শনিবার, ৬ মার্চ, ২০১০

মোটাতাজাকরণ লাভজনক

দেশে প্রতিদিন মাংসের চাহিদা ১৩ হাজার ৮৬০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে মাত্র তিন হাজার ৪৯ মেট্রিক টন উৎপাদিত হয়। দিনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাংসের চাহিদা ১২০ গ্রাম হলেও পাচ্ছে মাত্র ৩০ গ্রাম। ১৫ কোটি মানুষের দেশে গরুর মাংসের চাহিদা দিন দিন বাড়লেও গরু বাড়ছে না। একসময় ভারত থেকে বল্ডার গরু আমদানি করা হলেও এখন তা খুব কমে এসেছে। দেশীয় গরুই মাংস উৎপাদনের একমাত্র উপায়। ফলে গরুর চাহিদা বাড়ছে। এ কারণে গরু মোটাতাজাকরণ এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আর্থিক দিক দিয়ে এটি খুব লাভজনক।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, দেশে প্রতিদিন জবাইয়ের জন্য এক লাখ ১০ হাজার ৮৮০টি গরুর দরকার হলেও জবাই হচ্ছে মাত্র ২৪ হাজার ৩৯২টি। চাহিদার তুলনায় অনেক কম গরু জবাই হওয়ায় দিন দিন মাংসের দাম বেড়েই চলেছে। গরুর মাংস এখন ধনীলোকের খাবার। অথচ কিছু দিন আগে মধ্যবিত্তরাও গরুর মাংস নিয়মিত কিনতেন। মূলত গরুর সংখ্যা কমে যাওয়ায় মাংসের দাম বাড়ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, এ দেশে গরুর ব্যবসার যথেষ্ট বাজার আছে। আর এ কারণেই গরু মোটাতাজাকরণ দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে এটি জনপ্রিয় ব্যবসায় পরিণত হয়েছে।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা 'অনন্য' গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত। পাবনার লস্করপুরে তাদের খামারে বর্তমানে ৩১৯টি গরু আছে। এ ছাড়া অনন্য'র আর্থিক সহযোগিতায় তিন বছর ধরে যমুনা নদীর চরে ৭০০ মহিলা গরু মোটাতাজাকরণ করে আসছেন। অনন্য'র পরিচালক মাহফুজ আলী কাদেরী গরু মোটাতাজাকরণ সম্পর্কে কালের কণ্ঠকে বলেন, পুঁজি কম লাগে। কম সময়ে লাভসহ মূলধন উঠে আসে। বেকার যুবক ও মহিলাদের কর্মসংস্থানের সহজ পথ। এটি বর্তমানে খুবই লাভজনক হওয়ায় দেশে এই পদ্ধতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
প্রসঙ্গত, পাবনা জেলা গরুর খামারের জন্য বিখ্যাত। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস জানিয়েছে, জেলায় তিন লাখ গরু আছে। মূলত এগুলো দুগ্ধ খামার। এর বাইরে জেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় বাড়িতেই অল্প পরিমাণে গরু মোটাতাজা করা হয়।
ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া গরু মোটাতাজাকরণ খামার গড়েছেন পাবনার আরিফপুর এলাকায়। একসময়ের বেকার বাদশা এখন খামার করে ঠিকই 'বাদশা' হয়ে উঠেছেন। তিনি বলেন, অল্প পুঁজিতে ব্যবসা শুরু করা যায়। ঝুঁকি কম। আমার মতো হাজার হাজার যুবক এখন গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।
ঢাকা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট শাখার সহকারী পরিচালক ডা. জিল্লুর রহমান বলেন, মূলত এটা তিন থেকে ছয় মাসের ব্যবসা। সারা দেশে কতটি খামার আছে_তার সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। তবে পাঁচ লাখের বেশি খামার আছে বলে আমাদের ধারণা। তিনি গরু মোটাতাজাকরণ ও প্রতিপালন সম্পর্কে জানান, দুই-তিন বছরের গরু অথবা দুই থেকে চার দাঁত উঠেছে_এমন গরু খামার করার জন্য উপযোগী। গরু কেনার আগে দেখতে হবে, দেহ যেন লম্বাটে হয়। দেহ মসৃণ থাকবে। দেহের বৃদ্ধি ভালো। গাঢ় লাল বা কালচে রং হলে ভালো হয়। গরু কেনার পর প্রথমে কৃমিমুক্ত করতে হবে। গরুর দেহে ও বাইরে ক্ষতিকর পরজীবী বাস করে। পশু চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো টিকা দিতে হবে। উঁচু স্থানে দোচালা ছাউনি ঘর হলে ভালো হয়। প্রতিটি গরুর জন্য তিন থেকে চার বর্গমিটার জায়গা বরাদ্দ রাখতে হবে। নিয়মিত গোসল করাতে হবে। গরুকে উত্তেজিত করা যাবে না।
তিনি বলেন, এই প্রকল্পে মোট খরচের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশই খাদ্য কিনতে চলে যায়। ভাত, হেলেঞ্চা শাক, পাকা পাটের পাতা, বাঁশের করুল, ধুতরা, তামাক-জাতীয় খাদ্য গরুকে খাওয়ানো ক্ষতিকর।
সব সময়ই আঁশ-জাতীয় খাদ্য খাওয়ালে ভালো হয়। এ ছাড়া ইউরিয়া মোলাসেস, যা দানাদার খাবার হিসেবে পরিচিত খাওয়ানো হয়।
খড়, ইউরিয়া সার, পানি, চিটাগুড় পরিমাণ মতো দিয়ে ইউরিয়া মোলাসেস তৈরি করতে হয়। এদিকে গমের ভুসি, খেসারির ভুসি, তিলের খৈল, শুঁটকি মাছের গুড়া, লবণ ও ঝিনুকের গুঁড়া দিয়ে দানাদার খাবার তৈরি করা যায়। এখন উপজেলা এমনকি গ্রামপর্যায়েও এ ধরনের পণ্য পাওয়া যায়।
গরুর খুরা, পেট ফুলা, ক্ষুধা মান্দ্য ও অজীর্ণতা রোগ দেখা দেয়। এ বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়। রোগ দেখা দিলেই প্রাণী চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
অনেকেই মনে করেন, মোটাতাজাকরণ করা গরুর মাংস ক্ষতিকর। এ বিষয়ে একাধিক প্রাণী বিশেষজ্ঞ কালের কণ্ঠকে বলেন, গরু মোটাতাজাকরণ খুবই লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এই ধরনের গরুর মাংস কোনোভাবেই ক্ষতিকর নয়। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (সদ্য এলপিআরে যাওয়া) ডা. মো. সাবি্বর আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, গরুকে হরমোন খাওয়ালে তা ক্ষতিকর। খুবই ব্যয়বহুল হওয়ায় আমাদের দেশে কেউ গরুকে হরমোন খাওয়ায় না। এই ধরনের প্র্যাকটিস এ দেশে নেই

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন