রবিবার, ৭ মার্চ, ২০১০

কুল চাষ

184464_1

কুলের ফলন বিপর্যয়
কম সময়ে কম মুনাফা দিয়ে অধিক লাভবানের জন্য বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষের জুড়ি নেই। এছাড়া বিভিন্ন ফল বাগানের পাশপাশি মিশ্রফল হিসেবে কুলের আবাদ করা যায় বলে দিন দিন এর চাষ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে কুল চাষ লাভজনক হলেও কুলের মৌসুমে চাষিরা হতাশ। কোন কোন কুল গাছে ফুল অসেনি, কোথাও ফুল এসে ফল আসেনি, এমনি নানা সমস্যার কারণে এবার ফলন ৫০ ভাগ কম হতে পারে বলে মনে করছেন চাষিরা। বিশেষজ্ঞরা ফলন কম হওয়ার জন্য চারটি কারণকে দায়ী করেছেন_
আগাম ডাল ছাঁটাই : মৌসুমে কুল না আসার কারণে কুল চাষিরা সাধারণত ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই অধিকাংশ কুল গাছের ডাল ছাঁটাই করেন। ফলে দেখা যায়, ডাল কাটার পর যে নতুন শাখা বের হয় সেগুলোর বয়স ছয় মাসের বেশি হয়ে যায়। এতে শাখা-প্রশাখার বৃদ্ধি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পুরানো শাখা-প্রশাখা প্রতিটি পত্রকক্ষে কম পরিমাণে ফুল আসে। গবেষণার ফলাফল হতে দেখা গেছে, কুল গাছের ৯৮% ফুল আসে নতুন ডগায় আর মাত্র ২% ফুল আসে পুরাতন শাখায়। সুতরাং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ডাল ছাঁটাই করতে হবে। তবে এপ্রিল মাসেও ডাল ছাঁটায়ের কাজ করা যায়। একটি কথা মনে রাখতে হবে, কুল গাছে কুল আসুক বা না
আসুক নির্দিষ্ট সময়েই গাছের ডাল ছাঁটাই করতে হবে অথবা কুল সংগ্রহের পর কুল গাছে নতুন পাতা বের হওয়ার আগেই ডাল ছাঁটায়ের কাজ শেষ করতে হবে।
সুষম সার প্রয়োগ : আমাদের দেশে জন্মানো গুটি জাতগুলো কোন রকম যত্ন ছাড়াই আশানুরূপ ফলন দিয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদকৃত উচ্চফলনশীল আপেল কুল, বাউকুল, থাইকুল, বারি কুল-১, বারি কুল-২, কুমিল্লা কুল, খুরমা কুল, ঢাকা-৯০ ইত্যাদি জাতগুলোর ফলন সুষম সার ব্যবস্থপনার উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ সুষম সার ব্যবস্থাপনা ছাড়া এ জাতগুলোর আশানুরূপ ফলন পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু কুল চাষিরা তাদের কুল বাগানে অসম ও অপর্যাপ্ত সার ব্যবহার করে থাকেন। ফলে কুলের ফলন মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। অন্যান্য ফলগাছের মত কুলগাছে সাধারণত জৈব সার, ইউরিয়া সার, ট্রিপল সুপার ফসফেট, মিউরিয়েট অব পটাশ, জিপসাম, জিংক সালফেট ও বোরণ সারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু অধিকাংশ কুলচাষিরা ইউরিয়া সার, ট্রিপল সুপার ফসফেট, মিউরিয়েট অব পটাশ এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে গোবর সার ও বোরণ সার ব্যবহার করে থাকেন। ফলে প্রতি বছরই আশনুরূপ ফলন হতে তারা বঞ্চিত হন। সার প্রয়োগের পর প্রয়োজন হলে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
ফুল ফুটন- অবস্থায় কীটনাশক সপ্রে : কুলের পরাগায়ণ বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ দ্বারা সম্পন্ন হয়। কুলগাছে ফুল ফোটা হতে শুরু করে শেষ হতে ৪৫-৬০ দিন পর্যন- সময় লাগে। এ সময় কুল বাগানে বিভিন্ন ধরনের মৌমাছি, মাছি, পিঁপড়াপ্রজাপতিসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গ আসে। এ সমস- কীটপতঙ্গ ফুলের পরাগায়ণের সহায়ক হিসেবে কাজ করে থাকে। এ সময়ে কুল বাগানে কোন ধরনের কীটনাশক সপ্রে করা উচিত না। তবে সুনির্দিষ্ট কিছু সমস্যার জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী বিকেল বেলায় সপ্রে করা যেতে পারে। কিন্তু কুল চাষিরা ফুল ফুটন- অবস্থায় ২-৩ বার বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক সপ্রে করে থাকেন ফলে পরাগায়ণ হয় না।
আবহাওয়াগত কারণ : কুলগাছে ফুল ফুটন- অবস্থায় উচ্চতাপমাত্রা, অতিবৃষ্টি, দিন-রাতের তাপমাত্রার তারতম্যে বেশি কুল হয় না। ফলে স্থানভেদে কুলের ফলনের তারতম্য হয়ে থাকে।
সঠিক সময় সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অবশ্যই আশানুরূপ ফলন পাওয়া যাবে।
_মোঃ শরফ উদ্দিন (রাজন), বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা,
আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন