আমাদের দেশে বিভিন্ন মৌসুমে নানা রকম ফল উৎপাদন হয়ে থাকে। এগুলো রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডাক্তাররা প্রায়ই বলে থাকেন, মৌসুমী ফল খেলে মৌসুমী রোগ-বালাইয়ের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
দেশের হরেক রকম ফলের সমারোহে কুল অন্যতম। ভিন্ন স্বাদের, ভিন্ন ঢংয়ের কুলের সাথে এ দেশের মানুষ কম বেশি পরিচিত। গত কয়েক বছরে বারিকুল-১ ও ২, আপেলকুল, বাউকুল, তাইওয়ান কুল যেমন বাজার মাতিয়েছে তেমনি বারিকুল-৩ মাতাবে মানুষের মন। বড় বড় রসালো বারিকুল-৩ যে কারো নজর কেড়ে নিতে পারে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) এর রাজশাহীস্থ ফল গবেষণা কেন্দ্রে বারিকুল-৩ উদ্ভাবিত হয়। ফল গবেষণা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত ও উধর্্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ আলীম উদ্দীন জানান, এ জাতটির আদি উৎস হল থাইল্যান্ড। বারিকুল-৩ এর যে সমস- বৈশিষ্ট্য জাতটিকে অন্যান্য জাত করেছে তা হচ্ছে_ বারিকুল-৩ বেশ মিষ্টি, সাদা শাঁস এবং রসালো। গাছপ্রতি বারিকুল-৩ এর ফলন ৩৫-৪০ কেজি। প্রতিটি ফলের ওজন ৬০-৭৫ গ্রাম। এই কুলের মিষ্টতা (টিএসএস ১৪%) মাঝারী ধরনের হলেও এর বৃহদাকার আকৃতি যে কাউকে মুগ্ধ করতে পারে। এটি একটি বামন জাতের গাছ, ফলের শাঁস মচমচে এবং বাংলাদেশের সবগুলো কৃষি ভৌগলিক অঞ্চলে উৎপাদন যোগ্য। বারিকুল-৩ এর বীজ খুব ছোট এবং এই কুলের প্রায় ৯৬% খাদ্যোপযোগী। উচ্চ ফলনশীল এই বারিকুল-৩ হেক্টরপ্রতি প্রায় ১৪-১৫ টন ফলন দিতে সক্ষম।
ফল গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ শামীম আখতার জানান, বারিকুল-৩ থেকে ১ম বছরে ১৫-২০ কেজি প্রতি গাছে ফল পাওয়া যায়। পরবতর্ী বছরে ফলন আরো বাড়বে। তবে গাছের পরিচর্যা সঠিকভাবে করা হলে ফলন অনেক বেশি হবে। কোন কোন ক্ষেত্রে দ্বিগুণ ফলন পাওয়া যেতে পারে। প্রতি বছর বর্ষার আগে ও পরে জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হবে। এটি চাষ করতে হবে স্কয়ার পদ্ধতিতে। প্রতি হেক্টরে ৪০০-৫০০ টি চারা রোপণ করলে ফলন ভাল পাওয়া যাবে। বপন থেকে কর্তন পর্যন- সময়কাল এক বছর। ১ম বছরে সম্ভাব্য উৎপাদন ৯-১৪ টন/হেক্টর। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ফুল আসে এবং জানুয়ারি মাসে বারিকুল-৩ পরিপক্ক হয়। এ ফলের জন্য উর্বর দো-অাঁশ মাটি উত্তম।
তবে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সব মাটিতেই এ ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যেতে পারে। এ কুল দীর্ঘ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। খরা মৌসুমে সেচপ্রদান করলে ভাল ফলন পাওয়া যাবে। এই কুলে রোগ ও কীট-পতঙ্গের আক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম।
খুব শিগগিরই সারাদেশে বারিকুল-৩ ছড়িয়ে পড়বে বলে ফল গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা আশাবাদী। কৃষকরাও বাণিজ্যিকভাবে এ কুল চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারবেন।
_গোকুল চন্দ্র বিশ্বাস, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা
ফল গবেষণা কেন্দ্র, রাজশাহী
রবিবার, ৭ মার্চ, ২০১০
বাজারে আসছে বারিকুল_৩
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন