শতাংশে ৩০০ দিয়ে শুরম্ন হয়েছিল। পানি পরিবর্তনের সুযোগের উপর মজুদ ঘনত্ব নির্ভরশীল। পানি পরিবর্তনের সুযোগ যত বেশি থাকবে কৈ মাছের মজুদ তত বেশি দেয়া যাবে। তবে মাছের মজুদ ঘনত্ব শতাংশে হাজারের বেশি দেয়া ঠিক নয়। (চলবে)
এ. কে এম. নূরম্নল হক
ব্রহ্মপুত্র ফিস সীড কমপেস্নক্স (হ্যাসারি)
চরপুলিয়ামারী, শম্ভুগঞ্জ, ময়মনসিংহ

হাইড্রোপনিক পদ্ধতি মাটিবিহীন চাষাবাদ

195881_1

গাছ আছে, ফল আছে, ফুল আছে আপনার প্রিয় আঙিনায়; কিন্তু গাছের নীচে মাটি নেই। ভাবছেন এটা আবার হয় নাকি! হয়। আপনার আঙিনায় মাটি ছাড়াই জন্মাবে প্রিয় ফসল, ফুল, সবজি। মাটির পরিবর্তে পানিতেই জন্মাতে পারবেন টমেটো, লেটুস, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, ক্ষিরা, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি, এ্যানথরিয়াম, গাঁদা, গোলাপ, অর্কিড, চন্দ্রমলিস্নকা আরো অনেক ফসল। মাটিবিহীন পানিতে ফসল উৎপাদনের এই কৌশলকে বলে হাইড্রোপনিক যা একটি অত্যাধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সারাবছরই সবজি ও ফল উৎপাদন করা সম্ভব। এই চাষাবাদে কোনো কীটনাশক বা আগাছানাশক কিংবা অতিরিক্ত সার দেয়ার প্রয়োজন হবে না। তাই অনায়াসে গড়ে তুলতে পারবেন অর্গানিক ফসলের সম্ভার। সমপ্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) -এর বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তিতে চাষাবাদ শুরম্ন করেছেন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊধর্্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ.কে. এম. সেলিক রেজা মলিস্নক ১৯৯৭ সালে জাপানে হাইড্রোপনিক প্রযুক্তির উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এই প্রযুক্তি প্রথম বাংলাদেশে নিয়ে আসেন ২০০৬ সালে। ২০০৭ সালে তিনি বাংলাদেশের জলবায়ুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হাইড্রোপনিক প্রযুক্তির গবেষণা শুরম্ন করেন টমেটো, ক্যাপসিকাম, লেটুস ও স্ট্রবেরি এই ৪টি ফসল নিয়ে। এ গবেষণায় সাফল্যের পর ২০০৮ সালে এর সাথে ক্ষিরা, শসা, গাঁদা ফুল ও বেগুন এবং ২০০৯ সালে বামন সিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকোলি, চন্দ্রমলিস্নকা যোগ করেন। বিজ্ঞানী মলিস্নক এ গবেষণায় ব্যাপকভাবে সাফল্য পান।
তিনি জানান, লাভজনক ফসলের ক্ষেত্রে এ হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাটির পরিবর্তে পানিতে গাছের প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করে ফসল উৎপাদন করা হয়। জনবহুল দেশে যেখানে স্বাভাবিক চাষের জমি কম কিংবা নেই সেখানে ঘরের ছাদে বা আঙিনায়, পলি টানেল, নেট হাউজে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সবজি ও ফল উৎপাদন সম্ভব। উন্নত বিশ্বের যেমন : ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, তাইওয়ান, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে বাণিজ্যিকভাবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতির মাধ্যমে সবজি ও ফল উৎপাদন করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে সারাবছরই সবজি ও ফল উৎপাদন করা সম্ভব এবং উৎপাদিত সবজি ও ফলে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা লাগে না বিধায় এ সবজি ও ফল নিরাপদ এবং অধিক বাজারমূল্য পাওয়া যায়।
সাধারণত দু'ভাবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায়। সঞ্চালন পদ্ধতি এবং সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতি।
সঞ্চালন পদ্ধতিতে গাছের অত্যাবশকীয় খাদ্য উপাদানসমূহ যথাযথ মাত্রায় মিশ্রিত করে একটি ট্যাংকিতে নেয়া হয় এবং পাম্পের সাহায্যে পাইপের মাধ্যমে ট্রেতে পুষ্টি দ্রবণ সঞ্চালন করে ফসল উৎপাদন করা হয়। প্রতিদিন অনত্মতপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পাম্পের সাহায্যে এই সঞ্চালন প্রক্রিয়া চালু রাখা দরকার। এই পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে প্রথম বছর ট্রে, পামপ এবং পাইপের আনুসাঙ্গিক খরচ একটু বেশি হলেও পরবর্তী বছর থেকে শুধুমাত্র রাসায়নিক খাদ্য উপাদানের খরচ প্রয়োজন হয়। ফলে দ্বিতীয় বছর থেকে খরচ অনেকাংশে কমে যায়। এ পদ্ধতিতে গ্যালভানাইজিং লোহার ট্রের উপর কর্কশিটের মাঝে গাছের প্রয়োজনীয় দূরত্ব অনুসারে যেমন_ লেটুস ২০ দ্ধ ২০ সে. মি. টমেটো ৫০ দ্ধ ৪০ সে. মি. এবং স্ট্রবেরি ৩০ দ্ধ ৩০ সে. মি. দূরত্বে গর্ত করতে হয়। উপযুক্ত বয়সের চারা স্পঞ্জসহ ওই গর্তে স্থাপন করতে হয়। অপরদিকে, সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতিতে একটি ট্রেতে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানসমূহ পরিমিত মাত্রায় সরবরাহ করে সরাসরি ফসল চাষ করা হয়।
এই পদ্ধতিতে খাদ্য উপাদান সরবরাহের জন্য কোনো পাম্প বা পানি সঞ্চালনের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে খাদ্য উপাদান মিশ্রিত দ্রবণ ও তার উপর স্থাপিত কর্কশিটের মাঝে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে। কর্কশিটের উপরে ৪ থেকে ৫টি ছোট ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে এবং গাছ তার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন কর্কশিটের ফাঁকা জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে পারে। ফসলের প্রকার ভেদে সাধারণত ২ থেকে ৩ বার এই খাদ্য উপাদান ট্রেতে যোগ করতে হয়। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ সহজেই এই পদ্ধতি অনুসরণ করে পস্নাস্টিক বালতি, পানির বোতল, মাটির পাতিল, ইত্যাদি ব্যবহার করে বাড়ির ছাদ, বারান্দা এবং খোলা জায়গায় সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করতে পারে। এতে খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম হবে।
যে সকল ফসল হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যাবে তা হল_ পাতা জাতীয় সবজির মধ্যে লেটুস, গীমাকলমি, বিলাতি ধনিয়া, বাঁধাকপি। ফল জাতীয় সবজির মধ্যে টমেটো, বেগুন, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, শসা, ক্ষিরা, মেলন, স্কোয়াস, ফল স্ট্রবেরি, ফুল এ্যানথরিয়াম, গাঁদা, গোলাপ, অর্কিড, চন্দ্রমলিস্নকা, জারবেরা ইত্যাদি। হাইড্রোপনিক পদ্ধতির চারা উৎপাদন প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী মলিস্নক বলেন, হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনের জন্য স্পঞ্জ বস্নক ব্যবহার করা হয়। সাধারণত স্পঞ্জকে ৩০ সে. দ্ধ ৩০ সে. সাইজে কেটে নিতে হয়। এই স্পঞ্জকে ২.৫ সে মি. দৈঘর্্য এবং ২.৫ সে. মি. প্রস্থ বর্গাকারে, ডট ডট করে কেটে নিতে হয় এবং এর মাঝে এক সে. মি. করে কেটে প্রতিটি বর্গাকারে স্পঞ্জের মধ্যে একটি করে বীজ বপন করতে হয়। বীজ বপনের পূর্বে বীজকে ১০% ক্যালসিয়াম অথবা সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। বীজ বপনের পর স্পঞ্জকে একটি ছোট ট্রেতে রাখতে হবে। এই ট্রের মধ্যে ৫ থেকে ৮ সে. মি. পানি রাখতে হবে যাতে স্পঞ্জটি পানিতে সহজে ভাসতে পারে। চারা গজানোর ২ থেকে ৩ দিন পর প্রাথমিক অবস্থায় ৫ থেকে ১০ মি. লি. খাদ্য উপাদানে সম্বলিত দ্রবণ এক বার এবং চারা গজানোর ১০ থেকে ১২ দিন পর থেকে চারা রোপণের পূর্ব পর্যনত্ম প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ মি. লি. দ্রবণ দিতে হবে। এ পদ্ধতিতে চারা রোপণের পর দ্রবণের পিএইচ মাত্রা ৫.৮ থেকে ৬.৫ -এর মধ্যে এবং ইসি মাত্রা ১.৫ থেকে ১.৯ -এর মধ্যে রাখা দরকার। গাছের বৃদ্ধির পর্যায়ে ওপর থেকে সুতা বা শক্ত রশি ঝুলিয়ে গাছ সোজা ও দাঁড় করিয়ে রাখতে হয় এবং পরিচর্যা সাধারণ গাছের মতই করতে হবে।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতির জন্য রাসায়নিক দ্রব্যের পরিমাণ ও তৈরির প্রক্রিয়া একটু ভিন্ন রকম। প্রতি এক হাজার লিটার পানির জন্য পটাশিয়াম হাইড্রোজেন ফসফেট ২৭০ গ্রাম, পটাসিয়াম নাইট্রেট ৫৮০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম নাইট্রেট এক হাজার গ্রাম, ম্যাগানেসিয়াম সালফেট ৫১০ গ্রাম, ইডিটিএ আয়রন ৮০ গ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ সালফেট ৬.১০ গ্রাম, বরিক এসিড ১.৮০ গ্রাম, কপার সালফেট ০.৪০ গ্রাম, অ্যামনিয়াম মলিবটেড ০.৩৮ গ্রাম, জিংক সালফেট ০.৪৪ গ্রাম হারে পানিতে মিশিয়ে খাদ্য দ্রবণ তৈরি করতে হবে।
জলীয় খাদ্য দ্রবণ তৈরির সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রথমে ঝঃড়পশ ঝড়ষঁঃরড়হ তৈরি করতে হবে। এই ঝঃড়পশ তৈরি করার সময় ক্যালসিয়াম নাইট্রেট এবং ঊউঞঅ ওৎড়হ কে পরিমাপ করে ১০ লিটার পানিতে দ্রবীভূত করে দ্রবণকে ঝঃড়পশ ঝড়ষঁঃরড়হ "অ" নামে নামকরণ করতে হবে। অবশিষ্ট রাসায়নিক দ্রব্যগুলোকে একসাথে ১০ লিটার পাানিতে দ্রবীভূত করে ঝঃড়পশ ঝড়ষঁঃরড়হ "ইচ্ নামে নামকরণ করতে হবে। এক হাজার লিটার জলীয় দ্রবণ তৈরির ক্ষেত্রে প্রথমে এক হাজার লিটার পানি ট্যাংকে নিতে হবে। তারপর ঝঃড়পশ ঝড়ষঁঃরড়হ অ থেকে ১০ লিটার দ্রবণ ট্যাংকের পানিতে ঢালতে হবে এবং একটি অ-ধাতব দ-ের সাহায্যে নাড়াচাড়া করে ভালভাবে মেশাতে হবে। এরপর ঝঃড়পশ ঝড়ষঁঃরড়হ "ই" থেকে আগের মত ১০ লিটার দ্রবণ ট্যাংকে নিতে হবে এবং আগের মতই অ-ধাতব দ-ের সাহয্যে পানিতে ঝঃড়পশ ঝড়ষঁঃরড়হ গুলি সমানভাবে মেশাতে হবে।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতির চাষাবাদের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মো. আব্দুল হক জানান, এ পদ্ধতিতে আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না বিধায় সারাবছর কিংবা অমৌসুমেও সবজি, ফল, ফুল চাষাবাদ করা যায়। পদ্ধতিটি মাটিবিহীন চাষ পদ্ধতি হওয়ায় মাটিবাহিত রোগ ও কৃমিজনিত রোগ হয় না। কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম হওয়ার কারণে এই পদ্ধতিতে কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে ছোট এবং বড় পরিসরে স্বাস্থ্যসন্মত এবং পরিচ্ছন্নভাবে ফসল উৎপাদন করা যায়। এটি হোম-ফার্মিং এর জন্য একটি আদর্শ প্রযুক্তি বিধায় অধিক লাভজনক, অর্থকরী ও মানসম্পন্ন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।
বিভিন্ন কারণে দেশে মাথাপিছু চাষযোগ্য জমির পরিমাণ সংকুচিত হচ্ছে। বর্ধিত জনসংখ্যার অব্যাহত খাদ্য চাহিদা পূরণের লৰ্যে শুধু আবাদি জমির উপর নির্ভর করা যাবে না। দেশের এমনি অবস্থায় প্রয়োজন অব্যবহৃত খালি জায়গা ও পতিত জায়গা শস্য চাষের আওতায় আনা। হাইড্রোপনিকস চাষ পদ্ধতি এ ৰেত্রে সঠিকভাবে আরোপযোগ্য একটি কৌশল। এ পদ্ধতি বাড়ির ছাদে, আঙিনায়, বারান্দায় কিংবা চাষের অযোগ্য পতিত জমিতে সহজেই চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব। এতে করে একদিকে যেমন পতিত জমি বা অব্যবহৃত জায়গার সফল ব্যবহার হবে, অন্যদিকে দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হবে।
লেখক : কৃষিবিদ, বৈজ্ঞানিক কর্মকতর্াফল গবেষণা কেন্দ্র, বিনোদপুর, রাজশাহী

হাইড্রোপনিক পদ্ধতি মাটিবিহীন চাষাবাদ

গাছ আছে, ফল আছে, ফুল আছে আপনার প্রিয় আঙিনায়; কিন্তু গাছের নীচে মাটি নেই। ভাবছেন এটা আবার হয় নাকি! হয়। আপনার আঙিনায় মাটি ছাড়াই জন্মাবে প্রিয় ফসল, ফুল, সবজি। মাটির পরিবর্তে পানিতেই জন্মাতে পারবেন টমেটো, লেটুস, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, ক্ষিরা, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি, এ্যানথরিয়াম, গাঁদা, গোলাপ, অর্কিড, চন্দ্রমলিস্নকা আরো অনেক ফসল। মাটিবিহীন পানিতে ফসল উৎপাদনের এই কৌশলকে বলে হাইড্রোপনিক যা একটি অত্যাধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সারাবছরই সবজি ও ফল উৎপাদন করা সম্ভব। এই চাষাবাদে কোনো কীটনাশক বা আগাছানাশক কিংবা অতিরিক্ত সার দেয়ার প্রয়োজন হবে না। তাই অনায়াসে গড়ে তুলতে পারবেন অর্গানিক ফসলের সম্ভার। সমপ্রতি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) -এর বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তিতে চাষাবাদ শুরম্ন করেছেন।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊধর্্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ.কে. এম. সেলিক রেজা মলিস্নক ১৯৯৭ সালে জাপানে হাইড্রোপনিক প্রযুক্তির উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে এই প্রযুক্তি প্রথম বাংলাদেশে নিয়ে আসেন ২০০৬ সালে। ২০০৭ সালে তিনি বাংলাদেশের জলবায়ুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হাইড্রোপনিক প্রযুক্তির গবেষণা শুরম্ন করেন টমেটো, ক্যাপসিকাম, লেটুস ও স্ট্রবেরি এই ৪টি ফসল নিয়ে। এ গবেষণায় সাফল্যের পর ২০০৮ সালে এর সাথে ক্ষিরা, শসা, গাঁদা ফুল ও বেগুন এবং ২০০৯ সালে বামন সিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকোলি, চন্দ্রমলিস্নকা যোগ করেন। বিজ্ঞানী মলিস্নক এ গবেষণায় ব্যাপকভাবে সাফল্য পান।
তিনি জানান, লাভজনক ফসলের ক্ষেত্রে এ হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে মাটির পরিবর্তে পানিতে গাছের প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করে ফসল উৎপাদন করা হয়। জনবহুল দেশে যেখানে স্বাভাবিক চাষের জমি কম কিংবা নেই সেখানে ঘরের ছাদে বা আঙিনায়, পলি টানেল, নেট হাউজে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে সবজি ও ফল উৎপাদন সম্ভব। উন্নত বিশ্বের যেমন : ইউরোপ, আমেরিকা, জাপান, তাইওয়ান, চীন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে বাণিজ্যিকভাবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতির মাধ্যমে সবজি ও ফল উৎপাদন করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে সারাবছরই সবজি ও ফল উৎপাদন করা সম্ভব এবং উৎপাদিত সবজি ও ফলে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা লাগে না বিধায় এ সবজি ও ফল নিরাপদ এবং অধিক বাজারমূল্য পাওয়া যায়।
সাধারণত দু'ভাবে হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায়। সঞ্চালন পদ্ধতি এবং সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতি।
সঞ্চালন পদ্ধতিতে গাছের অত্যাবশকীয় খাদ্য উপাদানসমূহ যথাযথ মাত্রায় মিশ্রিত করে একটি ট্যাংকিতে নেয়া হয় এবং পাম্পের সাহায্যে পাইপের মাধ্যমে ট্রেতে পুষ্টি দ্রবণ সঞ্চালন করে ফসল উৎপাদন করা হয়। প্রতিদিন অনত্মতপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পাম্পের সাহায্যে এই সঞ্চালন প্রক্রিয়া চালু রাখা দরকার। এই পদ্ধতিতে প্রাথমিকভাবে প্রথম বছর ট্রে, পামপ এবং পাইপের আনুসাঙ্গিক খরচ একটু বেশি হলেও পরবর্তী বছর থেকে শুধুমাত্র রাসায়নিক খাদ্য উপাদানের খরচ প্রয়োজন হয়। ফলে দ্বিতীয় বছর থেকে খরচ অনেকাংশে কমে যায়। এ পদ্ধতিতে গ্যালভানাইজিং লোহার ট্রের উপর কর্কশিটের মাঝে গাছের প্রয়োজনীয় দূরত্ব অনুসারে যেমন_ লেটুস ২০ দ্ধ ২০ সে. মি. টমেটো ৫০ দ্ধ ৪০ সে. মি. এবং স্ট্রবেরি ৩০ দ্ধ ৩০ সে. মি. দূরত্বে গর্ত করতে হয়। উপযুক্ত বয়সের চারা স্পঞ্জসহ ওই গর্তে স্থাপন করতে হয়। অপরদিকে, সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতিতে একটি ট্রেতে গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানসমূহ পরিমিত মাত্রায় সরবরাহ করে সরাসরি ফসল চাষ করা হয়।
এই পদ্ধতিতে খাদ্য উপাদান সরবরাহের জন্য কোনো পাম্প বা পানি সঞ্চালনের প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে খাদ্য উপাদান মিশ্রিত দ্রবণ ও তার উপর স্থাপিত কর্কশিটের মাঝে ২ থেকে ৩ ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রাখতে হবে। কর্কশিটের উপরে ৪ থেকে ৫টি ছোট ছোট ছিদ্র করে দিতে হবে যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে এবং গাছ তার প্রয়োজনীয় অক্সিজেন কর্কশিটের ফাঁকা জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে পারে। ফসলের প্রকার ভেদে সাধারণত ২ থেকে ৩ বার এই খাদ্য উপাদান ট্রেতে যোগ করতে হয়। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ সহজেই এই পদ্ধতি অনুসরণ করে পস্নাস্টিক বালতি, পানির বোতল, মাটির পাতিল, ইত্যাদি ব্যবহার করে বাড়ির ছাদ, বারান্দা এবং খোলা জায়গায় সঞ্চালনবিহীন পদ্ধতিতে সবজি উৎপাদন করতে পারে। এতে খরচ তুলনামূলকভাবে অনেক কম হবে।
যে সকল ফসল হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যাবে তা হল_ পাতা জাতীয় সবজির মধ্যে লেটুস, গীমাকলমি, বিলাতি ধনিয়া, বাঁধাকপি। ফল জাতীয় সবজির মধ্যে টমেটো, বেগুন, ক্যাপসিকাম, ফুলকপি, শসা, ক্ষিরা, মেলন, স্কোয়াস, ফল স্ট্রবেরি, ফুল এ্যানথরিয়াম, গাঁদা, গোলাপ, অর্কিড, চন্দ্রমলিস্নকা, জারবেরা ইত্যাদি। হাইড্রোপনিক পদ্ধতির চারা উৎপাদন প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী মলিস্নক বলেন, হাইড্রোপনিকস পদ্ধতিতে চারা উৎপাদনের জন্য স্পঞ্জ বস্নক ব্যবহার করা হয়। সাধারণত স্পঞ্জকে ৩০ সে. দ্ধ ৩০ সে. সাইজে কেটে নিতে হয়। এই স্পঞ্জকে ২.৫ সে মি. দৈঘর্্য এবং ২.৫ সে. মি. প্রস্থ বর্গাকারে, ডট ডট করে কেটে নিতে হয় এবং এর মাঝে এক সে. মি. করে কেটে প্রতিটি বর্গাকারে স্পঞ্জের মধ্যে একটি করে বীজ বপন করতে হয়। বীজ বপনের পূর্বে বীজকে ১০% ক্যালসিয়াম অথবা সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। বীজ বপনের পর স্পঞ্জকে একটি ছোট ট্রেতে রাখতে হবে। এই ট্রের মধ্যে ৫ থেকে ৮ সে. মি. পানি রাখতে হবে যাতে স্পঞ্জটি পানিতে সহজে ভাসতে পারে। চারা গজানোর ২ থেকে ৩ দিন পর প্রাথমিক অবস্থায় ৫ থেকে ১০ মি. লি. খাদ্য উপাদানে সম্বলিত দ্রবণ এক বার এবং চারা গজানোর ১০ থেকে ১২ দিন পর থেকে চারা রোপণের পূর্ব পর্যনত্ম প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ মি. লি. দ্রবণ দিতে হবে। এ পদ্ধতিতে চারা রোপণের পর দ্রবণের পিএইচ মাত্রা ৫.৮ থেকে ৬.৫ -এর মধ্যে এবং ইসি মাত্রা ১.৫ থেকে ১.৯ -এর মধ্যে রাখা দরকার। গাছের বৃদ্ধির পর্যায়ে ওপর থেকে সুতা বা শক্ত রশি ঝুলিয়ে গাছ সোজা ও দাঁড় করিয়ে রাখতে হয় এবং পরিচর্যা সাধারণ গাছের মতই করতে হবে।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতির জন্য রাসায়নিক দ্রব্যের পরিমাণ ও তৈরির প্রক্রিয়া একটু ভিন্ন রকম। প্রতি এক হাজার লিটার পানির জন্য পটাশিয়াম হাইড্রোজেন ফসফেট ২৭০ গ্রাম, পটাসিয়াম নাইট্রেট ৫৮০ গ্রাম, ক্যালসিয়াম নাইট্রেট এক হাজার গ্রাম, ম্যাগানেসিয়াম সালফেট ৫১০ গ্রাম, ইডিটিএ আয়রন ৮০ গ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ সালফেট ৬.১০ গ্রাম, বরিক এসিড ১.৮০ গ্রাম, কপার সালফেট ০.৪০ গ্রাম, অ্যামনিয়াম মলিবটেড ০.৩৮ গ্রাম, জিংক সালফেট ০.৪৪ গ্রাম হারে পানিতে মিশিয়ে খাদ্য দ্রবণ তৈরি করতে হবে।
জলীয় খাদ্য দ্রবণ তৈরির সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। প্রথমে ঝঃড়পশ ঝড়ষঁঃরড়হ তৈরি করতে হবে। এই ঝঃড়পশ তৈরি করার সময় ক্যালসিয়াম নাইট্রেট এবং ঊউঞঅ ওৎড়হ কে পরিমাপ করে ১০ লিটার পানিতে দ্রবীভূত করে দ্রবণকে ঝঃড়পশ ঝড়ষঁঃরড়হ "অ" নামে নামকরণ করতে হবে। অবশিষ্ট রাসায়নিক দ্রব্যগুলোকে একসাথে ১০ লিটার পাানিতে দ্রবীভূত করে ঝঃড়পশ ঝড়ষঁঃরড়হ "ইচ্ নামে নামকরণ করতে হবে। এক হাজার লিটার জলীয় দ্রবণ তৈরির ক্ষেত্রে প্রথমে এক হাজার লিটার পানি ট্যাংকে নিতে হবে। তারপর ঝঃড়পশ ঝড়ষঁঃরড়হ অ থেকে ১০ লিটার দ্রবণ ট্যাংকের পানিতে ঢালতে হবে এবং একটি অ-ধাতব দ-ের সাহায্যে নাড়াচাড়া করে ভালভাবে মেশাতে হবে। এরপর ঝঃড়পশ ঝড়ষঁঃরড়হ "ই" থেকে আগের মত ১০ লিটার দ্রবণ ট্যাংকে নিতে হবে এবং আগের মতই অ-ধাতব দ-ের সাহয্যে পানিতে ঝঃড়পশ ঝড়ষঁঃরড়হ গুলি সমানভাবে মেশাতে হবে।
হাইড্রোপনিক পদ্ধতির চাষাবাদের সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ড. মো. আব্দুল হক জানান, এ পদ্ধতিতে আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না বিধায় সারাবছর কিংবা অমৌসুমেও সবজি, ফল, ফুল চাষাবাদ করা যায়। পদ্ধতিটি মাটিবিহীন চাষ পদ্ধতি হওয়ায় মাটিবাহিত রোগ ও কৃমিজনিত রোগ হয় না। কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম হওয়ার কারণে এই পদ্ধতিতে কীটনাশকমুক্ত সবজি উৎপাদন করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে ছোট এবং বড় পরিসরে স্বাস্থ্যসন্মত এবং পরিচ্ছন্নভাবে ফসল উৎপাদন করা যায়। এটি হোম-ফার্মিং এর জন্য একটি আদর্শ প্রযুক্তি বিধায় অধিক লাভজনক, অর্থকরী ও মানসম্পন্ন ফসল উৎপাদন করা সম্ভব।
বিভিন্ন কারণে দেশে মাথাপিছু চাষযোগ্য জমির পরিমাণ সংকুচিত হচ্ছে। বর্ধিত জনসংখ্যার অব্যাহত খাদ্য চাহিদা পূরণের লৰ্যে শুধু আবাদি জমির উপর নির্ভর করা যাবে না। দেশের এমনি অবস্থায় প্রয়োজন অব্যবহৃত খালি জায়গা ও পতিত জায়গা শস্য চাষের আওতায় আনা। হাইড্রোপনিকস চাষ পদ্ধতি এ ৰেত্রে সঠিকভাবে আরোপযোগ্য একটি কৌশল। এ পদ্ধতি বাড়ির ছাদে, আঙিনায়, বারান্দায় কিংবা চাষের অযোগ্য পতিত জমিতে সহজেই চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব। এতে করে একদিকে যেমন পতিত জমি বা অব্যবহৃত জায়গার সফল ব্যবহার হবে, অন্যদিকে দেশ অর্থনৈতিকভাবে অনেক লাভবান হবে।
লেখক : কৃষিবিদ, বৈজ্ঞানিক কর্মকতর্াফল গবেষণা কেন্দ্র, বিনোদপুর, রাজশাহী

শুক্রবার, ১২ মার্চ, ২০১০

পেয়ারার ডাল বাঁকালেই ফলন দশগুণ! ফল ধরবে বারো মাস!

image_103_39321

ডাল বাঁকালেই ফলন দশগুণ। তা ছাড়া একই প্রযুক্তিতে বছরের বারো মাসই ফল ধরানো সম্ভব। ফলের মৌসুমে গাছের ফুল ছিঁড়ে দিয়ে এ প্রক্রিয়াকে আরো প্রভাবিত করা যায়, যার ফলে সারা বছরই ফলের মৌসুমের তুলনায়্র আট থেকে দশগুণ বেশি ফল ধরবে গাছে। পেয়ারা গাছের ক্ষেত্রে দীর্ঘ ২৭ মাস গবেষণার পর সম্পূর্ণ নতুন উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সম্পর্কে এই তথ্য দিলেন বাউকুল উদ্ভাবক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. এম এ রহিম।
উদ্ভাবিত প্রযুক্তি সম্পর্কে ড. রহিম কালের কণ্ঠকে বলেন, সাধারণত বর্ষা ও শীত_এই দুই ঋতুতে গাছে পেয়ারা হয়। তবে শীত অপেক্ষা বর্ষাকালে ফলন একটু বেশি হয়। বর্ষাকালে জলীয় ভাব বেশি থাকায় ফলের মিষ্টতা ও অন্য গুণাগুণ শীতকালের ফলের থেকে অনেকাংশেই কম থাকে। তা ছাড়া জলীয় ভাব বেশি থাকায় পাকা ফল তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যায়, ফলে দাম থাকে কম। কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা গেছে, সব জাতের পেয়ারার গুণাগুণ শীতকালে বেড়ে যায়, রোগ ও পোকার আক্রমণও কম থাকে। ফলের আকৃতি এবং রং সব দিক থেকেই সুন্দর হওয়ায় এই সময়ে পেয়ারার দামও থাকে বেশি। এসব দিক বিবেচনায় রেখেই বর্ষাকাল বাদে কিভাবে অন্যান্য ঋতুতে অত্যধিক হারে উৎপাদন বাড়ানো যায় সে ব্যাপারে গবেষণা শুরু হয়। এ লক্ষ্যে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নিবিড় গবেষণার মাধ্যমে 'গাছের ডাল বাঁকানো' পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে প্রতিটি গাছ থেকে সাধারণের তুলনায় আট থেকে দশগুণ বেশি পেয়ারা উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া পেয়ারার মৌসুমে গাছের ফুল ও ফল ছিঁড়ে দিয়ে এ প্রক্রিয়াকে আরো প্রভাবিত করা যায় বলে জানান তিনি।
এ প্রযুক্তির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জার্মপ্লাজম সেন্টারের প্রধান গবেষণা সহযোগী কৃষিবিদ শামসুল আলম মিঠু কালের কণ্ঠকে বলেন, বছরে দুবার অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে (এপ্রিল-জুন) এবং হেমন্তকালে (সেপ্টেম্বর-নভেম্বর) শাখা-প্রশাখার নিয়ন্ত্রিত বিন্যাসের মাধ্যমে সারা বছর পেয়ারার ফুল ও ফল ধারণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। গাছের বয়স দেড় থেকে দুই বছর হলেই এই পদ্ধতি শুরু করা যাবে এবং পাঁচ থেকে ছয় বছর পর্যন্ত এই পদ্ধতিতে ফলন বাড়ানো সম্ভব। ডাল বাঁকানোর ১০-১৫ দিন আগে গাছের গোড়ায় সার ও পানি দেওয়া হয়। ডাল বাঁকানোর সময় প্রতিটি শাখার অগ্রভাগের এক থেকে দেড় ফুট অঞ্চলের পাতা ও ফুল-ফল রেখে বাকি অংশ ছেঁটে দেওয়া হয়। এরপর ডালগুলোকে সুতা দিয়ে বেঁধে তা বাঁকিয়ে মাটির কাছাকাছি কাণ্ডের সঙ্গে অথবা খুঁটির মাধ্যমে মাটিতে বেঁধে দেওয়া হয়। গ্রীষ্মকালে মাত্র ১০ থেকে ১২ দিন পরই নতুন ডাল গজানো শুরু হয়। নতুন ডাল এক সেন্টিমিটার লম্বা হলে বাঁধন খুলে দেওয়া হয়। আর হেমন্তকালে নতুন ডাল গজাতে ২০ থেকে ২৫ দিন লাগে।
শামসুল আলম আরো বলেন, ডাল বাঁকানোর ৪৫ থেকে ৬০ দিন পরে ফুল ধরা শুরু হয়। এভাবে গজানো প্রায় প্রতি পাতার কোলেই ফুল আসে। তবে এ সময় টানা বৃষ্টি বা আর্দ্র আবহাওয়া ফলন বৃদ্ধিতে ক্ষতিকারক। এ পদ্ধতিতে সারা বছরই অত্যধিক হারে ফলন পাওয়া যায়। তা ছাড়া ফলের মিষ্টতা বেশি এবং রং ও আকৃতি সুন্দর হওয়ায় পেয়ারার বাজারদরও বেশি পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে ড. রহিম বলেন, এখন পর্যন্ত শুধু পেয়ারা গাছের ক্ষেত্রেই এ গবেষণা সম্পন্ন হয়েছে। তবে অন্য ফলের ক্ষেত্রেও গবেষণা চলছে। এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে গ্রীষ্মকালে গাছপ্রতি ৬০ থেকে ৭০ কেজি এবং হেমন্তকালে গাছপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ কেজি পেয়ারার ফলন পাওয়া গেছে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় আট থেকে দশগুণ বেশি। তিনি বলেন, কৃষকরা সহজেই এই পদ্ধতিতে পেয়ারা চাষ করে উৎপাদন বাড়াতে পারবেন, যা বাউকুলের মতো পেয়ারাকেও মানুষের কাছে সহজলভ্য করে তুলবে।

রবিবার, ৭ মার্চ, ২০১০

খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষিপ্রযুক্তি

180100_1

স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে আজ পর্যন- জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। জমি কমেছে অথচ খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। প্রতিবছর এক শতাংশ হারে ৫০ হাজার হেক্টর আবাদি জমি কমে যাচ্ছে। অপরদিকে জনসংখ্যা প্রতি বছর ১.৫৪% হারে বাড়ছে। ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য দেশে বিদেশি হাইব্রিড বীজ আমদানি করে চাষাবাদ করা হচ্ছে। এর কারণে পরনির্ভরশীলতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। দেশে গড়ে বছরে ১ লাখ টনের মত খাদ্যশস্য ঘাটতি থাকে। হাইব্রিড ফসল ছাড়াও নিচের প্রযুক্তি বা পদ্ধতিতে আমাদের খাদ্য ঘাটতি পূরণ সম্ভব :
জাত উদ্ভাবন : ফলন বেশি দেয়, খরা সহিষ্ণু, লবণাক্ততা সহিষ্ণু, বন্যা সহিষ্ণু, স্বল্প জীবনকাল ও পোকা-মাকড় রোগ প্রতিরোধীজাত উদ্ভাবন করা প্রয়োজন। ইতিমধ্যেই কিছু জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।
আন-ঃফসল চাষাবাদ : একই জমিতে একই সাথে একাধিক ফসল চাষাবাদই হচ্ছে আন-ঃফসল চাষ। যেমন তুলা অথবা আখের সাথে পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ডালজাতীয় শস্য, শাক-সবজি, তেলজাতীয় শস্য, গম ইত্যাদি চাষ করা যায়। ধানের জমিতে মাচা করে শাক-সবজি চাষ করা যায়।
মিশ্র ফসল চাষাবাদ : প্রধান ফসলের সাথে যে কোন একটি শস্য একই জমিতে একই সময়ে উৎপাদন করলে মিশ্র ফসল চাষ হবে। পাটের সাথে ডাঁটা, লালশাক, পুঁইশাক, ডালজাতীয় সবজি চাষ করা যায়। এতে একই জমি থেকে একই সাথে একই খরচে একাধিক ফসল পাওয়া যায়।
রিলে ফসল : কোন ফসল সংগ্রহ করার সাথে সাথে বিনা চাষে ডাল, শাক, ধনিয়া, ইত্যাদি স্বল্পকালীন সময়ে পরবর্তী ফসল চাষ শুরুর আগে চাষ করা যায়। সাধারণত আমন ধান কাটার পর বিনা চাষে ফসলের বীজ বপন করে রিলে ফসল উৎপাদন করা যায়।
রেটুন ফসল : প্রধান ফসল কাটার পর গাছের গোড়া থেকে কুশি গজায়। এই কুশি থেকে বিনাচাষে ও বিনা খরচে ফসল উৎপাদন করা যায়। আখ, কাঁকরোল, কলা ইত্যাদির মুড়ি ফসল উৎপাদন করা যায়।
ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি : খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়াতে হলে ফসলের নিবিড়তা বাড়াতে হবে। বর্তমানে দেশে ফসলের নিবিড়তা ১৮০%। ২০ বছর আগে ছিল ১৬৬%। ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধির জন্য যে জমিতে বর্তমানে বছরে একটি ফসল হয় সে জমিতে দু'টি ফসল, যে জমিতে দু'টি সে জমিতে তিনটি এবং যে জমিতে তিনটি ফসল চাষ হয় এমন জমিতে চারটি ফসল উৎপাদন করতে হবে। এ জন্য স্বল্পজীবনকালের ফসলের জাত উদ্ভাবন করা প্রয়োজন। এ ছাড়াও সেচের আওতার জমি বাড়ানো, শস্য বিন্যাস ও শস্য পর্যায় অবলম্বন করা ও জমির উলম্ব ব্যবহার করা।
পতিত জমিতে চাষ : দেশে বর্তমানে ৭.৩ লক্ষ হেক্টর পতিত জমি রয়েছে। এরমধ্যে চাষযোগ্য পতিত জমি আছে ৩.২৩ লাখ হেক্টর। এসব পতিত জমিতে চাষাবাদের ব্যবস্থা করতে হবে। এসব ব্যক্তি মালিকানা পতিত জমিতে মালিক চাষাবাদ করতে পারে।
বাড়ির আঙিনায় চাষাবাদ : বসতবাড়ির আশেপাশে অনেক জায়গা পতিত থাকে। এসব জায়গায় শাক-সবজি, ভেষজ, ফুল ও ফল আবাদ করা যায়। এতে বাড়ির মালিক ও দেশ লাভবান হবে। দেশে বর্তমানে ১ কোটি ৭৮ লক্ষ ২৮ হাজার কৃষি পরিবার রয়েছে। বসতভিটা আছে ১ কোটি ১৮ লক্ষ। এসব বসতভিটার প্রতি ইঞ্চি জায়গায় চাষ করা সম্ভব।
পাহাড়ি এলাকায় চাষাবাদ : দেশের প্রায় ১৫ শতাংশ এলাকায় পাহাড় রয়েছে। অল্প জায়গায় জুম চাষ ও মশলা চাষ ছাড়া বাকি জমি অনাবাদি থাকে। এখানে সল্ট (ঝঅখঞ - ঝষড়ঢ়ঢ়রহম অমৎরপঁষঃঁৎধষ খধহফ ঞবপযহড়ষড়মু) পদ্ধতিতে ফসল চাষাবাদ করা যায়। এ পদ্ধতিতে বনজ, ফলদ ও রাবার বৃক্ষের পাশাপাশি শাক-সবজি চাষ, মাছ চাষ, পশুপালন করা সম্ভব।
লবণাক্ত এলাকায় চাষাবাদ : দেশের মোট আবাদি জমির ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ জমি লবণাক্ত। এসব জমিতে সাধারণত ফসল ভাল হয় না। তবে কিছু লবণাক্ততা সহ্য ক্ষমতাসম্পন্ন বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। আরো কিছু জাত উদ্ভাবন করতে হবে। এ ছাড়াও লবণাক্ততা হ্রাসের পদ্ধতি প্রয়োগ করতে হবে।
চর এলাকায় চাষ : বাংলাদেশের নদীর পাড়ের এলাকায় শুধু বালুচর। এসব চরে ফসল বিন্যাস করে বালি মাটির উপযোগী ফসল যেমন, তরমুজ, বাদাম, আখ, সরিষা, ভুট্টা ইত্যাদি ফসল চাষাবাদ করতে হবে।
কৃষি বনায়ন : ফসলের জমিতে, বসতবাড়ির আশেপাশে, পুকুরের পাড়ে, নদী-নালা, খাল-বিলের পাড়ে মাছ, পশুপাখি ও ফসলের সাথে বৃক্ষ চাষাবাদ করা যায়।
উফশীজাতের চাষ : উচ্চ ফলনশীল জাতের ফসল চাষাবাদ করলে খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়বে। দেশে ৫৬টি জাতের ধানসহ সকল ফসলের উফশীজাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।
শস্য বহুমুখীকরণ : দেশে ধান ছাড়া প্রায় দু'শতাধিক ফসল চাষাবাদের সুযোগ আছে। সব ধরনের ফসল চাষাবাদ করা উচিত। কারণ এতে ভাতের উপর চাপ কম পড়বে। পুষ্টির চাহিদা পূরণ হবে। মাটির উর্্বরতা বাড়বে। খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়বে।
তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার : কল সেন্টার, রোগ নির্ণয়, পূর্বাভাস জানা, ঋণ ও পণ্য বিতরণ, কৃষি পণ্য ক্রয়-বিক্রয়, তথ্য প্রচার ইত্যাদি কাজ তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে করলে ফসল উৎপাদন সহজ ও বেশি হবে।
প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার : দেশে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। এসব প্রাকৃতিক সম্পদ দেশের ফসল উৎপাদনে ব্যবহার করা যায়। যেমন- লতাপাতা, শাক-সবজির উচ্ছিষ্টাংশ, গাছের শাখাপ্রশাখা ইত্যাদি পচিয়ে জৈব সার তৈরি করা যায়। হাওর-বাঁওড়, পুকুর, ডোবার অব্যবহৃত জলাশয়ে মাছ চাষের ব্যবস্থা করতে হবে।
আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি : নির্দিষ্ট দূরত্বে ফসল বপন/রোপণ করা, সুষম সার ব্যবহার, আগাছা দমন, সমকালীন চাষ, ভাল বীজ ব্যবহার, সেচ নিকাশ ইত্যাদি পদ্ধতিতে চাষ করলে ফলন বাড়ে।
জৈব প্রযুক্তি প্রয়োগ : আন-র্জাতিক জৈব প্রযুক্তি সম্মেলনে কৃষি বিজ্ঞানীরা বলেছেন, শুধু জৈব প্রযুক্তি দিয়ে অতিরিক্ত ৩ কোটি মেট্টিকটন খাদ্য উৎপাদন সম্ভব। জৈব প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত এবং প্রচুর চারা উৎপাদন করা যায়। এ ছাড়াও নতুনজাত উদ্ভাবন করে ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব।
সেচ প্রদান : দেশে মোট আবাদি জমির ৫৮% সেচের আওতায় আছে। বাকি ৪২% সেচের আওতায় আনতে হবে। সেচ দিলে ফলন ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি হয়। যেমন গমে এক সেচ দিলে প্রতি হেক্টরে ২ টন ফলন হয়, তিনটি সেচ দিলে প্রায় ৪ টন ফলন হয়। এ রকম ধান, গোলআলু, শাক-সবজিসহ সব ফসলে সেচ দিলে ফলন বাড়ে।
ভাসমান পদ্ধতিতে চাষাবাদ : হাওর ও জলাবদ্ধ এলাকায় ভাসমান পদ্ধতিতে কচুরিপানার উপর সারা বছর সবজি চাষ করা যায়। ভাসমান পদ্ধতিতে ফসলের চারাও উৎপাদন করা যায়।
অন্যান্য পদ্ধতি : (১) খরা এলাকায় খরা সহিষ্ণু জাত ব্রিধান-৪৭ চাষ করা যেতে পারে। (২) চাষযোগ্য সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত স্বাদু পানির সরবরাহ নিশ্চিত করা। (৩) জাতীয় কৃষিনীতিতে কৃষিজমি ব্যবহারের আইন বাস-বায়ন করা। (৪) যেসব জমিতে সেচ ও কৃষি যন্ত্রপাতির অভাবে চাষ করা যায় না সে সব জমিতে বিনা চাষে (ডিবলিং পদ্ধতিতে) ফসল উৎপাদন করা। (৫) বন্যাপ্রবণ এলাকায় আগাম আউশের জাত চাষাবাদ করা (বিআর-২, বিআর-১৪, বিআর-২৬, ব্রিধান-২৭)। (৬) মঙ্গা এলাকার জন্য ব্রিধান-৩৩ ও বিনাধান-৭ চাষ করা। (৭) জমির আইলে শাক-সবজি, গো-খাদ্য, ডালজাতীয় শস্য ইত্যাদি চাষ করা। দেশে ১ লাখ ৪৪ হাজার হেক্টর জমির আইল হিসাবে প্রতিবছর চাষের বাইরে থাকে। (৮) উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার (৯) গুটি ইউরিয়া ও এলসিসি ব্যবহার (১০) প্রচুর পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার (১১) খাল পুনখনন (১২) প্রিকাস্ট সেচ নালার সমপ্রসারণ (১৩) কৃষি আবহাওয়া কৃষকদের জানানো (১৪) লাভ বেশি এমন ফসল চাষাবাদ করা (১৫) শস্যবীমা চালু (১৫) বিনাসুদে ঋণ দেয়া (১৭) ভর্তুকি বৃদ্ধি ও সঠিক প্রয়োগ করা (১৮) কৃষি ক্লিনিক (১৯) কৃষি পরামর্শ কেন্দ্র জোরদার করা (২০) জলবায়ু পরিবর্তন উপযোগী ফসলের জাত ও প্রযুক্তি চিহ্নিত ও উদ্ভাবন করা। (জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।) (২১) কৃষি উপকরণ নিশ্চিত করা (২২) খাদ্যশস্য প্রক্রিয়াজাত, সংরক্ষণ, বাজারজাতকরণ সুষ্ঠু করা। (২৩) ফসলের পোকা-মাকড় ও রোগ-বালাই দমনে আইপিএম এর ব্যবহার (২৪) অর্গানিক খাদ্য উৎপাদনে জোর দেয়া। (২৫) ঘের পদ্ধতিতে ধান, মাছ, শাক-সবজি ও ফল উৎপাদনে জোর দেয়া। (২৬) খাদ্যাভাস পরিবর্তন করা।
উক্ত পদ্ধতিগুলো সারাদেশে বাস-বায়ন করার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য খাদ্য নিরাপত্তা বা ঋড়ড়ফ ঝবপঁৎরঃু একটি প্রকল্প করা যেতে পারে। প্রকল্পটি বাস-বায়ন করবে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর, গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহ, কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন, কৃষি সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান। উক্ত পদ্ধতিগুলো বাস-বায়ন সম্ভব শুধু আন-রিকতা প্রয়োজন।
_কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ
টাঙ্গাইল

বাজারে আসছে বারিকুল_৩

kul 2

আমাদের দেশে বিভিন্ন মৌসুমে নানা রকম ফল উৎপাদন হয়ে থাকে। এগুলো রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডাক্তাররা প্রায়ই বলে থাকেন, মৌসুমী ফল খেলে মৌসুমী রোগ-বালাইয়ের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
দেশের হরেক রকম ফলের সমারোহে কুল অন্যতম। ভিন্ন স্বাদের, ভিন্ন ঢংয়ের কুলের সাথে এ দেশের মানুষ কম বেশি পরিচিত। গত কয়েক বছরে বারিকুল-১ ও ২, আপেলকুল, বাউকুল, তাইওয়ান কুল যেমন বাজার মাতিয়েছে তেমনি বারিকুল-৩ মাতাবে মানুষের মন। বড় বড় রসালো বারিকুল-৩ যে কারো নজর কেড়ে নিতে পারে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) এর রাজশাহীস্থ ফল গবেষণা কেন্দ্রে বারিকুল-৩ উদ্ভাবিত হয়। ফল গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত ও উধর্্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ আলীম উদ্দীন জানান, এ জাতটির আদি উৎস হল থাইল্যান্ড। বারিকুল-৩ এর যে সমস- বৈশিষ্ট্য জাতটিকে অন্যান্য জাত করেছে তা হচ্ছে_ বারিকুল-৩ বেশ মিষ্টি, সাদা শাঁস এবং রসালো। গাছপ্রতি বারিকুল-৩ এর ফলন ৩৫-৪০ কেজি। প্রতিটি ফলের ওজন ৬০-৭৫ গ্রাম। এই কুলের মিষ্টতা (টিএসএস ১৪%) মাঝারী ধরনের হলেও এর বৃহদাকার আকৃতি যে কাউকে মুগ্ধ করতে পারে। এটি একটি বামন জাতের গাছ, ফলের শাঁস মচমচে এবং বাংলাদেশের সবগুলো কৃষি ভৌগলিক অঞ্চলে উৎপাদন যোগ্য। বারিকুল-৩ এর বীজ খুব ছোট এবং এই কুলের প্রায় ৯৬% খাদ্যোপযোগী। উচ্চ ফলনশীল এই বারিকুল-৩ হেক্টরপ্রতি প্রায় ১৪-১৫ টন ফলন দিতে সক্ষম।
ফল গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ শামীম আখতার জানান, বারিকুল-৩ থেকে ১ম বছরে ১৫-২০ কেজি প্রতি গাছে ফল পাওয়া যায়। পরবতর্ী বছরে ফলন আরো বাড়বে। তবে গাছের পরিচর্যা সঠিকভাবে করা হলে ফলন অনেক বেশি হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে দ্বিগুণ ফলন পাওয়া যেতে পারে। প্রতি বছর বর্ষার আগে ও পরে জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। এটি চাষ করতে হবে স্কয়ার পদ্ধতিতে। প্রতি হেক্টরে ৪০০-৫০০ টি চারা রোপণ করলে ফলন ভাল পাওয়া যাবে। বপন থেকে কর্তন পর্যন- সময়কাল এক বছর। ১ম বছরে সম্ভাব্য উৎপাদন ৯-১৪ টন/হেক্টর। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ফুল আসে এবং জানুয়ারি মাসে বারিকুল-৩ পরিপক্ক হয়। এ ফলের জন্য উর্বর দো-অাঁশ মাটি উত্তম।
তবে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সব মাটিতেই এ ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যেতে পারে। এ কুল দীর্ঘ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। খরা মৌসুমে সেচপ্রদান করলে ভাল ফলন পাওয়া যাবে। এই কুলে রোগ ও কীট-পতঙ্গের আক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম।
খুব শিগগিরই সারাদেশে বারিকুল-৩ ছড়িয়ে পড়বে বলে ফল গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা আশাবাদী। কৃষকরাও বাণিজ্যিকভাবে এ কুল চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারবেন।
_গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
ফল গবেষণা কেন্দ্র, রাজশাহী

পুকুরে দেশি মাগুরের চাষ

magur

দেশি মাগুর একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ও সুস্বাদু মাছ। রোগীর পথ্য হিসাবে মাছটির চাহিদা রয়েছে অনেক। এক সময় এই মাছটিকে সহজেই প্রাকৃতিক জলাশয়ে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন দেশি মাগুর আর তেমন পাওয়া যায় না। তাই মাছটি প্রায় বিলুপ্তির পথে চলে গিয়েছিল। তবে আশার কথা হল দেশের মাছ চাষিরা কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এই মাছটিকে ফিরিয়ে এনেছে।
ডিম সংগ্রহের পরবর্তী ব্যবস্থাপনা : ডিম সংগ্রহের পর ডিমগুলোকে সিস্টার্নে নিয়ে যেতে হবে। সিস্টার্নের আকার আয়তকার হতে হবে। দৈর্ঘ্যে ৮ ফুট এবং প্রস্থে ৪ ফুট হলে ভাল। সিস্টার্নের পানির উচ্চতা ৩ ইঞ্চির বেশি দেয়া উচিৎ নয়। ডিমগুলোকে পাখির পালক দিয়ে আস-ে আস-ে সিস্টার্নে বিছিয়ে দিতে হবে। মাগুরের ডিম আঠালো আর সেজন্য ডিমগুলোকে এমনভাবে বিছাতে হবে যেন একটি ডিম আরেকটি ডিমের সাথে লেগে না যায়।
তারপর আধা ইঞ্চি পি.ভি.সি. পাইপ ছিদ্র করে পানির ঝর্ণার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। দেশি মাগুরের ডিম ফুটতে কার্প জাতীয় মাছের চেয়ে সময় বেশি লাগে। তাপমাত্রা ভেদে ৩০ থেকে ৩৬ ঘণ্টা সময় লাগে। এই দর্ীঘ সময়ে মাগুর মাছের ডিমে ফাঙ্গাস আক্রমণ করতে পারে। ডিমে ফাঙ্গাস আক্রমণ করার সাথে সাথে ওই ডিমগুলোকে সিস্টার্ন থেকে সাইফনের মাধ্যমে ফেলে দিতে হবে। অন্যথায় অত্যন- দ্রুত গতিতে এই ফাঙ্গাস এক ডিম হতে অন্য ডিমে ছড়িয়ে গিয়ে সমস- ডিমকে নষ্ট করে ফেলতে পারে। সেজন্য ডিমগুলোকে সিস্টার্নে ঘন করে দেয়া যাবে না। যথাসম্ভব পাতলা করে দিতে হবে। এই সময় ঠাণ্ডা পানির ঝর্ণার সার্বক্ষণিক ব্যবস্থা রাখতে হবে। পানির তাপমাত্রা ২৭/২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট রাখতে হবে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে_ পানির তাপমাত্রা এর চেয়ে বেশি হলে দেশি মাগুরের ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়েও পরে বাচ্চা মারা যায়। এভাবে ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার পর বাচ্চাগুলো আপনা আপনি সিস্টার্নের কোণায় যেতে থাকবে। সিস্টার্নের কোণায় অবস্থান নিলেই সাধারণত বাচ্চার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়ে যায়। বাচ্চাগুলো কোণায় অবস্থান নিলে সিস্টার্নের মাঝখানের ময়লা, ধূলাবালি সাইফনের মাধ্যমে পরিষ্কার করে দিতে হবে। এভাবে বাচ্চার বয়স ৭২ ঘণ্টা পার হলেই এদেরকে কৃত্রিম খাবার দিতে হবে। এই সময় খাবার হিসাবে ছোট জু-প্ল্যাংকটন জীবিত অবস্থায় সিস্টার্নে দিতে হবে। এই জু-প্ল্যাংকটন পুকুর থেকে জীবিত অবস্থায় ধরে সংগ্রহ করে তারপর সিস্টার্নে দিতে হবে। সিস্টার্নে দু'দিন এই খাবার খাওয়ানোর পর নার্সারি পুকুরে স্থানান-র করতে হবে।
রেনু উৎপাদনকালীন সতর্কতা : ১. দেশি মাগুরের ব্রুডমাছ অবশ্যই পরিপক্ক হতে হবে। অন্যথায় সমস- কাজই বিফলে যাবে।
২. চাপ প্রয়োগে ডিম সংগ্রহের সময় খুব বেশি চাপ দিয়ে ডিম বের করা উচিৎ নয়। তাতে ডিম ভেঙ্গে যেতে পারে।
৩. সিস্টার্নে ডিম যেন অধিক ঘনত্বে দেয়া না হয় সেদিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। অর্থাৎ একটি ডিম আরেকটি ডিমের সাথে যেন লেগে না যায়।
৪. সিস্টার্নের ঠাণ্ডা পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। পানির তাপমাত্রা ২৭/২৮ ডিগ্রির বেশি হলে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হলেও মারা যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।
এভাবে চাহিদা অনুযায়ী যে কেউ দেশি মাগুরের রেনু উৎপাদন করতে পারেন। (শেষ)
_এ.কে.এম. নূরুল হক
ব্রহ্মপুত্র ফিস সিড কমপ্লেক্স (হ্যাচারি)
চর পুলিয়ামারী,শম্ভুগঞ্জ, ময়মনসিংহ

কীভাবে চিনবেন ভেজাল সার?

ফসল উৎপাদনে সার একটি অন্যতম উপকরণ। বর্তমানে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখা যাচ্ছে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা সার, কীটনাশকে ভেজাল দিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে এসব ভেজাল কারখানা। সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা উৎপাদন করে বাজারজাত করছে সেসব ভেজাল সামগ্রী। যাতে ক্ষতিগ্রস- হচ্ছে আমাদের দেশের কৃষি ও কৃষক। কয়েকটা দিকে খেয়াল রাখলেই কৃষক নিজেরাই ভেজাল সার সনাক্ত করতে পারবেন। সার কেনার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে_ ১. সারের বস-ায় সিল এবং সেলাই ঠিক আছে কিনা, ২. সার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা কিনা, ৩. সার তৈরির তারিখ ও ব্যবহারের শেষ তারিখ ঠিক আছে কিনা, ৪. বস-ার ভেতর সার দলা পাকিয়ে বা গলে গেছে কিনা, ৫. সারের আকার ঠিক আছে কিনা, ৬. বস-ায়/প্যাকেটের ওজন ঠিক আছে কিনা, ৭. কেনার পর দোকানের রশিদ নেয়া। উল্লেখিত বিষয়গুলো দেখে নেয়ার পরও যেভাবে ভেজাল সার পরীক্ষা করতে হবে_
ইউরিয়া : আসল ইউরিয়া সারের দানাগুলো সমান হয়। তাই কেনার সময় প্রথমেই দেখে নিতে হবে ইউরিয়া সারের দানাগুলো সমান আছে কিনা? ইউরিয়া সারে কাঁচের গুঁড়ো অথবা লবণ মেশানো হয়। আসল এক চামচ ইউরিয়া সার দু'চামচ পানির মধ্যে দিলে তাৎক্ষণিকভাবে গলে স্বচ্ছ দ্রবণ তৈরি করবে এবং এ দ্রবণে হাত দিলে ঠাণ্ডা অনুভূত হবে। চা চামচের অল্প পরিমাণ ইউরিয়া সার নিয়ে তাপ দিলে এক মিনিটের মধ্যে এ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ হয়ে গলে যাবে। যদি ঝাঁঝালো গন্ধসহ গলে না যায় তবে বুঝতে হবে সারটি ভেজাল।
টিএসপি : আসল টিএসপি সার পানিতে মেশালে সাথে সাথে গলে যাবে না। কিন্তু ভেজাল টিএসপি সার পানির সাথে মেশালে অল্প সময়ের মধ্যেই গলে যাবে। আসল টিএসপি এক চামচ আধা গ্লাস পানিতে মেশালে ৪/৫ ঘণ্টা পর ডাবের পানির মত পরিষ্কার দ্রবণ হবে। ভেজাল থাকলে অল্প সময়েই ঘোলা দ্রবণ তৈরি হবে।
এসএসপি : এক চা চামচ এসএসপি সার আধা গ্লাস পানিতে মেশালে নমুনাটি সম্পূর্ণ দ্রবীভূত হয়ে যদি ঘোলাটে দ্রবণ তৈরি করে তবে নমুনাটিকে প্রকৃত এসএসপি সার হিসেবে বিবেচনা করা যাবে। আংশিক দ্রবীভূত হয়ে যদি ঘোলাটে দ্রবণ তৈরি করে এবং তলানি জমা পড়ে তবে তাকে ভেজাল ভাবতে হবে। আসল এসএসপি সার আঙুলের চাপে সহজে ভেঙ্গে যাবে এবং সহজে না ভাঙ্গলে ভেজাল মিশ্রণ থাকতে পারে বলে ধারণা করা যেতে পারে।
ডিএপি সার : এক দু'চামচ ডিএপি সার একটি কাগজে খোলা অবস্থায় রেখে দিলে যদি ভিজে না ওঠে তবে সার ভেজাল। আসল ডিএপি সার হাতের মুঠোয় নিয়ে মুঠো বন্ধ করলে মুঠো ঘেমে যাবে। না ঘামলে ভেজাল মনে করতে হবে। অল্প পরিমাণ ডিএপি সার গরম করলে এক মিনিটের মধ্যে এ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ হয়ে তা গলে যাবে। তা না হলে নমুনাটি ভেজাল।
এমওপি সার/পটাশ সার : আধা গ্লাস পানিতে এক চামচ পটাশ বা এমওপি সার মেশালে গলে পানির সাথে মিশে যাবে। তলানি থাকলে মনে করতে হবে সারে ভেজাল আছে। ভেজাল এমওপি সারের লাল রঙ হাতে লেগে যাবে।
এনপিকেএস বা মিশ্র সার : ভেজাল মিশ্র সার আঙুল দিয়ে চাপ দিলে সহজেই গুঁড়ো হয়ে যাবে। ভেজাল মিশ্র সারের দানার ভেতর ও বাহিরের প্রলেপের রঙ আলাদা হয়।
বোরন : আধা গ্লাস পরিস্কার ঠাণ্ডা পানিতে এক চামচ বরিক এসিড দ্রবীভূত করলে প্রকৃত বরিক এসিডের নমুনা সম্পূর্ণ গলে যাবে। গ্লাসে তলানি জমবে না। আসল বোরন সারে তাপ দিলে খইয়ের মত ফুটবে আর যদি না ফুটে বুঝতে হবে সারে ভেজাল আছে।
অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃষকদের প্রতারিত করছেন ভেজাল সার বিক্রি করে। এতে দেশের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। কৃষকদের যদি উল্লেখিত পদ্ধতিগুলো জানা থাকে তাহলে তারা আসল নকল বুঝে সার কিনতে পারবেন।
_মো. রফিকুল ইসলাম খান, অতিরিক্ত কৃষি অফিসার, নরসিংদী

কম খরচে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট আরডিআরএস উদ্ভাবিত

Baio gas plant

 

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বিশ্ব ভারসাম্যহীনতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের ক্ষতিগ্রস- দেশের মধ্যে অন্যতম। বেশ কয়েক বছর ধরে গাছপালা লাগিয়ে সবুজ বেষ্টনী তৈরি করে পরিবেশ রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু বর্ধিত মানুষের চাহিদা মেটাতে কোনভাবেই গাছকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। জ্বালানি সমস্যা মেটাতেই সবচেয়ে বেশি বন ধ্বংস হচ্ছে। গাছপালা কমে যাওয়াতে গ্রামের মানুষ জ্বালানির জন্য খুব বেশি নির্ভর হয়ে পড়ছে গোবরের উপর। এক সময় যে গোবরের একটা বড় অংশ কৃষিজমির উর্বরতায় ব্যবহার হত, এখন তার প্রায় সবটাই জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন বাতাসে কার্বন-ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে, অন্যদিকে মাটির উর্্বরাশক্তি আশংকাজনকহারে কমে যাচ্ছে। এই অবস্থার থেকে পরিত্রাণ পেতে বায়োগ্যাস প্রযুক্তি বাস-বায়নে বিশ্বের অনেক দেশের মত বাংলাদেশও অগ্রণী ভূমিকা রাখছে।
সরকারি এবং বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এই প্রযুক্তি বাস-বায়নে এগিয়ে আসছে। আরডিআরএস কয়েক বছর ধরে বায়োগ্যাস প্রযুক্তি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রকল্পে বাস-বায়ন করে আসছে। গোবর থেকে বায়োগ্যাস প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষ একদিকে যেমন রান্না-বান্না করতে পারছে, বাল্ব জ্বালিয়ে আলোর ব্যবস্থা করতে পারছে; পাশাপাশি গোবর থেকে গ্যাস ব্যবহারের পর সেই গোবর (স্লারি) অত্যন- উন্নতমানের জৈব সার হচ্ছে, যা মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে মোট গোবরের ২৫-৩০ ভাগ দাহ্য গ্যাসে রূপান-রিত হয়। অবশিষ্ট ৭০-৭৫ ভাগ গোবর জৈব সার হিসাবে আহরণ করা যায়, যা তুলনামূলকভাবে সাধারণ গোবর সার থেকে উৎকৃষ্ট। বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের গ্যাস ব্যবহারের পর যে গোবর সার বেরিয়ে আসে তা স্লারি (ভেজা গোবর) হিসাবে জমিতে ব্যবহার করলে জমিতে নাইট্রোজেনের কার্যকারিতা একশত ভাগ পাওয়া যায়। এই স্লারিতে (ভেজা গোবর সার) কোন গন্ধ থাকে না এবং মাছি বা পোকার উপদ্রব হয় না।
এই প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল এর নির্মাণ এবং বাস-বায়ন খরচ। একটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করতে ২৫-৩০ হাজার টাকা খরচ হয় যা গ্রামের একটি গরিব পরিবারের পক্ষে বহন করা একেবারেই অসম্ভব। এর নির্মাণ খরচ কমানোর জন্য আরডিআরএস বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে নিরবাচ্ছিন্নভাবে গবেষণা করে আসছে এবং অত্যন- সফলভাবে মাত্র ১২ হাজার টাকার মধ্যে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট বাস-বায়নে সমর্থ হয়েছে_ যা আডিআরএস মডেল বায়োগ্যাস নামে পরিচিত। আরডিআরএস প্রথমে বাজারের তৈরি সেনেটারি ল্যাট্রিনের জন্য নির্মিত রিং স্লাব দিয়ে ৪রিং বিশিষ্ট আরডিআরএস মডেল বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট তৈরি করে, যাতে মোট খরচ হয় ১৮ হাজার টাকা। এই প্ল্যান্টে সমপরিমাণ গ্যাস পাওয়া যায় যা বর্তমানে বেশ কয়েকজন কৃষকের বাড়িতে ব্যবহার হচ্ছে। আরো ব্যয়ভার কমানোর লক্ষ্যে পরবর্তিতে আরডিআরএস ২রিং বিশিষ্ট বায়োগ্যাস মডেল তৈরি করে। আরসিসি মালামাল দ্বারা নির্মিত এই বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট চার ফুট ব্যাসে তৈরি। সেক্ষেত্রে প্রতিটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের জন্য খরচ হয় ১৭ হাজার টাকা। এই প্ল্যান্ট থেকেও সমপরিমাণ গ্যাস পাওয়া যায় যা চরাঞ্চলে কৃষকের বাড়িতে ব্যবহৃত হচ্ছে। পরবর্তিতে আরো ব্যয়ভার কমানোর লক্ষ্যে আরডিআরএস ১রিং বিশিষ্ট বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট তৈরি করতে সমর্থ হয়, যা তৈরিতে বর্তমান বাজারে খরচ হয় মাত্র ১২ হাজার টাকা। আরডিআরএস বর্তমানে এই প্ল্যান্ট চরাঞ্চলে জলবায়ুজনিত প্রকল্পে সমপ্রসারণ করছে। এই প্ল্যান্টের বিশেষত্ব হচ্ছে প্রতিটি প্ল্যান্ট ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি ব্যাস যার গ্যাস ডোমও ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি। এটি ফেরোসিমেন্ট মালামাল দিয়ে তৈরি। এই প্ল্যান্ট থেকেও একই পরিমাণ গ্যাস পাওয়া যায়। এই বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের স্থায়ীত্বও বেশি। যেহেতু ১২ হাজার টাকার মধ্যে একই পরিমাণ গ্যাস পাওয়া যেতে পারে তাই এ রকম বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন সম্ভব হচ্ছে। আরডিআরএস উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে এই বছর সমপ্রসারণ করবে। যাদের চারটি গরু আছে তারা ঋণের মাধ্যমে এই প্রযুক্তি নিজেদের বাড়িতে বাস-বায়ন করে বায়োগ্যাস দিয়ে রান্নাবান্না করে পরিবেশকে রক্ষা করতে পারবে। এতে বন উজাড় হবে না এবং কৃষিজমি দিন দিন উর্্বরতা শক্তি ফিরে পাবে। এছাড়াও এই প্রযুক্তি ব্যবহারে রাসায়নিক সারের উপর চাপ কমে আসবে এবং কৃষক কম খরচে অধিক ফসল ফলাতে পারবে।
কৃষিক্ষেত্রে বর্তমানে ৮০ ভাগ জমি চাষাবাদ হচ্ছে পাওয়ার টিলার দিয়ে। যার কারণে গ্রামগঞ্জে কৃষকের বাড়িতে গরু পালনের হার অনেক কমে গেছে। একটি বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে প্রতিদিন ৪০ কেজি গোবরের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে ৪-৫টি গরু থাকা প্রয়োজন। বেশিরভাগ কৃষকের বাড়িতে ৪-৫টি গরু নেই। সেদিক বিবেচনা করে আরডিআরএস গোবরের বিকল্প উৎস বের করতে গবেষণা করে একটি বড় ধরনের সাফল্য পেয়েছে। শুধু পচনশীল আবর্জনা (সবজি ও ফলমূলের অবশিষ্টাংশসহ ইত্যাদি পচনশীল দ্রব্য) থেকেও বায়োগ্যাস পাওয়া যায়। গবেষণায় দেখা গেছে ১২০ কেজি এরকম অবর্জনা দিয়েও কোন গোবর ছাড়াই একই পরিমাণ গ্যাস পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি কিছু গোবর এবং কিছু আবর্জনা দিয়েও (যেমন ৩০ কেজি গোবর এবং ৯০ কেজি আবর্জনা) একই পরিমাণ গ্যাস পাওয়া সম্ভব।
কম খরচে বায়োগ্যাস উৎপাদনের আরডিআরএস এর এই উদ্ভাবন বাংলাদেশের প্রত্যন- অঞ্চলের কৃষককে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট বাস-বায়নে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। এই প্রযুক্তি সমপ্রসারণে আরডিআরএস যে কোন সরকারি/বেসরকারি/দাতা সংস্থা/ব্যক্তিকে কারিগরী সহায়তা দিতে প্রস্তুত। আমরা আশা করি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যায় আরডিআরএস উদ্ভাবিত এই মডেল ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
_এম জি নিয়োগী, হেড অব এগ্রিকালচার
আরডিআরএস বাংলাদেশ

সুস্বাদু নতুন ফল 'লনগান'

longan

রসে টই-টুম্বুর, তামাটে রঙ, মাঝারী আকারের, গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে 'লনগান'। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে সবচেয়ে সুস্বাদু ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম 'লনগান' এবার বিজ্ঞানীদের তালিকায় যোগ হল। ১৯টি দেশের ৪২টি বিদেশি ফলগাছের সাথে এবার জাদুঘরে স্থান পেল এ ফলটি। মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে 'লনগান' বাংলাদেশে আসে ১৯৯৭ সালে এবং হাইব্রিড লনগান এসেছে ইন্দোনেশিয়ার বোগর এবং আমেরিকার ফ্লোরিডা থেকে। বাংলাদেশে নিয়ে এসেছেন বাকৃবির অধ্যাপক ও বাউ-জার্মপ্লাজম সেন্টারের পরিচালক ড. এম.এ. রহিম।
ড. রহিম জানান, স্বাদ ও গন্ধে এটি একটি উৎকৃষ্ট ফল। পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু ফলের মধ্যে এটি অন্যতম। যারা খেয়েছেন, তাদের কাছে অত্যন- প্রিয়। এদেশে এ ফলটি সহজেই জন্মে। তারপরও সাধারণ মানুষের কাছে ফলটি নাম এখনো পেঁৗছায়নি। 'লনগান' একটি লিচু পরিবারের ফল। বাংলাদেশের সব জেলাতেই কম-বেশি লিচু চাষ হয়। বিশেষ করে দিনাজপুর, পাবনা জেলার ঈশ্বরদী, রাজশাহী, যশোর, ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে। লনগান এই জেলাগুলোতে বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষ করা যাবে।
ড. রহিম আরো জানান, উন্নত লনগানের ফল তুলনামূলকভাবে ছোট, ১.৫-৩ সে.মি. চওড়া, গোলাকার, চামড়া পাতলা, চামড়ার উপরের অংশ সামান্য খয়েরী-হলুদাভ রঙয়ের, শাঁস ৬০-৭৫ ভাগ এবং বীজের পরিমাণ ৪০-২৫ ভাগ।
খুব অল্প জাতে ২০-৩০ ভাগ বীজ ধারণ করে। ফলের ওজন ২০-৪০ গ্রাম। ফল মাঝারী আকারের, কিঞ্চিৎ চ্যাপ্টা, মিষ্টি, রসালো ও সুমিষ্ট গন্ধযুক্ত। মিষ্টতা ১৫-২৫ ভাগ। বীজের চারদিকে সাদা রঙের নরম, রসালো ও পুরু একটি আবরণ থাকে, যাকে এরিল বলে। এই অংশই আমরা খেয়ে থাকি। সাধারণত একটি বয়স্ক গাছে ৪০-১০০ কেজি ফল পাওয়া যায়।
জার্মপ্লাজম সেন্টারের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শামসুল আলম মিঠু জানান, লনগান ফলে পুষ্টিমান লিচুসহ অন্যান্য অনেক ফলের তুলনায় বেশি। এর প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে রয়েছে প্রোটিন ১ গ্রাম, চর্বি ০.৫ গ্রাম, শর্করা ২৫.২ গ্রাম, অাঁশ ০.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২ গ্রাম, ফসফরাস ৬ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৩ গ্রাম, এসকোরবিক এসিড ৮ গ্রাম, ভিটামিন-এ ২৮ আইইউ। এ ছাড়াও অন্যান্য ভিটামিনসমূহ রয়েছে ০.১১ মিলিগ্রাম। বাংলাদেশে এ ফলের চাষ বাণিজ্যিকভাবে শুরু করলে দেশের একদিকে যেমন ফলের চাহিদা পূরণ হবে তেমনি রফতানি করেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

হলুদ ও মরিচের সাথে তুলা চাষ

মানব সভ্যতার শুরু থেকেই কাপড়ের ব্যবহার হয়ে আসছে। এই কাপড়ের প্রধান উপাদান হল তুলা। তুলা উৎপাদনে বাংলাদেশের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য থাকলেও ঔপনিবেশিক শাসনামলে বিশ্বখ্যাত মসলিনসহ উন্নতমানের বস্ত্র উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের অন্যতম প্রধান এলাকায় তুলাচাষ বিলুপ্ত হয়ে যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের উৎপাদিত পাহাড়ি তুলার অাঁশ খাটো এবং মোটা হওয়ার কারণে তা আধুনিক বস্ত্রশিল্প থেকে বাদ পড়ে। আর সে কারণেই বস্ত্রশিল্প সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর হয়ে পড়ে। স্বাধীনতার পর কাঁচা তুলার অভাবে দেশের বস্ত্রশিল্প মারাত্মক সংকটের মুখোমুখি হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সরকার সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ হিসেবে দেশে আমেরিকান জাতের তুলা চাষের প্রবর্তন ও সমপ্রসারণের জন্য ১৯৭২ সালে তুলা উন্নয়ন বোর্ড গঠন করে। ১৯৯১ সাল থেকে তুলা উন্নয়ন বোর্ড তুলার বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গবেষণা পরিচালনা করে আসছে।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের ৫টি গবেষণা কেন্দ্রে_ প্রজনন, কৃষিতত্ত্ব, মৃত্তিকা বিজ্ঞান, কীটতত্ত্ব ও রোগতত্ত্ব ডিসিপ্লিনে আমেরিকান তুলার ২০টি ও পাহাড়ি তুলার ওপর ১৩টি গবেষণা কার্যক্রম বাস-বায়ন করা হয়েছে। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জোনে মোট ২২টি অন-ফার্ম ট্রায়াল স্থাপন করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে কাঁচা তুলার চাহিদা রয়েছে প্রায় ১৫ লক্ষ বেল। সেখানে দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ১ লক্ষ বেল। বাকি ১৪ লক্ষ বেল দেশের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রতি বছর বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। দেশে উৎপাদিত তুলা দিয়ে এ চাহিদার শতকরা ৭ থেকে ৮ ভাগ পূরণের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তুলা গবেষণা, বীজ উৎপাদন ও বিতরণ, বাজারজাতকরণ ও জিনিং এবং সমপ্রসারণের ব্যাপক কর্মসূচি সরকার গ্রহণ করেছে। আরো আশার কথা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলাতে বর্তমানে সাথী ফসল হিসেবে তুলার চাষ শুরু হয়েছে। তবে উন্নতজাতের হাইব্রিড বীজের দুষপ্রাপ্যতা ও উচ্চমূল্যের কারণে তুলা চাষিরা রীতিমত দিশেহারা।
তুলার বাজারমূল্য নিয়েও তারা শংকিত। এবছর তুলা উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়া জোনের অধীন রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি ও জামালপুর ইউনিটের আওতায় ২৪৭ হেক্টর জমিতে তুলার চাষ হচ্ছে। এর সাথে প্রায় ১১শ' কৃষক সরাসরি সম্পৃক্ত রয়েছে। গত বছর দেশীয় জাতের তুলার আবাদ করে পোকার আক্রমণসহ আশানুরূপ ফলন না পেয়ে অনেকেই এবার নতুন করে হাইব্রিডজাতের তুলার আবাদ শুরু করেছে। চায়না থেকে আমদানিকৃত প্রতি কেজি এ তুলা বীজের বাজারমূল্য প্রায় ২ হাজার টাকা। অথচ সরকারিভাবে সরবরাহকৃত সাধারণ জাতের তুলা বীজের প্রতি কেজি বাজার মূল্য মাত্র ১৫ টাকা। দেশীয় এবং হাইব্রিডজাতের বীজের এই আকাশচুম্বী ব্যবধান ও দুষপ্রাপ্যতার কারণে লাভজনক তুলা চাষে আগ্রহী অনেক চাষিই এখন দিশেহারা।
মরিচ ও হলুদের জমিতে নতুন করে নিড়ানি না দিয়েই বাড়তি কিছু সার প্রয়োগের মাধ্যমে নূ্যনতম খরচে তুলাচাষ করে কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছে। প্রতিবিঘা জমিতে আট থেকে নয় মণ স্থানীয় জাতের তুলার ফলন হলেও একই জমিতে ১৪ থেকে ১৫ মণ হাইব্রিডজাতের তুলার ফলন হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় জাতের তুলনায় হাইব্রিডজাতের তুলার বাজারমূল্যও প্রায় বেশ কয়েক গুণ বেশি। পোকার আক্রমণ নেই বললেই চলে। সব মিলিয়ে পুরাতন তুলা চাষিরা আর কেউই স্থানীয় জাতের তুলা চাষে মোটেই আগ্রহী নয়। তারা ক্রমেই ঝুঁকে পড়ছে হাইব্রিডজাতের তুলা চাষে।
বস্ত্র শিল্পের প্রধান কাঁচামাল যোগানদানকারী ফসল তুলার বীজ হতে তেল ও খৈল, অপরিশোধিত তেল থেকে সাবান তৈরি এবং পরিশোধিত তেল ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহারসহ তুলার বহুবিধ ব্যবহার চাষিদের মধ্যে তুলাচাষে ব্যাপক উৎসাহের সৃষ্টি করেছে।
কুষ্টিয়া জোনের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র দেবনাথ জানান, স্থানীয় জাতের তুলায় পোকামাকড়ের আক্রমণ বেশি। কিন্তু হাইব্রিডজাতের তুলার আবাদ করলে স্পটেড বোল-ওয়ার্ম পোকার আক্রমণ হয় না। ফলে কীটনাশক খরচ কম হয় এবং তুলার ফলন প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ায় চাষিরা হাইব্রিড জাতের তুলা চাষে আগ্রহ ও উৎসাহ দেখাচ্ছে।
এ এলাকায় হলুদ ও মরিচের সাথে সাথী ফসল হিসেবে তুলাচাষ করে চাষিরা ব্যাপকভাবে লাভবান হওয়ায় আগামীতে এখানে চাষাবাদ আরো বাড়বে। একই ধরনের আশাবাদ কৃষকদেরও। তবে তাদের দাবি হাইব্রিড বীজের মূল্য হ্রাস করার পাশাপাশি তুলার বাজারমূল্য দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকায় উন্নীত করা হলে এ অঞ্চলে তুলাচাষ ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়বে।

জৈব পদ্ধতিতে পোকামাকড় দমন

রাসায়নিক বালাইনাশক ও কীটনাশক সব সময়ই ক্ষতিকর। এর বিষক্রিয়া শুধু ক্ষতিকর পোকা ও বালাইকে ধ্বংস করে না; ধ্বংস করে বেশকিছু উপকারী পোকাও। কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় মানুষের দেহে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। অথচ কিছু প্রাকৃতিক দ্রব্য ব্যবহার করে কোন পাশর্্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া আমরা রোগ ও ক্ষতিকর পোকার হাত থেকে রক্ষা করতে পারি আমাদের ক্ষেতের ফসল। এতে খরচ যেমন কম হয় তেমনি সাশ্রয় হয় অর্থেরও।
গাছ সুস্থ রাখতে কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শস্য পর্যায় এবং সম্পূরক ফসলের মিশ্রণের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায়। ক্ষতিকর পোকা দমন করতে পেঁয়াজ, রসুন, পুঁদিনা ইত্যাদির গাছ জমির চারপাশে আবাদ করতে হবে। এতে ক্ষতিকর ফসলের পোকা পেঁয়াজ, রসুন, পুঁদিনা গাছে জমা হয় যা হাতে বা হাতজাল দিয়ে সংগ্রহ করে মেরে ফেলা যায়। তা ছাড়া গাছের রোগাক্রান- অংশ পুড়িয়ে ফেলেও রোগ অনেকাংশে দমন করা সম্ভব।
কাঠ পোড়া ছাই : রান্নার পর চুলার ছাই পোকা দমনে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। যেসব পোকা বুকে ভর করে চলাচল করে তাদের ছাই দিয়ে দমন করা যায়। মূলা, পেঁয়াজ, বাঁধাকপি ও সরিষার মূলে যেসব শুককীট থাকে তা দমনে ছাই খুবই কার্যকর। এ ছাড়া কুমড়ার গোবর পোকা দমন করতে সমপরিমাণ ছাই ও গুঁড়ো করা চুন সাবান পানিতে মিশিয়ে ছিটানো যায়।
ভেষজ উদ্ভিদ : টমেটো গাছের পাতা ও কাণ্ড ক্ষতিকর পোকা দমনে বেশ কার্যকর। এর পাতা ও কাণ্ড সিদ্ধ করার পর পানি ঠাণ্ডা করে ফসলে সপ্রে করলে লেদা, কালো সবুজ মাছি সফলভাবে দমন করা যায়। নিমপাতা উদ্ভিদজাতনাশকের মধ্যে বেশি কার্যকর। বীজ সংরক্ষণ ও আলু গুদামজাত করতে শুকনো নিমপাতা ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া ১ কেজি নিমপাতা ৮ কেজি পানিতে ২০ মিনিট সিদ্ধ করে প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। এতে প্রায় সব ধরনের পোকাই দমন হয়। ল্যানটানা গাছের ডাল পুরোপুরি শুকিয়ে নিয়ে ছাই করে প্রয়োগ করলে গোবর পোকা ও পাতা ছিদ্রকারী পোকা দমন হয়। তামাক গাছ এবং তার ডাটা পানিতে ৪দিন ভিজিয়ে রেখে সপ্রে করলে সুফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া তামাক পাতার সঙ্গে রসুন, পেঁয়াজ এবং পুঁদিনা এক সাথে গুঁড়ো করে এ সবের মিশ্রণ ১:৫০ থেকে ১:১০ অনুপাতে পানির সঙ্গে মিশিয়ে সপ্রে করতে হবে। এতে সব ধরনের ক্ষতিকর পোকা দমন করা সম্ভব। তাছাড়া পেঁয়াজ, রসুন, সরিষা ও মরিচ গাছ একসাথে টুকরো টুকরো করে কেটে পানিতে মিশিয়ে এক সপ্তাহ পচিয়ে তা আক্রান- গাছে প্রয়োগ করলেও সুফল পাওয়া যায়।
দশ শতাংশ ধানের জমিতে ধানের পামরি পোকা দমনের জন্য এক কেজি নিম বীজ দেড় লিটার পানিতে ভিজিয়ে রেখে নির্যাস তৈরি করা যায়। নির্যাস পাতলা ঘনত্বে প্রয়োগ করা উত্তম। দশ কেজি বীজ থেকে তৈরি ১৫ লিটার তরল নিম বীজ নির্যাস আরো ৯০ লিটার পানি যোগ করে এক একর জমিতে সহজে ছিটানো যায়। নির্যাস সপ্রে মেশিনের সাহায্যে পাতায় উভয় প্রান-ে প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
আতা ও শরিফা গাছের বিভিন্ন অংশ কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার হয়ে থাকে। গাছের পাতা, বীজ ও অপরিপক্ক শুকনো ফলের মিহি গুঁড়ো কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। ধানের বাদামি গাছ ফড়িং, ঘাস ফড়িং, সবুজ গান্ধি পোকা, সবুজ পাতা শোষক পোকা ও সাদা পিঠ পাতা শোষক পোকা, আলুর জাপ পোকা, শাক-সবজির জাব পোকা, শসা-কুমড়ার লাল পোকা ও বাঁধাকপির ডায়মন্ড ব্যাকমথ এসব পোকা দমনে এ ফল গাছের অংশসমূহ ব্যবহার করা হয়। কীটনাশক আমাদের মাটির উর্বরাশক্তি কেড়ে নিয়ে জমিকে করে তুলছে অনাবাদি। তাই আমাদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দরকার পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা গ্রহণ।

কুল চাষ

184464_1

কুলের ফলন বিপর্যয়
কম সময়ে কম মুনাফা দিয়ে অধিক লাভবানের জন্য বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষের জুড়ি নেই। এছাড়া বিভিন্ন ফল বাগানের পাশপাশি মিশ্রফল হিসেবে কুলের আবাদ করা যায় বলে দিন দিন এর চাষ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে কুল চাষ লাভজনক হলেও কুলের মৌসুমে চাষিরা হতাশ। কোন কোন কুল গাছে ফুল অসেনি, কোথাও ফুল এসে ফল আসেনি, এমনি নানা সমস্যার কারণে এবার ফলন ৫০ ভাগ কম হতে পারে বলে মনে করছেন চাষিরা। বিশেষজ্ঞরা ফলন কম হওয়ার জন্য চারটি কারণকে দায়ী করেছেন_
আগাম ডাল ছাঁটাই : মৌসুমে কুল না আসার কারণে কুল চাষিরা সাধারণত ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই অধিকাংশ কুল গাছের ডাল ছাঁটাই করেন। ফলে দেখা যায়, ডাল কাটার পর যে নতুন শাখা বের হয় সেগুলোর বয়স ছয় মাসের বেশি হয়ে যায়। এতে শাখা-প্রশাখার বৃদ্ধি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পুরানো শাখা-প্রশাখা প্রতিটি পত্রকক্ষে কম পরিমাণে ফুল আসে। গবেষণার ফলাফল হতে দেখা গেছে, কুল গাছের ৯৮% ফুল আসে নতুন ডগায় আর মাত্র ২% ফুল আসে পুরাতন শাখায়। সুতরাং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ডাল ছাঁটাই করতে হবে। তবে এপ্রিল মাসেও ডাল ছাঁটায়ের কাজ করা যায়। একটি কথা মনে রাখতে হবে, কুল গাছে কুল আসুক বা না
আসুক নির্দিষ্ট সময়েই গাছের ডাল ছাঁটাই করতে হবে অথবা কুল সংগ্রহের পর কুল গাছে নতুন পাতা বের হওয়ার আগেই ডাল ছাঁটায়ের কাজ শেষ করতে হবে।
সুষম সার প্রয়োগ : আমাদের দেশে জন্মানো গুটি জাতগুলো কোন রকম যত্ন ছাড়াই আশানুরূপ ফলন দিয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদকৃত উচ্চফলনশীল আপেল কুল, বাউকুল, থাইকুল, বারি কুল-১, বারি কুল-২, কুমিল্লা কুল, খুরমা কুল, ঢাকা-৯০ ইত্যাদি জাতগুলোর ফলন সুষম সার ব্যবস্থপনার উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ সুষম সার ব্যবস্থাপনা ছাড়া এ জাতগুলোর আশানুরূপ ফলন পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু কুল চাষিরা তাদের কুল বাগানে অসম ও অপর্যাপ্ত সার ব্যবহার করে থাকেন। ফলে কুলের ফলন মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। অন্যান্য ফলগাছের মত কুলগাছে সাধারণত জৈব সার, ইউরিয়া সার, ট্রিপল সুপার ফসফেট, মিউরিয়েট অব পটাশ, জিপসাম, জিংক সালফেট ও বোরণ সারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু অধিকাংশ কুলচাষিরা ইউরিয়া সার, ট্রিপল সুপার ফসফেট, মিউরিয়েট অব পটাশ এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে গোবর সার ও বোরণ সার ব্যবহার করে থাকেন। ফলে প্রতি বছরই আশনুরূপ ফলন হতে তারা বঞ্চিত হন। সার প্রয়োগের পর প্রয়োজন হলে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
ফুল ফুটন- অবস্থায় কীটনাশক সপ্রে : কুলের পরাগায়ণ বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ দ্বারা সম্পন্ন হয়। কুলগাছে ফুল ফোটা হতে শুরু করে শেষ হতে ৪৫-৬০ দিন পর্যন- সময় লাগে। এ সময় কুল বাগানে বিভিন্ন ধরনের মৌমাছি, মাছি, পিঁপড়াপ্রজাপতিসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গ আসে। এ সমস- কীটপতঙ্গ ফুলের পরাগায়ণের সহায়ক হিসেবে কাজ করে থাকে। এ সময়ে কুল বাগানে কোন ধরনের কীটনাশক সপ্রে করা উচিত না। তবে সুনির্দিষ্ট কিছু সমস্যার জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী বিকেল বেলায় সপ্রে করা যেতে পারে। কিন্তু কুল চাষিরা ফুল ফুটন- অবস্থায় ২-৩ বার বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক সপ্রে করে থাকেন ফলে পরাগায়ণ হয় না।
আবহাওয়াগত কারণ : কুলগাছে ফুল ফুটন- অবস্থায় উচ্চতাপমাত্রা, অতিবৃষ্টি, দিন-রাতের তাপমাত্রার তারতম্যে বেশি কুল হয় না। ফলে স্থানভেদে কুলের ফলনের তারতম্য হয়ে থাকে।
সঠিক সময় সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অবশ্যই আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে।
_মোঃ শরফ উদ্দিন (রাজন), বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা,
আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

স্ট্রবেরি চাষ

স্ট্রবেরি একটি রসালো ও সুস্বাদু ফল। এর গাছ দেখতে অনেকটা থানকুনি ও আলু গাছের মত। তবে পাতা আরো বড় ও চওড়া। এটি থানকুনি গাছের মতই রানারের মাধ্যমে চারা চারদিকে ছড়াতে থাকে। পাশ থেকে বের হওয়া পরিণত রানার কেটে আলাদা লাগিয়ে স্ট্রবেরির চাষ করা হয়। বর্তমানে এর বীজও পাওয়া যাচ্ছে।
স্ট্রবেরি শীতপ্রধান দেশের ফল। বেশি তাপমাত্রার কারণে বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন- এ গাছ বাঁচিয়ে রাখা খুব কঠিন। কাঁচা স্ট্রবেরি ফল দেখতে সবুজ হলেও পাকা অবস্থায় টকটকে লাল রঙের হয়। ফলটি দেখতে অনেকটা লিচুর মত এবং নানা পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। এখন বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় স্ট্রবেরির বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে। এটি একটি লাভজনক ফসল হিসেবে সারাদেশে পরিচিতি লাভ করেছে।
বাংলাদেশ স্ট্রবেরি এ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, গত বছর আকাফুজি এগ্রোটেকনলজি রাজশাহীতে, গোল্ডেন সিড্স যশোরে, এলাইড এগ্রো পঞ্চগড়ে, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল লালমনির হাটে, নর্থ ফিল্ড বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরির চাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে। এবারো এসব প্রতিষ্ঠান প্রায় তিন শতাধিক বিঘা জমিতে স্ট্রবেরির চাষ করেছে। পঞ্চগড়ে এ্যাড. রায়হানুল হক ২৪ হাজার, টাঙ্গাইলের মধুপুরে সাদিকুর রহমান সুমন ও শামীম আহম্মেদ ২২ হাজার, গাইবান্ধার শংকর ১০ হাজার, দিনাজপুরের আল আমিন ৬ হাজার, ঝিনাইদহের আবুল বাসার ১৫ হাজার, সৈয়দপুরে আলহাজ্ব উদ্দিন সরকার ১৭ হাজার স্ট্রবেরির চারা লাগিয়ে উৎপাদন করছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম. মুনজুর হোসেন স্ট্রবেরি চাষের কথায় বলেন। তিনি ১৯৯৬ সালে জাপান থেকে একটি স্বল্প দিবা দৈর্ঘ্য জাতের স্ট্রবেরি বাংলাদেশে আবাদের চেষ্টা করেন। কিন্তু এই জাতটি তখন রানারের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করেনি। এমনকি তখন যে ফল ধরেছিল তা ছিল আকারে অনেক ছোট, যা বাণিজ্যিকভাবে চাষের উপযোগী ছিল না। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে অবস্থিত টিসু্য কালচার ল্যাবে গত কয়েক বছর ধরে গবেষণার মাধ্যমে একটি জাত উদ্ভাবনে সক্ষম হন যা বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে।
অধ্যাপক ড. এম. মুনজুর হোসেন গত ৫ বছর ধরে রাজশাহী মহানগরী পদ্মা আবাসিক এলাকার নামোভদ্রায় আকাফুজি নার্সারিতে স্ট্রবেরির সফলভাবে চাষ করে আসছেন। এ বছর তিনি প্রায় ১০ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরির চাষ করেছেন। এবার তিনি স্ট্রবেরি এ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় চারা সরবরাহ করেছেন। বাংলাদেশের সব এলাকার সব মাটিতেই স্ট্রবেরি চাষ সম্ভব বলে প্রমাণিত হয়েছে। একবিঘা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করলে খরচ হয় প্রায় এক লাখ টাকা এবং ছয় মাসে আয় হয় প্রায় চার লাখ টাকা বলে একজন স্ট্রবেরি চাষি জানান।
ঢাকার বিভিন্ন সুপার মার্কেটগুলোতে বিদেশ থেকে আমদানি হয়ে আসা স্ট্রবেরি পাওয়া যায় এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা কেজি দরে। স্ট্রবেরি চাষিদের জন্য এখন বাজার তৈরি হয়েছে। সহজে বাজারজাত করতে পারছে তারা। এবার মাঠ পর্যায়ে প্রতিকেজি স্ট্রবেরির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে চার'শ টাকা থেকে পাঁচ'শ টাকা। বাংলাদেশ স্ট্রবেরি এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ড. একেএম রফিউল ইসলাম বলেন, স্ট্রবেরি এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ২শ' ১০জন। এই সম্মেলনে সদস্য সংখ্যা আরো বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী।
স্ট্রবেরি লাভজনক ফসল হওয়ায় বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি এর চাষ করে শত শত কৃষক ও বেকার যুবক স্বাবলম্বী হচ্ছে। আগামীতে আমাদের দেশে স্ট্রবেরির জুস, জ্যাম, জেলি, আচার তৈরির কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে বলে তিনি মনে করেন।

হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশবান্ধব তালগাছ

tal 1

আবহমান বাংলার ঐতিহ্য পরিবেশবান্ধব তালগাছ চাষ করে চিনির আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে আনা সম্ভব। এতে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। ১০-১৫ বছর বয়স থেকে শুরু করে ৯০-১০০ বছর তালগাছ রস দিয়ে থাকে। এ রস খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু। জ্বাল দিয়ে উৎকৃষ্টমানের পাটালিগুড় ও মিছরি তৈরি করা যায়_ যা চিনির বিকল্প হিসেবে অত্যন- জনপ্রিয়। পাটালি গুড় ও মিছরি উৎপাদন করে একটি শিল্প সৃষ্টির মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলে বহু বেকারের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে তালগাছ।
আমাদের দেশে সাধারণত দু'ধরনের তালগাছ দেখা যায়। গাছ স্ত্রী কিংবা পুরুষ প্রজাতির হয় এবং উভয় গাছই রস দেয়। তবে স্ত্রী প্রজাতির গাছে তাল এবং পুরুষ প্রজাতির গাছে তালের পরিবর্তে লম্বা গোলাকার এক প্রকার ছড়া বের হয়। যাকে স্থানীয় ভাষায় জট বলা হয়। প্রতিটি জট ও মোচা বিশেষ পদ্ধতিতে কেটে রস সংগ্রহ করা হয়।
পরিবেশ ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তালগাছ রোপণ করা খুবই লাভজনক। এটি গুচ্ছমূলী বৃক্ষ বিধায় মাটি আটকিয়ে রেখে ভাঙন ও ভূমিক্ষয় রোধ করা ছাড়াও ঝড়-বৃষ্টি থেকে বাড়িকে রক্ষা করতে পারে। সহজ রোপণ প্রক্রিয়া, বিনা যত্নে উৎপাদন এবং বৃদ্ধির কারণে গ্রামীণ সড়ক, মহাসড়ক, বেড়িবাঁধ, জমির আইলে, অনাবাদি জমিতে তালগাছ রোপণ করা যায়। বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আবাদি জমিতে অন্যান্য সাধারণ প্রজাতির গাছ রোপণ করা না গেলেও তালগাছ খুব সহজেই রোপণ করা যায়। কারণ, তালগাছ ঊধর্্বমুখী বলে এটি খুব বেশি জায়গা দখল করে না। এর কোনা শাখা-প্রশাখা নেই বিধায় আবাদযোগ্য জমিতে আলো-বাতাস প্রবেশে বাধার সৃষ্টি করে না।
তালগাছ দীর্ঘজীবি উদ্ভিদের মধ্যে অন্যতম। গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে অন্যরকম কদর রয়েছে মৌসুমী ফল তালের। একটি পূর্ণবয়স্ক তালগাছ গড়ে ৮০০ থেকে এক হাজার ফল দিয়ে থাকে। কাঁচা ও পাকা উভয় তালই বাঙালির প্রিয়। কাঁচা তালের শাঁস অত্যন- মুখরোচক। তালের রস ও পাকা তাল দিয়ে তৈরি হয় পিঠা, পায়েস, বড়া। পাকা তালের শাঁস খেতেও বেশ মজার। তালগাছ এমনই এক বৃক্ষ, যার সব অংশই কোন না কোন কাজে লাগে। তালপাতা দিয়ে সুন্দর হাতপাখা, পাতার শির দিয়ে টুপিসহ বিভিন্ন ধরনের হস-শিল্প তৈরি করা যায়। তালগাছের কাঠ অত্যন- শক্ত ও মজবুত হওয়ায় ঘর তৈরির খুঁটি, আড়া, রুয়া, বাটাম, কৃষকের লাঙলের ঈষ ও ডিঙ্গি নৌকা তৈরি করা হয়। ঘরের ছাউনি, ঝুঁড়ি, মাদুর এবং জ্বালানি হিসেবেও শুকনা তালপাতা ব্যবহৃত হয়।
আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে সারা দেশে হাজারো গাছের মধ্যে তালগাছ সারি বেঁধে আকাশে উঁকি মেরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যেত। কালের আবর্তে তালগাছ বর্তমানে অনেকটাই অস-িত্ব সংকটে পড়েছে। বৃক্ষ রোপণ অভিযানকালে আমরা অন্যান্য গাছ লাগালেও তালগাছকে এড়িয়ে যাই। অপরিকল্পিতভাবে তালগাছ কাটা এবং যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এখন আর মাঠের ধারে ও গ্রামীণ পথের পাশে সারি সারি তালগাছ চোখে পড়ে না। চোখে পড়ে না তালগাছে বাবুই পাখির বাসা বাঁধার মনকাড়া সেই দৃশ্য।
চৈত্র-বৈশাখ মাসে তালগাছ থেকে সুঘ্রাণ রস নিঃসৃত হয়। প্রতিটি গাছ থেকে দিনে ৩ বার রস সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি গাছের রস থেকে দিনে ২ কেজি গুড় পাওয়া যায়। অযত্নে অবহেলায় বেড়ে উঠলেও তালগাছ খাদ্য ও পুষ্টিসহ নানাভাবে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করে আসছে।
পরিকল্পিতভাবে তালগাছের বনায়ন এবং পরিচর্যা করা গেলে যে পরিমাণ রস পাওয়া যাবে তা দিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে চিনি উৎপাদন করতে পারলে বিদেশ থেকে চিনি আমদানি কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা যাবে।

সোলার ড্রায়ার স্বাস্থ্যকর শুঁটকির উৎস

shutki 1

পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রতিরোধের জন্য দেশে উৎপাদিত অধিকাংশ শুঁটকিতে ক্ষতিকর কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। কীটনাশকযুক্ত এসব শুঁটকি খেলে মানুষের কিডনী ও লিভারসহ নানা জটিল অসুখে আক্রান- হয়। শুঁটকি তৈরির জন্য অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত। ইউএনডিপির অর্থায়নে এফএও পরিচালিত 'উপকূলীয় মৎস্যজীবী সমপ্রদায়ের জীবিকার নিরাপত্তার জন্য ক্ষমতায়ন" প্রকল্পের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যসম্মত শুঁটকি তৈরির জন্য দেশের গরিব জেলে ও মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকারীদের চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রেখে স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য দ্রব্যাদি ব্যবহার করে খুব কম খরচে উন্নত সোলার ড্রাইং পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
নকশার উন্নয়ন ঘটিয়ে সৌরসেল দিয়ে পাখা ঘুরিয়ে বাতাস প্রবাহের পরিবর্তে প্রাকৃতিক বায়ুপ্রবাহ সঞ্চালনের মাধ্যমে ড্রায়ারটিকে কার্যকরী করা হয়েছে। বিশেষ ডিজাইন ও ঢালের জন্য সূর্যালোক অধিক তারে প্রতিসরিত হওয়ায় ভেতরে তাপ বেড়েছে। আবার আকার ছোট ও দুইপ্রান- খোলা (মশারি জাল দিয়ে ঢেকে) রেখে বায়ুপ্রবাহের বিপরীতে স্থাপন করায় প্রাকৃতিক বায়ুপ্রবাহ স্বতঃস্ফূর্তভাবে চলাচলের মাধ্যমে ড্রায়ারের আপেক্ষিক আদ্রর্তা ও তাপমাত্রা কার্যকরী সীমার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে। এ সব সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ফলে নতুন সোলার ড্রায়ারটি দিয়ে আগের অন্যান্য সোলার ড্রায়ারের অসুবিধাগুলো কাটিয়ে উঠে উন্নতমানের শুঁটকি উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে। স্বল্প ব্যয়সাপেক্ষ ও কার্যকরী বলে নতুন পদ্ধতিটি প্রকল্প এলাকার মাঠ পর্যায়ে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং ইতিমধ্যে ক্ষুদ্রমৎস্য প্রক্রিয়াজাতকারীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
ইসিএফসি প্রকল্পের পক্ষ থেকে স্থানীয়ভাবে সহজলভ্য দ্রব্যাদি ব্যবহার করে অত্যন- কম খরচে উদ্ভাবিত সোলার ড্রায়ার মডেলটি ইতিমধ্যে কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চলের জেলে সমপ্রদায়ের মাঝে বেশি জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। নতুন সোলার ড্রায়ারটি গাছের/কাঠের খুঁটির উপর ৩ ফুট উচ্চতায় ৪ ফুট চওড়া ও ২০ ফুট লম্বা একটি বাঁশের বিশেষ মাচার ওপর ৩.৫ ফুট চওড়া ও ২০ ফুট লম্বা (প্রস-াচ্ছেদে ত্রিকোণাকার) একটি টানেল স্থাপন করা হয়েছে। টানেলটির ভূমি-সনি্নহিত খাড়া বাহুটি ১.৬ ফুট উঁচু। অতিভূজটি ৭৫০ কোণ করে খাড়া বাহুর সঙ্গে এবং ২৪-২৫০ কোণ করে ভূমির সঙ্গে ১.২.৫ ঢালে যুক্ত রয়েছে।
টানেলসহ মাচাটি মাটির ওপর আলগা করে বসানো যাতে বাতাসের প্রবাহ অনুযায়ী ঘুরানো যায়।
শীতকালে টানেলটি উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বমুখী করে স্থাপন করলে দীর্ঘক্ষণ অধিক সূর্যালোক গ্রহণ করে বেশি তাপ তৈরি করা যাবে। পাশাপাশি প্রাকৃতিক বায়ুপ্রবাহের বিপরীতে স্থাপিত হওয়ার ভেতরে বায়ু সঞ্চালনও বাড়বে। তাপ সৃষ্টির জন্য মাচার উপর ৪ ফুট বাই ৪ফুট আকৃতির একটি স্টিলের পাতা কালো রঙ করে টানেলের একপ্রান-ে স্থাপন করা হয়েছে। বাকি ১৬ ফুট জায়গা মাছ শুকানোর জন্য বাঁশের চাটাই দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে। টানেলটির তলাসহ চারপাশ একপ্রস- মোটা পলিথিন শিট দিয়ে ঢাকা যাতে ভেতরের তাপ বের হতে না পারে এবং মাছি ও পোকামাকড় ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। তবে দুই প্রাপ্ত উন্মুক্ত রেখে মশারি জাল বেঁধে দেয়া হয়েছে যাতে একপ্রান- দিয়ে বাতাস ঢুকে ভেতরের গরম বাতাস অন্যপ্রান- দিয়ে বের করে নিতে পারে। মাচাসহ টানেলটি মাটির উপর আলগা করে বসানো থাকলেও দুই প্রান-ের খুঁটিগুলো অতিরিক্ত খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মাটিতে গেঁথে দেয়া হয়েছে যাতে ঝড়ে উপড়ে না পড়ে।
২০ ফুট লম্বা ও ৪ ফুট চওড়া এ রকম একটি সোলার ড্রায়ার তৈরি করতে খরচ হয় ২০০০ টাকা। একটি ড্রায়ারে একসঙ্গে ৫০ কেজি কাঁচা মাছ শুকানো যায়। এ রকম তিনটি ড্রায়ার একের পর এক বাতাসের প্রবাহমুখী রেখে একসঙ্গে ১৫০ কেজি মাছ শুকিয়ে ৩৭-৪০ কেজি শুঁটকি উৎপাদন করা সম্ভব। একবার তৈরি করলে ড্রায়ারগুলো তিনবছর টিকবে। শুঁটকি তৈরির সময়কাল মাছের আকার ও পুরুত্বের ওপর নির্ভরশীল। বড় আকারের রূপচান্দা ও দুরি ৩ দিনে এবং লইট্টা ২ দিনে শুকানো যায়।
কক্সবাজারের চকরিয়ার লক্ষ্মারচর জালিয়াপাড়া গ্রামের আশ্রাব আলী ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যের দু'টি সোলার ড্রায়ার পাশাপাশি ব্যবহার করে প্রতি ৩ দিনে ৪০ কেজি উন্নতমানের কীটনাশকমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন করছেন। উৎপাদিত ৪০ কেজি শুঁটকি থেকে তার মুনাফা আসছে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। প্রতিমাসে কমপক্ষে চারটি উৎপাদন করে ৩২০০ থেকে ৪০০০ টাকা আয় করছেন।
_জাহেদুল আলম রুবেল,
কৃষিবিদ, ঢাকা

করলা

korola1

করলা একটি পুষ্টিকর সবজি। পাশাপাশি ওষুধের কাজও করে থাকে। বিশষ করে ভিটামিনের অভাব, গুঁড়া কৃমিতে, বাতের ব্যথাতে, বিষাক্ত ক্ষতে, রক্তপিত্তে ও অরুচিতে করলা খুবই উপকারি।
করলা চাষে উর্বর বেলে দো-অাঁশ মাটির প্রয়োজন হয়। এছাড়া পলি দো-অাঁশ ও দো-অাঁশ মাটিতেও করলা ভাল জন্মে।
করলা চাষের সময় সাধারণত অক্টোবর-নভেম্বর ও নভেম্বর_ ফেব্রুয়ারি মাস।
করলা চাষের জমিতে ৩/৪ বার আড়াআড়িভাবে চাষ এবং মই দিয়ে ঝুরঝুরে করতে হবে। প্রতি মাদার দূরত্বে ১০০ সে. মি. প্রস্থে ৪৫ সে.মি এবং গভীরতায় ৩০ সে. মি. হতে হবে। প্রতি মাদায় ৫ কেজি গোবর বা পচা আবর্জনা সার, ৫০ গ্রাম টিএসপি ও ৩০ গ্রাম এমপি সার মাদার মাটির সঙ্গে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সার প্রয়োগের ৭ দিন পর প্রতি মাদায় ৩/৪টি সতেজ ও পুষ্টবীজ ২ থেকে ৩ সে.মি গভীরে বপন করতে হবে। বীজের আবরণ শক্ত বলে চারা বের হতে দেরী হবে। তাই তাড়াতাড়ি চারা গজানোর জন্য বীজ ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়। পানি থেকে তুলে বীজের আবরণ না ফাটা পর্যন- একটি ভেজা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। বীজের আবরণ ফাটার পর বীজ মাদায় বপন করতে হয়। প্রতি হেক্টরে ৪ থেকে ৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।
করলার চারা ৮ থেকে ১০ সে. মি. বড় হলে প্রতি মাদায় ২টি সুস্থ-সবল চারা রেখে বাকিগুলো তুলে ফেলতে হবে। চারা গজানোর ২ সপ্তাহ পর ১ম, ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ পর ২য় এবং ৭ থেকে ৮ সপ্তাহ পর ৩য় কিস-িতে প্রতিবার ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রতি কিস-িতে গাছের গোড়ার চারপাশে প্রয়োগ করতে হয়। উপরি প্রয়োগ করে মাটির সঙ্গে ভাল করে মিশিয়ে দিতে হবে। গাছের ফুল ও ফল ধরা শুরু হলে জমিতে খড় বিছিয়ে দিতে হয়। এতে মাটির রস তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যেতে পারে না। ফলনও ভাল হয়। তাছাড়া নিয়মিত নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার এবং মাঝে মাঝে মাটি কুপিয়ে আলগা করে গাছের গোড়ায় মাটি দিয়ে উঁচু করে দিতে হবে। এতে সারির মাঝে নালা হয় এবং সহজে বর্ষার পানি নিষ্কাশিত হয়।
পোকা-মাকড়ের মধ্যে মাজরা পোকা, মাছি পোকা, জাব পোকা ক্ষতি করে। রোগের মধ্যে পাউডারি মিলডিউ ও ডাউনি মিলডিউ করলার বেশ ক্ষতি করে। এসব রোগ ও পোকামাকড় দমনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
করলা বীজ বপনের ৪০ থেকে ৪৫ দিন পর গাছে ফুল আসতে শুরু করে এবং এর ১৫ থেকে ২০ দিন পর ফসল সংগ্রহ শুরু হয়। কচি অবস্থায় বীজ শক্ত হবার আগেই জমি থেকে ২ দিন পর পর ফসল সংগ্রহ করতে হয়। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করে হেক্টরপ্রতি ৫ থেকে ৬ টন করলা পাওয়া যায়।
দেশের প্রায় সব জেলাতেই করলার কম-বেশি আবাদ হয়ে থাকে। পুষ্টিকর এই সবজিটি আমাদের দেশে ভাজি হিসেবেই সুপরিচিত।

পামচাষ বাড়ছে রাজবাড়িতে

pam 1

পাম অয়েল একটি বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ। রোপণের তিন থেকে চার বছরের মধ্যেই এই উদ্ভিদে ফলন শুরম্ন হয়। ২৫ থেকে ৩০ বছর পর্যনত্ম ফলন দেয়। পাম অয়েল গাছ চাষ করে প্রতিবছর হেক্টরপ্রতি আমাদের দেশে সর্বোচ্চ ১০ টন ভোজ্য তেল পাওয়া যায়। মালয়েশিয়ায় একটি কাঁদি থেকে ২০ থেকে ৩০ কেজি পাম ফল পাওয়া যায় আর আমাদের সংগৃহীত প্রতিটি কাঁদি থেকে ৭০ থেকে ৮০ কেজি ফল পাওয়া যায়। বাণিজ্যিকভাবে চাষকৃত যে কোন ভোজ্য তেলের ফসল থেকে প্রাপ্ত তেল অপেক্ষা ১০ থেকে ১৫ গুণ বেশি।
পাহাড়ি, চরাঞ্চল এবং সমতল ভূমি ও বাড়ির উঠোনেও পাম অয়েল গাছ চাষ করা যায়। এই গাছ বন্যার পানিতে মরে না। পাম অয়েল গাছ চাষ করতে তেমন রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় না। বীজ হতে চারা উৎপাদন করতে প্রায় এক বছর সময় লাগে। চারা থেকে ফল পেতে সময় লাগে তিন হতে চার বছর। পাম ফল থেকে পাম অয়েল আহরণের সময় যে পুষ্টি সমৃদ্ধ পুনঃ ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য পাওয়া যায় তাই পাম অয়েল বাগানে সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। রাসায়নিক সার কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস করার জন্য পাম অয়েল উদ্ভিদ বালাই নিয়ন্ত্রণের কাজে জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। শিল্পের গবেষণা ও উন্নয়ন উদ্ভূদ দু'টি ধারণা যথা শূন্য বর্জ্য ও শূন্য দহন এখন ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। শূন্য বর্জ্যের প্রতি অঙ্গীকারের ফলশ্রম্নতিতে পাম অয়েল গাছের পাতা, গুঁড়ি, ফলের শূন্য কাঁদি ব্যবহার করে নতুন নতুন দ্রব্য উৎপন্ন করা হচ্ছে। শূন্য দহন ধারণার কার্যকর প্রয়োগ হচ্ছে পুরানো পাম গাছগুলোরকে না পুড়িয়ে খ- খ- করে চাষের জমিতে পচিয়ে মিশিয়ে দেয়া যায় ফলে দূষণ পরিহার করা সম্ভব হচ্ছে ও উদ্ভিদের পুষ্টি পদার্থ মাটিতে ফিরিয়ে দেয়। পাতা জমিতে সার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। পাম গাছের ১ টন শুকনো পাতা মাটিতে ৭.৫ কেজি নাইট্রোজেন, ১.০৬ কেজি ফসফরাস, ৯.৮১ কেজি পটাশিয়াম ও ২.৭৯ কেজি ম্যাগনেসিয়াম ফিরিয়ে দেয়। গুঁড়ি থেকে চমৎকার আসবাবপত্র তৈরি করা সম্ভব। আমাদের দেশে সাধারণত ঘরোয়াভাবে পানিতে পাকা পাম ফল সিদ্ধ করে হাত দিয়ে চিপন দিলে রস বের করে তেল তৈরি করে। সেই রসে পানি মেশানো হয়। এরপর পানি মেশানো তেল জ্বাল দিলে পানি বাষ্প হয়ে তেল থেকে যায়।
পাম-অয়েল পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ বহুমুখী ব্যবহৃত একটি তেল। অন্যান্য তেলের চেয়ে এ তেলটি কোলেস্টেরলমুক্ত, সহজপাচ্য ও শরীরের শক্তি
যোগানদার হিসেবে কাজ করে থাকে। পাম অয়েলে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং উচ্চ তাপমাত্রায় এর চমৎকার স্থায়িত্ব থাকায় ডিপ ফাইয়ের কাজে অত্যনত্ম উপযোগী।
আমাদের দেশের মাটি পাম চাষের জন্য অনুকূল। যে কোন জেলাতে পাম চাষ করা সম্ভব। দেশের বিভিন্ন জেলাতে সরকারিভাবে গ্রহণ করা হয়েছে পামচাষের কার্যক্রম। তার মধ্যে রাজবাড়ী জেলা অন্যতম। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর উদ্যোগে ব্যাপকভাবে পাম চাষ শুরম্ন হয়েছে। সমপ্রতি রাজবাড়ী এলজিইডি অফিস চত্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে পাম গাছের চারা রোপণের মধ্য দিয়ে নতুন বছরের
সমপ্রসারণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল কুদ্দুস ম-ল। এলজিইডির রম্নরাল এমপ্লয়মেন্ট এন্ড রোড মেইনটেনেন্স প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে জেলা সদরের দাদশী ইউপি'র শ্রীপুর বাজার থেকে বেড়াডাঙ্গা ১ নং সড়ক, পাংশা উপজেলার মাঝবাড়ী ইউপির চাঁদপুর ব্রিজ হতে খামারবাড়ি সড়ক, বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউপির আড়কান্দি সড়ক এবং গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউপির বেড়ীবাঁধ হতে হারেজ মিয়ার পাড়া রাসত্মায় চারশ' পাম অয়েল চারা রোপণ করা হয়েছে। এ বছর গ্রামীণ সড়কের পাশে নতুন করে আরো দুশ' পাম চারা রোপণের কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও শোভা বর্ধন এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার পাশাপাশি ভোজ্য তেলের চাহিদাও অনেকখানি পূরণ হবে।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছে, জেলার ৪টি উপজেলায় ইতিমধ্যে রোপণকৃত চারশ' পাম অয়েল গাছ থেকে বছরে ১৬ হাজার কেজি পাম তেল উৎপাদিত হবে। গ্রামীণ সড়কের পাশে রোপণকৃত এসব গাছ তদারকির জন্য এলজিইডির তত্ত্বাবধানে দৈনিক পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে মহিলা শ্রমিক নিয়োগ করা হয়েছে। প্রকল্পের অধীন ৫ বছরের চুক্তিতে প্রতিটি ইউনিয়নে ১০ জন করে জেলার ৪২টি ইউনিয়নে ৪২০ জন নারী শ্রমিককে এ কর্মসূচির সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এদের দৈনিক পারিশ্রমিক থেকে সঞ্চিত অর্থ সংগ্রহ করে মেয়াদানত্মে প্রত্যেককে ৭৫ হাজার টাকা প্রদান করা হবে। এর ফলে কর্ম সংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি দারিদ্র বিমোচনে উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হবে।

স্ট্রবেরির গোড়াপচা রোগ

strawberry 1

লাল টুকটুকে, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল স্ট্রবেরি। ২০০৭ সাল থেকে বাণিজ্যিকভিত্তিতে চাষ শুরম্ন হয় আমাদের দেশে। কিন্তু গত বছর সারাদেশে চাষকৃত প্রায় ৮৫ শতাংশ স্ট্রবেরি গাছ মড়ক লেগে মারা গেছে। টাকার অংকে যার ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় হেক্টরে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা।
গত বছরে অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় চারা রোপণ করার কিছুদিন পরই দেখা দেয় অজ্ঞাত এক রোগ। পরে এ রোগটি ব্যাপক আকারে দেশের চাষকৃত বিভিন্ন স্ট্রবেরির বাগানে ছড়িয়ে পড়ে। সারাদেশে চাষকৃত স্ট্রবেরির ৬০ থেকে ৮৫ ভাগ এ রোগে আক্রানত্ম হয়। কৃষক পড়ে ৰতির মুখে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি বিশেষজ্ঞরা প্রত্যক্ষভাবে রংপুর, লালমনিরহাট, হাতিবান্দা, কালিগঞ্জের বিভিন্ন নার্সারিতে এই রোগটি পর্যবেক্ষণ এবং নমুনা সংগ্রহ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পস্ন্যান্ট ডিজিস ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে এটিকে গোড়াপচা রোগ বলে অভিহিত করেন।
রংপুরের ঈশ্বরপুরে প্রায় ৮৫ ভাগ, হাতিবান্দায় ৬০ ভাগ, কালিগঞ্জে ৪০ ভাগ, মুক্তাগাছায় ৫০ ভাগ এবং রাজশাহীতে ৬৬ ভাগ স্ট্রবেরি গাছ এই রোগে মারা যায়। টিসু্য কালচার করার সময় সবধরনের সতর্কতা সঠিকভাবে অবলম্বন করা হয়নি বলেই এই রোগ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গোড়াপচা রোগ প্রতিকারের জন্য, প্রথমে সেপানীল ০.১ ভাগ সপ্রে করতে হবে। সেপানীল প্রয়োগের দুই দিন পর ১ মণ ছাই, ১ কেজি পটাশ সার, ১/২ কেজি রিডোমিল মিশিয়ে গাছের গোড়ায় ১ মুঠো করে দিতে হবে। এর সাথে আইপিএম ল্যাব, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কতর্ৃক উদ্ভাবিত ঞৎরপযড়ফবৎসধ বায়োপেস্টিসাইড প্রতি গাছের গোড়ায় ১০ গ্রাম করে দিলেও প্রতিকার পাওয়া যাবে। _আব্দুস সালাম সাগর, বাকৃবি, ময়মনসিংহ

যেভাবে বাড়াতে পারেন আমের ফলন

mango2

আম একটি জনপ্রিয় ফল। স্বাদ, গন্ধ, পুষ্টিমানে আমাদের দেশের সবার কাছে ফলটির খুবই সমাদর রয়েছে। এজন্য আমকে বলা হয় ফলের রাজা। দেশের সব জেলাগুলোতেই আমের কম বেশি ফলন লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু ফলটি চাষাবাদে চাষিকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। আমাদের চারপাশের আমের বাগান বা বাড়ির আঙিনার গাছটির দিকে তাকালে বুঝতে পারি আমের মৌসুম শুরম্ন হয়ে গেছে। আম গাছগুলোতে মুকুল ও কিছু কিছু এলাকার আমের গুটিও এসে গেছে। এই সময় গাছের সঠিক পরিচর্যা ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা না নিলে ফলন হ্রাস পেতে পারে।
আমের মৌসুমে আম চাষিদের করণীয় বিষয় নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব্ব গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ শরফ উদ্দিন (রাজন) এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আম চাষাবাদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার কথা। এরমধ্যে বিভিন্ন রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ উলেস্নখযোগ্য।
হপার বা ফুতকি পোকা : আম বাগানে মুকুল বা পুষ্পমঞ্জুরী বের হওয়ার আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ দিন পূর্বে সাইপারমেথ্রিন অথবা কার্বারিল গ্রম্নপের যেকোন কীটনাশক দিয়ে ভালভাবে সমসত্ম গাছ ধুয়ে দিতে হবে। সেক্ষেত্রে গাছে বসবাসকারী হপার বা শোষক পোকাসহ অন্যান্য পোকার আক্রমণ হতে রক্ষা পাওয়া যাবে। হপার পোকা অন্ধকার বা বেশি ছায়াযুক্ত স্থান পছন্দ করে, তাই নিয়মিত গাছের ডালপালা কাটতে হবে যাতে গাছের মধ্যে আলো বাতাস প্রবেশ করতে পারে। আমের মুকুল যখন ৩ থেকে ৪ সেন্টিমিটার হবে তখন একবার এবং আম যখন মটর দানাকৃতি হবে তখন আর একবার প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার হারে সাইপারমেথ্রিন (রিপকর্ড/সিমবুস/ফেনম/এরিভো/ অন্যান্য) ১০ ইসি অথবা ডেসিস ২.৫ ইসি মিশিয়ে সম্পূর্ণ গাছ সপ্রে করতে হবে। আমের হপার পোকার কারণে যেহেতু সুটিমোল্ড বা ঝুল রোগের আক্রমণ ঘটে তাই রোগ দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক হপার পোকা দমনের জন্য ব্যবহার্য কীটনাশকের সাথে মিশিয়ে সপ্রে করতে হবে।
পাউডারি মিলডিউ : পাউডারি মিলডিউ আমের একটি মারাত্মক রোগ। আমাদের দেশে এ রোগের আক্রমণ প্রত্যেক বছর দেখা যায় না। তবে কোন কোন বছর অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করলে রোগটি মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। পাউডারি মিলডিউ রোগের আক্রমণ প্রধানত আমের মুকুল ও কচি আমে দেখা যায়। প্রথমে আমের মুকুলের শীর্ষ প্রানত্মে সাদা বা ধূসর বর্ণের পাউডারের আবরণ দেখা যায়। কচি পাতাতেও রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই পাউডার হচ্ছে ছত্রাক ও তার বীজকণার সমষ্টি। হালকা বৃষ্টি, মেঘলা বা কুয়াশাচ্ছন্ন আকাশ এ রোগের জীবাণুর ব্যাপক উৎপাদনের সহায়তা করে।
মুকুল আসার সময় প্রতিদিন (বিশেষত মেঘলা আবহাওয়াযুক্ত দিনগুলিতে) আমগাছ পর্যবেক্ষণ করতে হবে মুকুলে পাউডারি মিলডিউ রোগ দেখা দিয়েছে কিনা। রোগের লক্ষণ দেখা দিলেই সালফার বা গন্ধকযুক্ত যে কোন ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম ভালভাবে সপ্র্রে করতে হবে।
ফলের মাছি পোকা : মাছি পোকা পাকা আমের জন্য বেশ ক্ষতিকর। আম পাকার মৌসুমে স্ত্রীমাছি পরিপক্ক আমের গায়ে ডিম পাড়ে। ১ থেকে ৩ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে সাদা কীড়া বের হয়। এ অবস্থায় পাকা আম নরম হয়ে গেলে ম্যাগোট আম থেকে বের হয়ে মাটির গর্তে ঢুকে যায় এবং ৬ দিন পর এটি পুত্তলিতে পরিণত হয়। পুত্তলিতে পরিণত হওয়ার ৬দিন পর এটি পূর্ণাঙ্গ মাছি পোকায় রূপানত্মরিত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় মাছি পোকার আক্রমণ বুঝা যায় না । ভালভাবে লক্ষ্য করলে আক্রানত্ম আমের গায়ে ডিম পাড়ার স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষত চিহ্ন দেখা যায়। ক্ষত স্থানটি কিছুটা বিবর্ণ হয়ে যায়। আক্রানত্ম আম পাকা শুরম্ন হলে এ আক্রানত্ম স্থান থেকে রস ঝরতে দেখা যায়। পাকা আম কাটলে আক্রানত্ম আমের শাঁসের ভেতর সাদা সাদা পোকার কীড়া দেখা যায়। এ পোকায় আক্রানত্ম আম অনেক সময় বিকৃত হয়ে যায় বা পচে যায়।
এৰেত্রে প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমের রসের সাথে এক গ্রাম ডিপটেরেক্স মিশিয়ে বিষটোপ বানিয়ে এ বিষ টোপ বাগানে রেখে মাছি পোকা দমন করা যেতে পারে। আম পাকার মৌসুমে আম বাগানে বিস্নচিং পাউডার (প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম) সপ্রে করে মাছি তাড়ানো যেতে পারে। আম পাকার মৌসুমে প্রতিটি আম কাগজ (ব্রাউন পেপার) দ্বারা মুড়িয়ে দিলে আমকে পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা করা যাবে। আম বাগানে ফেরোমন ট্রাপ (মিথাইল ইউজেনল) ব্যবহার করা যেতে পারে। এর ফলে প্রচুর পরিমাণে পুরম্নষ পোকা ধ্বংস করা যায়।
কৃষিবিদ গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
ফল গবেষণা কেন্দ্র, রাজশাহী

ঢেঁড়শ : এ সময়ের চাষ

dherosh

ঢেঁড়শ একটি পুষ্টিকর গ্রীষ্মকালীন সবজি। আমাদের দেশে সাধারণত মাঘ মাসের শুরম্ন থেকে ভাদ্র মাস পর্যনত্ম এ সবজির চাষ হয়। ঢেঁড়শের বিভিন্ন জাতগুলোর মধ্যে পুষা শ্রাবণী, প্রভাতী ক্রানত্মি, অর্কা-অনামিকা উলেস্নখযোগ্য। এ জাতগুলোর মধ্যে পুষা শ্রাবণী স্বল্প মেয়াদি। এছাড়া আমাদের দেশিও কিছু জাত রয়েছে।
ঢেঁড়শ চাষের জন্য সব সময় নতুন বীজ ব্যবহার করা ভাল। এতে কৃষক লাভবান হবে। ঢেঁড়শ চাষের জন্য প্রথম আলো-বাতাস পায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। জমি উঁচু হবে এবং পানি নিকাশের ভাল সুবিধা থাকতে হবে। বেলে দো-অাঁশ থেকে এঁটেলে_ সব ধরনের মাটিতেই ঢেঁড়শের চাষ হলেও দো-অাঁশ মাটিই বিশেষ করে ঢেঁড়শ চাষের জন্য উপযোগী। কয়েকবার চাষ দেবার পর শেষ চাষের সময় বিঘাপ্রতি ১০ কুইন্টাল শুকনো গোবর অথবা পচন সার, ৪০ কিলোগ্রাম সুপার ফসফেট ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে মাটির সাথে।
জমিতে বীজ রোপণের ৪০ দিন পর বিঘাপ্রতি ৬ কিলোগ্রাম ইউরিয়া সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ঢেঁড়শের চারাগুলো ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি হয়ে যাওয়ার পর প্রতি চারায় কুড়িগ্রাম পরিমাণে কেঁচো সার সারির দু'দিক থেকে গোঁড়ায় দিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এতে অধিক ফলন পাওয়া যাবে।
এছাড়া অধিক উৎপাদনের জন্য এজটবেকটার ও সফটিকা নামক জীবাণু সারও ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে বিঘাপ্রতি ফলন কুড়ি থেকে ত্রিশ শতাংশ পর্যনত্ম বেড়ে যায়। ঢেঁড়শের বীজ জমিতে লাগানোর আগে ১০ থেকে ১৩ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর অঙ্কুরোদগম হলে সারিতে লাগাতে হবে। ঢেঁড়শ চাষে দু'টি সারির মধ্যে এক ফুট ও দুটি বীজের মধ্যে ৬ ইঞ্চি ব্যবধান রাখতে হবে।
পরিচর্যার ভেতরে আগাছা পরিস্কার করে গাছ থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার দূরে প্রতিবিঘায় ৬ কিলোগ্রাম হিসেবে ইউরিয়া সার টপড্রেস হিসেবে প্রয়োগ করতে হবে। পোকামাকড় ঠেকাতে মাটিতে শেষ চাষের সময় বিঘাপ্রতি আড়াই কিলোগ্রাম ম্যালাথিয়ন ৫ শতাংশ গুঁড়ো কীটনাশক মিশিয়ে দিতে হবে। তাছাড়া চাষের সময় নিমপাতা মেশালেও মাটিতে থাকা কীটপতঙ্গ দমন হবে। ঢেঁড়শ চাষে ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ ঘটলে ম্যালাথিয়ন ৫০ ইসি নামক ওষুধ প্রতি লিটার পানিতে এক চামচ হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া ঢেঁড়শ চাষকে আক্রমণ করলে ডায়াথিন এম-৪৫, পেকটাফ, বস্নাইটক্স প্রভৃতি ওষুধ ৪০ গ্রাম করে ১৬ লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। তবে ওই ওষুধ প্রয়োগের ৪ থেকে ৫ দিন পর্যনত্ম ৰেত থেকে ঢেঁড়শ তোলা যাবে না।

থাই কৈ : প্রজনন ও চাষ_১

194173_1

২০০৩ সালের কথা। দেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে পাবদা মাছের পোনা করলাম কিন্তু বাজারজাত করতে পারছিলাম না। অনেকটা প্রচার ও বাজারজাতের উদ্দেশ্যে মৎস্যপক্ষে অনুষ্ঠিত ঢাকায় কেন্দ্রীয় মৎস্য মেলায় স্টল নিলাম। ব্যাপক সাড়া পড়ল আমার স্টলে। তাৎক্ষণিক অনেক অর্ডার পেলাম। ফলশ্রম্নতিতে আমার পাবদা মাছের বাজারজাতের ব্যবস্থা হয়ে গেল।
মেলায় গিয়ে আরেকটা জিনিসের খোঁজ পেলাম। একটা স্টলে থাই কৈ মাছের পোনা বিক্রি হতে দেখে তাৎক্ষণিক কিছু পোনা কিনে চাষ শুরম্ন করলাম। পাশাপাশি আমাদের দেশে এই কৈ মাছের কে কে চাষ করছে তার একটা তথ্য তাদের কাছ থেকে নিলাম। সবকিছু জেনে যা মনে হল তাতে থাই কৈ চাষ না করাই ভাল।
থাইল্যান্ড থেকে এক বছর আগে আমাদের দেশে আসে এই কৈ মাছ। যারা প্রথম এনেছিল দ্বিতীয় বার তারা পোনা আমদানি করার সাহস পায়নি। আমি সবকিছু শুনে বুঝতে পারলাম এই মাছ চাষে প্রতিবন্ধকতা কোথায়। থাই কৈ চাষে কিছু কারিগরী ত্রম্নটির কারণেই এমনটা হচ্ছে। থাইল্যান্ডের আবহাওয়া আর আমাদের দেশের আবহাওয়া শীতের ২ মাস বাদে প্রায় একই রকম। তার পরেও আমাদের দেশে এই মাছটি কেন বড় হচ্ছে না? থাইল্যান্ডে এই মাছ ১২০ দিনে বাজারজাত হলেও আমাদের দেশে হচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে আমি যা জানাতে পারলাম তা হল_
১. আমাদের দেশে কৈ মাছ আমদানি করা হত সেপ্টেম্বরের দিকে। এর এক মাস বা দেড় মাসের মধ্যেই শীত এসে যেত। শীতের পরে এই মাছটি আর তেমন না বাড়ার কারণে সবার মাঝে এই মাছ চাষে অনিহা দেখা দেয়।
২. পোনার উচ্চমূল্য এবং ব্যাপক মৃতু্যহার এর আরেকটি কারণ। যেমন প্রতিটি পোনার মূল্য ৩ টাকা করে আনার পর যদি ৫০% পোনা মারা যায় তাহলে প্রতিটি পোনার মূল্য দাঁড়ায় ৬ টাকা। মৃত্যহার যদি একটু বেশি হয় তাহলে পোনার মূল্য আরো অনেক বেড়ে যায়।
৩. মানসম্মত খাবার তৈরি করতে না পারা আরেকটি কারণ।। কৈ মাছের খাবারে কার্প বা পাঙ্গাস মাছের খাবারের চেয়ে আরো বেশি পরিমাণ প্রোটিনের প্রয়োজন হয়। এ সময় এ ধরনের খাবার কোন মাছের কোম্পানি তৈরি করত না। এই সব মাথায় রেখেই আমি আমার থাই কৈ মাছের প্রজনন ও চাষের মিশন শুরম্ন করলাম। ২০০৩ সালের শেষ দিকের কথা। তথ্য মতে নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার থেকে এক ব্র্যাক অফিসারের সহায়তায় আরো কিছু কৈ মাছ নিয়ে এলাম।
২০০৪ সাল। আমার মোট মজুদ মাছের মধ্যে দেখা গেল স্ত্রী মাছের চেয়ে পুরম্নষ মাছের সংখ্যা একবারেই কম। যার কারণে ব্যাপক উৎপাদনের আশায় প্রথমেই হোঁচট খেলাম। এরপর আবার শুরম্ন করলাম মাছ আনা। আমাদের ময়মনসিংহের ত্রিশালেও অনেক কৈ মাছ ছিল।
আবার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে যোগাযোগ করে প্রায় মণখানেক কৈ মাছের ব্রম্নড নিয়ে আসা হল। এ ব্যাপারে সেই খামারের মালিক কৃষিবিদ জনাব বাবুল খান (নূরম্নল হক খান) এর সহযোগিতা মনে রাখার মত। তিনি আমার খামারে তেলাপিয়ার পোনা নিতে এসে নিজে সাথে করে প্রায় ৪০ কেজি কৈ মাছের ব্রম্নড দিয়ে গেলেন। তারপর থেকেই কৈ মাছের পোনা উৎপাদনে লেগে গেলাম। ব্যাপক সাফল্যও পেলাম। এরপর আমিই বাংলাদেশে প্রথম কৈ মাছের প্রজনন শুরম্ন করলাম।
প্রথমে রেনু তারপর পোনা এবং সব শেষে চাষ। এক্ষেত্রে ২০০০ সালে উৎপাদন করা আমাদের দেশীয় কৈ মাছের প্রজননের অভিজ্ঞতা কাজে লাগালাম। আগের অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখেই থাই কৈ চাষে এগিয়ে যেতে লাগলাম। প্রথমে পোনার কীভাবে মৃত্যহার কম হয় সেটা বের করলাম। তারপর খাদ্যের প্রোটিনের হার ৩৫% রেখে খাবার বানানোর পরামর্শ দিয়ে খামারিদের কাছে পোনা বিক্রি শুরম্ন করলাম। ফলাফল আসতে শুরম্ন হল। খামারিরা ব্যাপক লাভের মুখ দেখলেন এবং আমাকে উৎসাহিত করলেন। আমিও অনুপ্রাণিত হয়ে এটাকে আরো কীভাবে সমপ্রসারণ করা যায় চিনত্মা করতে লাগলাম। প্রথমে সৌদি বাংলা ফিড কোম্পানি আমার বানানো খাদ্যের ফলাফলের ভিত্তিতে খাদ্য বানানো শুরম্ন করল। খামারিরা আরো অনুপ্রাণিত হল। (চলবে)
_এ. কে. এম নূরম্নল হক
ব্রহ্মপুত্র ফিস সিড কমপেস্নক্স (হ্যাচারি, ময়মনসিংহ

আমের গুটি ঝরা : সম্ভাব্য প্রতিকার

mango1

আমকে ফলের রাজা বলা হয়। আম এমন একটি ফল যা ছোট থেকে শুরম্ন করে পাকা পর্যনত্ম সব অবস্থায় খাওয়া যায়। আম পছন্দ করে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের সব জেলাতেই কম বেশি আমের চাষ হয়। বাংলাদেশের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রংপুর, দিনাজপুর, যশোর অঞ্চলে আমের ফলন ভাল হয়। আমের চাষাবাদ করতে গিয়ে আম চাষিরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন; এর মধ্যে আমের গুটি ঝরা অন্যতম। প্রধান কারণসমূহ ও তার সম্ভাব্য প্রতিকার নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হল_
প্রাকৃতিক কারণ : আম গাছে প্রতি মুকুলে ১০০০ থেকে ৬০০০ টি পুরম্নষ ও স্ত্রী ফুল থাকে। তারমধ্যে প্রাথমিকভাবে প্রতি থোকায় জাতভেদে ১টি থেকে ৩০টি আমের গুটি ধরে। আমের গুটি তিনটি পর্যায়ে বেশি ঝরে। যেমন : পিনহেড ড্রপ, পোস্টসেটিং ড্রপ এবং মে মাস ড্রপ। গুটি আসার ২৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যেই প্রতি থোকায় ১টি থেকে ২টি গুটি থেকে অবশিষ্ট গুটিগুলি প্রাকৃতিক কারণে ঝরে পড়ে। তবে কোনো কোনো পুস্পমঞ্জুরীতে কদাচিৎ ৪টি থেকে ৫টি আম ধরতে দেখা যায়। সেক্ষেত্রে আমের আকার ছোট হয়। এটি গাছ তার ফল ধারণের সামঞ্জস্যতা রক্ষা করার জন্যই করে থাকে।
প্রতিকার : আমের সুষম বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিকভাবে গুটি ঝরা অত্যনত্ম প্রয়োজন। অতিরিক্ত গুটি ঝরে না পড়লে আমের আকার ছোট হয়ে যাবে এবং আমের গুণগতমান ও ফলন কমে যাবে। গবেষণা করে দেখা গেছে প্রতিটি মুকুলে ১টি করে আমের গুটি থাকলেই আমের বাম্পার ফলন হয়। তবে প্রতি মুকুলে আমের সংখ্যা বাড়ানোর জন্যে ফুল ফোটার ১০ ও ২০ দিন পর দু'বার দশ লিটার পানিতে ৬ গ্রাম হারে বোরিক এসিড সপ্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে। অন্য একটি গবেষণার ফলাফল হতে দেখা গেছে সমসত্ম ফুল ফোটা অবস্থায় জিবেরেলিক এসিড প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম হারে সপ্রে করলে আমের গুটি ঝরা কমানো যায়। এছাড়াও আমের গুটি মটর দানার আকৃতি হলে প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার মিশিয়ে সপ্রে করলে গুটি ঝরা কমানো যায়।
খরাজনিত বা মাটিতে রসের অভাবজনিত কারণ : খরাজনিত বা মাটিতে রসের অভাবজনিত কারণেও আমের গুটি ঝরে পড়তে পারে। আমের বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিল মাসে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মাটিতে রসের অভাব দেখা দেয়। মাটিতে রসের অভাব হলে আমের বোঁটায় দ্রম্নত নির্মোচন সত্মর গঠিত হয়। যার ফলে আমের গুটি অস্বাভাবিক হারে ঝরে পড়ে।
প্রতিকার : মাটিতে রসের অভাবজনিত কারণে আমের গুটি ঝরে পড়লে সেক্ষেত্রে নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। আমের গুটি আসার পরপরই অর্থাৎ আমের গুটি মটর দানা আকৃতি হলেই বৃষ্টি না হওয়া পর্যনত্ম ১৫ দিন পর পর সেচ দিতে হবে। সেচের পাশাপাশি প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার অথবা প্রতি ৪.৫ লিটার পানিতে ২ মিলিলিটার হারে পস্নানোফিক্স হরমোন পানিতে মিশিয়ে হালকা সূর্যের আলোতে আমের গুটিতে সপ্রে করলে আমের গুটি ঝরা কমে যায়। এক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে হরমোন কোনোক্রমেই যেন প্রখর সূর্যালোকে অথবা নির্দেশিত মাত্রার চেয়ে বেশি হারে সপ্রে করা না হয়।
আমের রোগ ও পোকামাকড়জনিত কারণ :
ক) রোগজনিত কারণ : আমের গুটিতে সাধারণত এ্যানথ্রাকনোজ রোগ দেখা যায়। এ রোগের আক্রমণে প্রথমে গুটিতে কালো দাগ পড়ে এবং পরে সম্পূর্ণ গুটিটি কালো হয়ে যায়। ফলে গুটিটি ঝরে পড়ে।
খ) পোকার আক্রমণজনিত কারণ : আম গাছে গুটি আসার পর হপার বা ফুদ্কি পোকার আক্রমণ হতে পারে। এ পোকার পূর্ণ বয়স্ক মথ ও এর ক্রীড়া আমের গুটির রস খেয়ে ফেলে; ফলে আমের গুটি শুকিয়ে ঝরে পড়ে। হপার পোকার আক্রমণ হলে পরবর্তীতে অন্যান্য রোগও দেখা দিতে পারে যাতে আমের গুটি ঝরে পড়তে পারে।
প্রতিকার : আমের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে আমের গুটিকে রক্ষার করতে গুটির আকার যখন মটর দানার মত হলে একটি কীটনাশক ও একটি ছত্রাকনাশক একসাথে পানিতে মিশিয়ে আমের গুটিতে সপ্রে করতে হবে। কীটনাশকের মধ্যে সাইপরমেথ্রিন ১০ ইসি বা ল্যামডা সাই হ্যালাথ্রিন ২.৫ ইসি বা ফেন ভেলারেট ২০ ইসি গ্রম্নপের যেকোনো একটি কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে এবং ছত্রাকনাশক এর মধ্যে মেনকোজেব ৮০ ডচ গ্রম্নপের যে কোনো একটি ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে একসাথে মিশিয়ে আমের গুটিতে সপ্রে করতে হবে।
আমের গুটি মার্বেল আকৃতির সমান হলে ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হতে পরে। এক্ষেত্রে পূর্ণ বয়স্ক পোকা আমের নীচের অংশে খোসার উপরে ডিম পাড়ে। কয়েকদিনের মধ্যে ডিম ফুটে লার্ভা বের হয় এবং লার্ভা খুব ছোট বিন্দুর মত ছিদ্র করে আমের ভেতরে ঢুকে প্রথমে শাঁস ও পরে অাঁটি খেয়ে ফেলে। পরে আক্রানত্ম স্থান কালো হয়ে যায় এবং কোনো কোনো সময় গুটি ঝরে পড়ে।
প্রতিকার : আম বাগান পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মরা ডাল-পালা কেটে দিতে হবে। ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা দিলে ফেনিট্রিথিয়ন ৫০ ইসি (যেমন সুমিথিয়ন ৫০ ইসি ) গ্রম্নপের কীটনাশক বা ফেনথিয়ন ৫০ ইসি গ্রম্নপের কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলিলিটারহারে বা ক্যারাটে কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে সপ্রে করতে হবে।
এছাড়াও অন্যান্য যে সব কারণে আমের গুটি ঝরে পড়তে পারে তা হল কচি পাতার আধিক্য, গর্ভমু-ের নিম্ন পরাগগ্রাহীতা, বর্ধিষ্ণু ভ্রম্নণের পুষ্টিহীনতা, সুষম পুষ্টির অভাব, দমকা বাতাস, শিলা বৃষ্টি, গাছের নিম্নতেজ ইত্যাদি। তবে সঠিক সময় সুষম সার ব্যবস্থাপনা এবং সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে এই সমস্যাসমূহ অনেকাংশে কমানো যায় যা আমের বাম্পার ফলনে গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
_মোঃ শরফ উদ্দিন, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র
চাঁপাইনবাবগঞ্জ

কেঁচো কম্পোস্ট

Kecho

মাটির লাল কেঁচো খড়কুটো, ফসলের অবশিষ্টাংশ, রান্নাঘরের উচ্ছিষ্ট এবং মাটির সমন্বয়ে যে জৈব সার তৈরি হয় তাকে বলা হয় কেঁচো কম্পোস্ট সার এবং এ কৌশলকে বলা হয় কম্পোস্ট সার তৈরির কৌশল। এটি সহজ একটি পদ্ধতি যেখানে আবর্জনা দিয়ে ব্যবহার উপযোগী উৎকৃষ্ট জৈব সার তৈরি করা যায়।
সার তৈরির কৌশল : কেঁচো কম্পোস্ট সার জমির এক কোণায়, গাছের নিচে এমনকি ঘরের ভেতর বড় বাক্সে তৈরি করা যায়। খোলা জায়গায় তৈরি করতে হবে। মাটি ও জৈব আবর্জনার সত্মূপের সাথে কেঁচো মেশাতে হবে। এরপর সত্মূপ ঢেকে রাখতে হবে। কেঁচো দ্রম্নত বৃদ্ধি লাভ করে এবং কয়েক মাসেই তা কেঁচো কম্পোস্ট সারে রূপ নেয়। ঘরের ভেতর বাক্সে তৈরি করতে হলে বাক্সের ভেতর পুরানো খবরের কাগজ বিছিয়ে তা পানি দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে। তারপর জৈব মাটি বিছিয়ে দিয়ে কেঁচো ছেড়ে দিতে হবে। মাটি এবং তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে কেঁচো মারা যেতে পারে এ জন্য বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
কেঁচো কম্পোস্ট সারের উপকারিতা : উৎপাদন ও ফসলের গুণাগুণ বৃদ্ধি পায়। তুলনামূলকভাবে উৎকৃষ্ট ও বড় আকারের ফল বা সবজি পাওয়া যায়। মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়, ফলে কেঁচো সার ব্যবহারে সেচের পানি কম লাগে। ক্ষারীয় লবণাক্ত মাটিতেও চাষাবাদ সম্ভব। রোগ ও পোকামাকড়ের উপদ্রব কম হয়। জমিতে আগাছার ঝামেলা কম হয়। ফসলের বীজের অংকুরোদগম ক্ষমতা বাড়ে। অধিক কুশি, অধিক ছড়া ও দানা গঠন হয়। মাটির বুনট উন্নত হয়। রাসায়নিক সারের চাইতে খরচ অনেক কম হয়। পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকে।
ফসলে কেঁচো সারের ব্যবহার : বৃষ্টিনির্ভর ফসল তিল, মুগ ছোলা, মাসকলাই, জোয়ার, বাজরা, সরিষা এসব কম পুষ্টি চাহিদা সম্পন্ন ফসলে রাসায়নিক সার ছাড়াই একর প্রতি মাত্র ২০০ থেকে ৩০০ কেজি কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে অধিক ফলন পাওয়া যায়। সূর্যমুখী, বার্লি, ভুট্টা ও গম এসব ফসলে কৃষকরা সাধারণত হালকা সেচ, রাসায়নিক সার ব্যবহার করে থাকে। এ ক্ষেত্রে একরপ্রতি মাত্র ৭০০ থেকে ৮০০ কেজি কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে অধিক ফলন পাওয়া যায়। পেঁয়াজ, রসুন, আদা, গাজার, আলু, মিস্টি আলু, ঢেঁড়শ, বেগুন, শসা ইত্যাদি ফসলে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে একরপ্রতি মাত্র ১০০০ কেজি কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে কৃষকরা অধিক ফলন পাচ্ছেন। ফুলকপি, বাধাকপি, আলুু, মরিচ, ধান, টমেটো, রসুন, আদা, হলুদ এসবের ক্ষেত্রে অনুমোদিত রাসায়নিক সারের অর্ধেক মাত্রার সাথে একরপ্রতি মাত্র ১টন কেঁচো কম্পোস্ট সার প্রয়োগের সুপারিশ রয়েছে। বিশেষত ফল বাগানে গাছপ্রতি ১ থেকে ১৫ কেজি কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে অধিক ফল পাওয়া যায়।
আমাদের দেশের কৃষক ভাইরা কেঁচো কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে কম খরচে অধিক ফলন ঘরে তুলতে পারেন। এতে জমি রাসায়নিক সারের হাত থেকে রৰা পাবে এবং উর্বরতা বজায় থাকবে।

থাই কৈ : প্রজনন ও চাষ_৩

194173_1

নার্সারি ব্যবস্থাপনা : নার্সারি পুকুরের ব্যবস্থাপনা ২টি ধাপে করা যায়। প্রথমটি হল ১টি পুকুর ব্যবহার করে আর দ্বিতীয়টি হল ২টি পুকুর ব্যবহার করে। ১টি পুকুর ব্যবহার করে পোনা উৎপাদন করলে পোনা ছোট বড় হয়ে যায় এবং চাষের ক্ষেত্রে নানাবিধ অসুবিধা হয়। ২টি পুকুর ব্যবহার করলে পোনা তেমন ছোট বড় হয় না। সে জন্য ২টি পুকুর ব্যবহার করাই ভাল। নার্সারি পুকুর আয়তাকার হলে ভাল হয়। এক্ষেত্রে ২য় পদ্ধতির কথা উলেস্নখ থাকছে অর্থাৎ ২টি পুকুর ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। প্রথম পুকুরের আয়তন হবে ১০/১৫ শতাংশ এবং ২য় পুকুরের আয়তন হবে ৪০/৫০ শতাংশ। প্রথম পুকুরের পানি সেচ দিয়ে শুকিয়ে শতাংশ প্রতি ১ কেজি চুন পানির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে সমসত্ম পুকুরে ছিটিয়ে দিয়ে শুকাতে হবে। পুকুরের তলা শুকানোর পর পুকুরের পাড়ের চারপাশে জাল দিয়ে ঘিরে শ্যাল মেশিন বা গভীর নলকূপের সাহায্যে ৩ ফুট পরিষ্কার পানি দিতে হবে। পানি দেয়ার পর পরই শতাংশ প্রতি ১০০ গ্রাম আটা পানির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। এর ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাণী পস্ন্যাংটন জন্মাবে যা কৈ মাছে রেনুর জন্য অত্যনত্ম প্রয়োজনীয়। আটা দেয়ার ২ দিন পর পুকুরে সন্ধ্যায় ০.২ পি.পি.এম হারে সুমিথিয়ন পানির সাথে মিশিয়ে পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। এর ২দিন পর রেনু মজুত করতে হবে। ১৫/২০ শতাংশের নার্সারি পুকুরের জন্য ১০০/১৫০ জোড়া কৈ মাছের ব্রম্নড থেকে উৎপাদিত রেনু পুকুরে ছাড়া উচিৎ। এ পুকুরে ৭/৮ দিন খাওয়ানোর পর রেনুগুলো ধানীপোনাতে রূপানত্মরিত হয়ে যাবে। তখন এই ধানীপোনাকে গস্নাস নাইলন কাপড়ের তৈরি হাপা দিয়ে কাটাই করে ২য় পুকুরে স্থানানত্মরিত করতে হবে। এভাবে আরো ১০ দিন খাওয়ানোর পর ধানীপোনাগুলো চারা পোনাতে পরিণত হবে যা পরবতর্ীতে চাষের পুকুরে ছাড়তে হবে।
খাবার প্রয়োগ : রেনু ছাড়ার পর থেকেই পুকুরে সম্পূরক খাবার প্রয়োগ করতে হবে। খাবার হিসেবে ২০ শতাংশের একটি পুকুরে প্রতিবারে ১০টি হাঁসের ডিম সিদ্ধ করে ডিমের সাদা অংশসহ ভালভাবে বেস্নন্ডারে মিহি করে গস্নাস নাইলনের কাপড় দিয়ে ছেঁকে পানির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে সমসত্ম পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।
এভাবে দৈনিক ২/৩ বার খাবার প্রয়োগ করতে হবে। ২ দিন খাবার দেয়ার পর ৩য় দিন থেকে ওই পরিমাণ ডিমের সাথে আরো আধাকেজি আটা সিদ্ধ করে ওই ডিমের সাথে মিশিয়ে পুকুরে দিনে ২/৩ বার প্রয়োগ করতে হবে। আটা প্রয়োগে রেনুমাছ খাওয়ার পাশাপাশি অধিক পরিমাণে প্রাণী পস্ন্যাংকটনের জন্ম হবে যা রেনুপোনার জন্য খুবই দরকারী। এভাবে ৫/৬ দিন খাওয়ানোর পর রেনুপোনাগুলো ধানীপোনাতে পরিণত হবে যা পরবতর্ীতে কাটাই পুকুরে অর্থাৎ ২য় পুকুরে স্থানানত্মরিত করতে হবে। এই পুকুরে ধানীপোনার খাবার হিসাবে বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি নার্সারি খাবার খাওয়াতে হবে। খাবারে প্রয়োগ পদ্ধতিতে নার্সারি খাবারকে ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে তারপর পোনাকে খাওয়ানো উচিৎ। খাবারের পরিমাণ হবে প্রতি ৪ লক্ষ মাছের জন্য ১০ কেজি খাবার। এভাবে ৮/১০দিন খাওয়ানোর পর পোনাগুলো এক থেকে দেড় ইঞ্চি সাইজের হলে পরবতর্ীতে চাষের পুকুরে ছাড়তে হবে। (চলবে) _এ. কে. এম নূরম্নল হক
ব্রহ্মপুত্র ফিস সিড কমপেস্নক্স (হ্যাচারি)
গ্রাম-চরপুলিয়ামারী,শম্ভুগঞ্জ, ময়মনসিংহ

শনিবার, ৬ মার্চ, ২০১০

ভেজাল সার চেনার উপায়

ইউরিয়া : এই সারে ভেজাল খুবই কম। তবে ভেজাল ইউরিয়া চিনতে হলে চা চামচের এক চামচ ইউরিয়া সার দুই চামচ পরিমাণ পানিতে দেওয়ার পর হাত দিলে যদি ঠাণ্ডা অনুভব না হয় তাহলে বুঝতে হবে যে এইটি ভেজাল সার।
টিএসপি : প্রকৃত বা ভালো টিএসপি সারে অম্ল স্বাদ যুক্ত ঝাঁঝালো গন্ধ থাকবে। কিন্তু ভেজাল সারে এই গন্ধ পাওয়া যাবে না।
এক চামচ টিএসপি সার আধা গ্লাস ঠাণ্ডা পানিতে মেশালে সার পুরোপুরি গলে যাবে এবং পরিষ্কার ডাবের পানির মতো পরিষ্কার দ্রবণ তৈরি করবে। ভেজাল টিএসপি হলে এর রকম হবে না।
প্রকৃত বা ভালো টিএসপি সার অধিক শক্ত বলে দুই আঙুলে চাপ দিলে সহজে ভাঙবে না, কিন্তু ভেজাল টিএসপি সার সহজেই ভেঙে যায়। এছাড়াও ভেজাল টিএসপি দানার ভেতরে অংশে নানা রঙের হতে পারে।
এসএসপি সার : এক চা চামচ পরিমাণ এসএসপি সার আধা গ্লাস পানিতে মেশালে নমুনাটি আংশিক দ্রবীভূত হয়ে পানি ঘোলাটে করে এবং অবশিষ্ট অংশ দ্রবীভূত না হয়ে তলানি হিসেবে জমা হয়, তাহলে বুঝতে হবে ওই এসএসপি সার ভেজাল।
এই সার অপেক্ষাকৃত নরম বলে বুড়ো আঙুলের চাপে সহজেই ভেঙে যাবে। একটি কাচের পাত্রে বা গ্লাসে এক চামচ পরিমাণ রেখে হাইড্রোক্লোরিক এসিড ১৫ থেকে ২০ ফোঁটা মেশানোর পর যদি বুদবুদ লক্ষ্য করা যায় তাহলে বুঝতে হবে যে, এই এসএসপি সারে ভেজাল হিসেবে চুন বা ডলোমাইট ব্যবহার করা হয়েছে।
ডিএপি : এক চামচ ডাইঅ্যামোনিয়াম ফসফেট বা ডিএপি সার এক টুকরো কাগজের ওপর খোলা অবস্থায় এক থেকে দুই ঘণ্টা রেখে দিলে যদি সারের নমুনা ভিজে না ওঠে তাহলে বুঝতে হবে তা ভেজাল ডিএপি।
এফএমপি : ভেজাল এফএমপি সার খুবই শক্ত। পাথরের মতো। পানিতে গলে না। একটি কাচের গ্লাসে এক চামচ পরিমাণ এই সার ২ মাস ভিজিয়ে রাখলেও তা গলবে না।
পটাশ : আধা চামচ মিউরেট অব পটাশ বা এমওপি সার কাচের গ্লাসে অর্ধেক পানিতে মেশালে ভালো সার হলে তা পুরোপুরি গলে যাবে এবং পানিতে পরিষ্কার দ্রবণ তৈরি করবে। আর যদি ওই সার ভেজাল হয় তাহলে রং ভেসে উঠবে এবং তলানি আকারে গ্লাসের নিচে জমা হবে।
এসওপি : এ চা চামচ পটাশিয়াম সালফেট বা এসওপি সার কাচের পাত্রে রেখে ১০ ভাগ হাইড্রোক্লোরাইড এসিড মেশালে যদি বুদবুদ ওঠে তাহলে ধরে নিতে হবে, ওই সারে চুন জাতীয় পদার্থ ভেজাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
এসটিকেএস বা মিশ্র সার : এই সারে ভেজালের ধরন এত বিচিত্র যে, তা সহজেই মাঠ পর্যায়ে চিহ্নিত করা যায় না। তবে মাটি এবং ডলোমাইট দিয়ে এসটিকেএস সার তৈরি করা হয় বলে এই সার আঙুলে চাপ দিলে সহজেই গুঁড়ো হয়ে যায়। ভেজাল সারে দানার ভেতর ও বাইরের প্রলেপের রং আলাদা হবে।
জিপসাম : একটি কাচের বা চিনা মাটির পাত্রে এক চামচ পরিমাণ এই সারের ওপর ১০ থেকে ১৫ ফোঁটা পাতলা (১০%) হাইড্রোক্লোরাইড এসিড দিলে যদি আস্তে আস্তে বুদবুদ দেখা দেয় তাহলে বুঝতে হবে এটি ভেজাল সার।
জিংক সালফেট (হেপ্টা) : ভালো সার দেখতে হবে স্ফটিক আকৃতির এবং ঝুরঝুরে। আধা গ্লাস ঠাণ্ডা পানিতে এক চা চামচ জিঙ্ক সালফেট (হেপ্টা) মেশালে যদি তা ভালো হয় তাহলে পুরো নমুনাটিই গলে যাবে এবং পাত্রে কোনো রকম তলানি থাকবে না।
জিংক সালফেট (মনো) : ভালো জিঙ্ক সালফেট (মনো) দেখতে দানাদার। আধা গ্লাস ঠাণ্ডা পানিতে এক থেকে দুই চামচ সার দিলে তা গলবে না এবং দ্রবণ হবে ঘোলাটে। ম্যাগনেশিয়াম সালফেট দিয়ে তৈরি ভেজাল সার হলে তা হবে ধবধবে সাদা।
বোরন (বরিক এসিড) : আধা গ্লাস পরিষ্কার পানিতে এক চা চামচ পরিমাণ বরিক এসিড মেশালে যদি এই নমুনা সার ভালো হয় তাহলে তা পুরোপুরি গলে যাবে এবং গ্লাসের তলায় কোনো তলানি জমবে না। যদি এর ব্যতিক্রম হয় তাহলে বুঝতে হবে, তা ভেজাল সার।
বোরন (সলুবর) : ভালো মানের এই সার দেখতে হবে ধবধবে সাদা এবং হালকা মিহি পাউডার। আধা গ্লাস ঠাণ্ডা পানিতে এক চা চামচ পরিমাণ এই সার মেশালে তা পুরোপুরি গলে যাবে এবং গ্লাসে কোনো রকম তলানি পড়বে না।
জৈব সার : ভালো মানের জৈব সারের কোনো রকম গন্ধ থাকবে না। দেখতে হবে কালো, নয়তো ধূসর। হাতের মুঠোয় চাপ দিলে দলা বাঁধবে না।