রবিবার, ৭ মার্চ, ২০১০

কীভাবে চিনবেন ভেজাল সার?

ফসল উৎপাদনে সার একটি অন্যতম উপকরণ। বর্তমানে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় দেখা যাচ্ছে অতিরিক্ত মুনাফা লাভের জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা সার, কীটনাশকে ভেজাল দিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় গড়ে উঠেছে এসব ভেজাল কারখানা। সরকারের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা উৎপাদন করে বাজারজাত করছে সেসব ভেজাল সামগ্রী। যাতে ক্ষতিগ্রস- হচ্ছে আমাদের দেশের কৃষি ও কৃষক। কয়েকটা দিকে খেয়াল রাখলেই কৃষক নিজেরাই ভেজাল সার সনাক্ত করতে পারবেন। সার কেনার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে_ ১. সারের বস-ায় সিল এবং সেলাই ঠিক আছে কিনা, ২. সার নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা কিনা, ৩. সার তৈরির তারিখ ও ব্যবহারের শেষ তারিখ ঠিক আছে কিনা, ৪. বস-ার ভেতর সার দলা পাকিয়ে বা গলে গেছে কিনা, ৫. সারের আকার ঠিক আছে কিনা, ৬. বস-ায়/প্যাকেটের ওজন ঠিক আছে কিনা, ৭. কেনার পর দোকানের রশিদ নেয়া। উল্লেখিত বিষয়গুলো দেখে নেয়ার পরও যেভাবে ভেজাল সার পরীক্ষা করতে হবে_
ইউরিয়া : আসল ইউরিয়া সারের দানাগুলো সমান হয়। তাই কেনার সময় প্রথমেই দেখে নিতে হবে ইউরিয়া সারের দানাগুলো সমান আছে কিনা? ইউরিয়া সারে কাঁচের গুঁড়ো অথবা লবণ মেশানো হয়। আসল এক চামচ ইউরিয়া সার দু'চামচ পানির মধ্যে দিলে তাৎক্ষণিকভাবে গলে স্বচ্ছ দ্রবণ তৈরি করবে এবং এ দ্রবণে হাত দিলে ঠাণ্ডা অনুভূত হবে। চা চামচের অল্প পরিমাণ ইউরিয়া সার নিয়ে তাপ দিলে এক মিনিটের মধ্যে এ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ হয়ে গলে যাবে। যদি ঝাঁঝালো গন্ধসহ গলে না যায় তবে বুঝতে হবে সারটি ভেজাল।
টিএসপি : আসল টিএসপি সার পানিতে মেশালে সাথে সাথে গলে যাবে না। কিন্তু ভেজাল টিএসপি সার পানির সাথে মেশালে অল্প সময়ের মধ্যেই গলে যাবে। আসল টিএসপি এক চামচ আধা গ্লাস পানিতে মেশালে ৪/৫ ঘণ্টা পর ডাবের পানির মত পরিষ্কার দ্রবণ হবে। ভেজাল থাকলে অল্প সময়েই ঘোলা দ্রবণ তৈরি হবে।
এসএসপি : এক চা চামচ এসএসপি সার আধা গ্লাস পানিতে মেশালে নমুনাটি সম্পূর্ণ দ্রবীভূত হয়ে যদি ঘোলাটে দ্রবণ তৈরি করে তবে নমুনাটিকে প্রকৃত এসএসপি সার হিসেবে বিবেচনা করা যাবে। আংশিক দ্রবীভূত হয়ে যদি ঘোলাটে দ্রবণ তৈরি করে এবং তলানি জমা পড়ে তবে তাকে ভেজাল ভাবতে হবে। আসল এসএসপি সার আঙুলের চাপে সহজে ভেঙ্গে যাবে এবং সহজে না ভাঙ্গলে ভেজাল মিশ্রণ থাকতে পারে বলে ধারণা করা যেতে পারে।
ডিএপি সার : এক দু'চামচ ডিএপি সার একটি কাগজে খোলা অবস্থায় রেখে দিলে যদি ভিজে না ওঠে তবে সার ভেজাল। আসল ডিএপি সার হাতের মুঠোয় নিয়ে মুঠো বন্ধ করলে মুঠো ঘেমে যাবে। না ঘামলে ভেজাল মনে করতে হবে। অল্প পরিমাণ ডিএপি সার গরম করলে এক মিনিটের মধ্যে এ্যামোনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধ হয়ে তা গলে যাবে। তা না হলে নমুনাটি ভেজাল।
এমওপি সার/পটাশ সার : আধা গ্লাস পানিতে এক চামচ পটাশ বা এমওপি সার মেশালে গলে পানির সাথে মিশে যাবে। তলানি থাকলে মনে করতে হবে সারে ভেজাল আছে। ভেজাল এমওপি সারের লাল রঙ হাতে লেগে যাবে।
এনপিকেএস বা মিশ্র সার : ভেজাল মিশ্র সার আঙুল দিয়ে চাপ দিলে সহজেই গুঁড়ো হয়ে যাবে। ভেজাল মিশ্র সারের দানার ভেতর ও বাহিরের প্রলেপের রঙ আলাদা হয়।
বোরন : আধা গ্লাস পরিস্কার ঠাণ্ডা পানিতে এক চামচ বরিক এসিড দ্রবীভূত করলে প্রকৃত বরিক এসিডের নমুনা সম্পূর্ণ গলে যাবে। গ্লাসে তলানি জমবে না। আসল বোরন সারে তাপ দিলে খইয়ের মত ফুটবে আর যদি না ফুটে বুঝতে হবে সারে ভেজাল আছে।
অসাধু ব্যবসায়ীরা কৃষকদের প্রতারিত করছেন ভেজাল সার বিক্রি করে। এতে দেশের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। কৃষকদের যদি উল্লেখিত পদ্ধতিগুলো জানা থাকে তাহলে তারা আসল নকল বুঝে সার কিনতে পারবেন।
_মো. রফিকুল ইসলাম খান, অতিরিক্ত কৃষি অফিসার, নরসিংদী

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন