২০০৩ সালের কথা। দেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে পাবদা মাছের পোনা করলাম কিন্তু বাজারজাত করতে পারছিলাম না। অনেকটা প্রচার ও বাজারজাতের উদ্দেশ্যে মৎস্যপক্ষে অনুষ্ঠিত ঢাকায় কেন্দ্রীয় মৎস্য মেলায় স্টল নিলাম। ব্যাপক সাড়া পড়ল আমার স্টলে। তাৎক্ষণিক অনেক অর্ডার পেলাম। ফলশ্রম্নতিতে আমার পাবদা মাছের বাজারজাতের ব্যবস্থা হয়ে গেল।
মেলায় গিয়ে আরেকটা জিনিসের খোঁজ পেলাম। একটা স্টলে থাই কৈ মাছের পোনা বিক্রি হতে দেখে তাৎক্ষণিক কিছু পোনা কিনে চাষ শুরম্ন করলাম। পাশাপাশি আমাদের দেশে এই কৈ মাছের কে কে চাষ করছে তার একটা তথ্য তাদের কাছ থেকে নিলাম। সবকিছু জেনে যা মনে হল তাতে থাই কৈ চাষ না করাই ভাল।
থাইল্যান্ড থেকে এক বছর আগে আমাদের দেশে আসে এই কৈ মাছ। যারা প্রথম এনেছিল দ্বিতীয় বার তারা পোনা আমদানি করার সাহস পায়নি। আমি সবকিছু শুনে বুঝতে পারলাম এই মাছ চাষে প্রতিবন্ধকতা কোথায়। থাই কৈ চাষে কিছু কারিগরী ত্রম্নটির কারণেই এমনটা হচ্ছে। থাইল্যান্ডের আবহাওয়া আর আমাদের দেশের আবহাওয়া শীতের ২ মাস বাদে প্রায় একই রকম। তার পরেও আমাদের দেশে এই মাছটি কেন বড় হচ্ছে না? থাইল্যান্ডে এই মাছ ১২০ দিনে বাজারজাত হলেও আমাদের দেশে হচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে আমি যা জানাতে পারলাম তা হল_
১. আমাদের দেশে কৈ মাছ আমদানি করা হত সেপ্টেম্বরের দিকে। এর এক মাস বা দেড় মাসের মধ্যেই শীত এসে যেত। শীতের পরে এই মাছটি আর তেমন না বাড়ার কারণে সবার মাঝে এই মাছ চাষে অনিহা দেখা দেয়।
২. পোনার উচ্চমূল্য এবং ব্যাপক মৃতু্যহার এর আরেকটি কারণ। যেমন প্রতিটি পোনার মূল্য ৩ টাকা করে আনার পর যদি ৫০% পোনা মারা যায় তাহলে প্রতিটি পোনার মূল্য দাঁড়ায় ৬ টাকা। মৃত্যহার যদি একটু বেশি হয় তাহলে পোনার মূল্য আরো অনেক বেড়ে যায়।
৩. মানসম্মত খাবার তৈরি করতে না পারা আরেকটি কারণ।। কৈ মাছের খাবারে কার্প বা পাঙ্গাস মাছের খাবারের চেয়ে আরো বেশি পরিমাণ প্রোটিনের প্রয়োজন হয়। এ সময় এ ধরনের খাবার কোন মাছের কোম্পানি তৈরি করত না। এই সব মাথায় রেখেই আমি আমার থাই কৈ মাছের প্রজনন ও চাষের মিশন শুরম্ন করলাম। ২০০৩ সালের শেষ দিকের কথা। তথ্য মতে নারায়ণগঞ্জের আড়াই হাজার থেকে এক ব্র্যাক অফিসারের সহায়তায় আরো কিছু কৈ মাছ নিয়ে এলাম।
২০০৪ সাল। আমার মোট মজুদ মাছের মধ্যে দেখা গেল স্ত্রী মাছের চেয়ে পুরম্নষ মাছের সংখ্যা একবারেই কম। যার কারণে ব্যাপক উৎপাদনের আশায় প্রথমেই হোঁচট খেলাম। এরপর আবার শুরম্ন করলাম মাছ আনা। আমাদের ময়মনসিংহের ত্রিশালেও অনেক কৈ মাছ ছিল।
আবার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে যোগাযোগ করে প্রায় মণখানেক কৈ মাছের ব্রম্নড নিয়ে আসা হল। এ ব্যাপারে সেই খামারের মালিক কৃষিবিদ জনাব বাবুল খান (নূরম্নল হক খান) এর সহযোগিতা মনে রাখার মত। তিনি আমার খামারে তেলাপিয়ার পোনা নিতে এসে নিজে সাথে করে প্রায় ৪০ কেজি কৈ মাছের ব্রম্নড দিয়ে গেলেন। তারপর থেকেই কৈ মাছের পোনা উৎপাদনে লেগে গেলাম। ব্যাপক সাফল্যও পেলাম। এরপর আমিই বাংলাদেশে প্রথম কৈ মাছের প্রজনন শুরম্ন করলাম।
প্রথমে রেনু তারপর পোনা এবং সব শেষে চাষ। এক্ষেত্রে ২০০০ সালে উৎপাদন করা আমাদের দেশীয় কৈ মাছের প্রজননের অভিজ্ঞতা কাজে লাগালাম। আগের অভিজ্ঞতাকে মাথায় রেখেই থাই কৈ চাষে এগিয়ে যেতে লাগলাম। প্রথমে পোনার কীভাবে মৃত্যহার কম হয় সেটা বের করলাম। তারপর খাদ্যের প্রোটিনের হার ৩৫% রেখে খাবার বানানোর পরামর্শ দিয়ে খামারিদের কাছে পোনা বিক্রি শুরম্ন করলাম। ফলাফল আসতে শুরম্ন হল। খামারিরা ব্যাপক লাভের মুখ দেখলেন এবং আমাকে উৎসাহিত করলেন। আমিও অনুপ্রাণিত হয়ে এটাকে আরো কীভাবে সমপ্রসারণ করা যায় চিনত্মা করতে লাগলাম। প্রথমে সৌদি বাংলা ফিড কোম্পানি আমার বানানো খাদ্যের ফলাফলের ভিত্তিতে খাদ্য বানানো শুরম্ন করল। খামারিরা আরো অনুপ্রাণিত হল। (চলবে)
_এ. কে. এম নূরম্নল হক
ব্রহ্মপুত্র ফিস সিড কমপেস্নক্স (হ্যাচারি, ময়মনসিংহ
রবিবার, ৭ মার্চ, ২০১০
থাই কৈ : প্রজনন ও চাষ_১
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন